
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছেন তারা ভুল করছেন। দ্রুতই এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সকালে ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কার্য-নির্বাহী কমিটির সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরতেই ভাস্কর্য তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের যারা হাত দিয়েছে তাদের শাস্তি হবে। চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীরাই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ভাস্কর্য কোনো পূজার জিনিস না। ভাস্কর্য হলো হৃদয়ে ধারণ করার জিনিস যে নেতারা আমাদের জন্য কাজ করেছেন। সেটা যেন জন্ম জন্মান্তরে আমাদের প্রজন্মের পরের প্রজন্ম মনে রাখতে পারে সেই জন্যই ভাস্কর্য।
মুজিববর্ষে ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তার বিরোধিতা শুরু করেন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠনের জোট হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক ভাস্কর্য তৈরি করা হলে তা ‘বুড়িগঙ্গায় ফেলার’ হুমকি দেন। এরপর চট্টগ্রামে এক ধর্মীয় সভায় হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরী যে কারও ভাস্কর্য তৈরি করা হলে ‘টেনে হিঁচড়ে’ ভেঙে ফেলার হুমকি দেন।
এ নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যেই গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দুই ছাত্র এবং দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
এর মধ্যেই ১৯ ডিসেম্বর ভোরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়ন পরিষদের কয়া গ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের (বাঘা যতীন) ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভাস্কর্যগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলো তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি। শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নয়, কুষ্টিয়ায় আরো একটি ব্রিটিশ আমলের একজন বিখ্যাত মানুষ বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের নামেও মামলা হয়েছে।
‘আমি মনে করি ভাস্কর্য করার কারণ হচ্ছে জন্ম-জন্মান্তরে নতুন প্রজন্ম যেন জানতে পারে, চিনতে পারে। বাঘা যতীন কে ছিলেন কিংবা সারাবিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে ছিলেন। নতুন প্রজন্ম তাকে যেন হৃদয়ে ধারণ করতে পারে। সে জন্যই আমরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করি বা স্থাপন করি।’-যোগ করেন মন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খান আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে যারা ছিনিমিনি করছেন, তারা ভুল করছেন। আমার মনে হয় ভাস্কর্য নিয়ে এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান খুব শীগ্রই হবে। আর এগুলো রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের জনগণের, সরকারের অর্থাৎ আমাদের সবার। সেই কাজটির জন্য সবাইকে আহবান করবো। ভাস্কর্য হলো ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অংশ। শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নয় আরও অনেক ভাস্কর্য আমাদের রয়েছে। সারা পৃথিবীতে মুসলিম চিন্তাবিদদের ভাস্কর্য এখনো অনেক জায়গায় স্থান পাচ্ছে। আল বেরুনি, ইবনে সিনাসহ অনেক মুসলিম তারকার ভাস্কর্য রয়েছে।
ভাস্কর্য রক্ষার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি সবাইকে আহ্বান করবো আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না। যে এই কাজটি করছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দিন। এদেশের জনগণ অনেক উদার, অনেক সংস্কৃতিমনা। সুতরাং এদেশের জনগণ কোনও দিন কোনও ভাস্কর্য ভাঙে না। এগুলো চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীদের একটি অপপ্রয়াস।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক, উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।