
শ্রমিক পদে চাকরি দেয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম করে গোপনে বাইরে ভুট্টা বিক্রি ও ভুয়া বিল ভাউচার করার অভিযোগে গ্রামের কাগজে প্রকাশিত সিরিজ সংবাদের পর বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট যশোর কেন্দ্রের উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলামকে ইনচার্জ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সাথে গতকাল এই কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন ডক্টর আলমগীর হোসেন মিয়া।
এছাড়া রবিউল ইসলামের অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর আব্দুল হাকিমসহ ৩ কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
গম ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট দিনাজপুর ও যশোর আঞ্চলিক কেন্দ্রের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪, ২৫ ও ২৬ অক্টোবর দৈনিক গ্রামের কাগজে যশোর কেন্দ্রের ইনচার্জ উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে যে সিরিজ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা দৃষ্টি গোচর হয় উর্ধŸতনদের। এছাড়া যশোর কেন্দ্র থেকেও কয়েকটি সূত্র থেকে অভিযোগ যায় মহাপরিচালকের দপ্তরে। অভিযোগগুলোর ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে মহা পরিচালক ডক্টর গোলাম ফারুক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর আব্দুর হাকিম, উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানসহ ৩ জন।
আঞ্চলিক কেন্দ্রের সূত্র জানিয়েছে, গ্রামের কাগজে সিরিজ সংবাদের পর প্রতিবাদ বিজ্ঞাপন দিয়েও রেহাই পাননি। ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলামকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আর ১৫ নভেম্বর যোগদান করেছেন মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর আলমগীর হোসেন মিয়া। এদিকে রবিউল ইসলাম তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পক্ষে করাতে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয়া থেকে রেহাই পেতে উর্ধবতনদের ম্যানেজ করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এদিকে একটি পত্রিকায় প্রতিবাদ বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে ভাল সাজার চেষ্টা করছেন বলে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী শ্রমিকরা তার সাসúেন্ড দাবি করেছেন।
এর আগে ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েও ৭ শ্রমিককে নিয়োগ না দেয়া এবং নিজের বাসার কাজের মহিলা ও শ্যালককে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ ওঠে গম ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট যশোর কেন্দ্রের ইনচার্জ উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। সরকারি টাকা নিলেও ওই শ্যালক ও কাজের মাহিলা বেশিরভাগ সময় ওই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বাসার কাজ করে থাকেন বলেও অভিযোগ আসে। এসব অনিয়মের ব্যাপারে কথা বলায় ভুক্তভোগীদের নানামুখি হুমকি দেয়া এবং মজুরির বেলায় ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর থেকে তার বিরুদ্ধে সিরিজ সংবাদ প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়। গ্রামের কাগজের ডিজিটাল প্লাটফর্মে তথ্যবহুল একটি ভিডিও স্টোরিও প্রচারিত হয় এই রবিউল ইসলামকে ঘিরে।
কয়েক শ্রমিক নেতা ও ভুক্তভোগী শ্রমিক জব্বার, আব্দুল খালেক, আল আমিন, ইসলাম ও শারমিনসহ অনেকের অভিযোগে প্রকাশিত হয়, টাকা নিয়ে একটি পরিচয় পত্র ধরিয়ে দিয়ে মাসের পর মাস প্রতারণা করেছেন বৈজ্ঞানিক রবিউল ইসলাম। ১৫ হাজার টাকার বিল ভাউচারে সই করে নিলেও এক শ্রমিককে মাত্র ১৩ হাজার কেন্দ্রের উৎপাদিত গম ও ভুট্টা সরকারি বেধে দেয়া দামে শ্রমিক ও স্টাফদের মধ্যে বিতরণ করার কথা থাকলেও একটি অংশ তিনি গোপনে বেশি দামে বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন। কেজি প্রতি ৩০ টাকা করে বিক্রি করলেও ১৫ টাকা করে কাগজে কলমে দাম দেখিয়েছেন এমন অভিযোগ প্রকাশিত হয় ক্রেতাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে।
এছাড়া উৎপাদন ও গবেষণার কাজে ক্রয়কৃত সার, বাঁশ, বস্তা, তেল ও পাইপ কেনায় ভুয়া বিল ভাউচার জমা দেয়া হয়েছে বলে পাওয়া অভিযোগ প্রকাশিত হয়। নানা অনিয়মে অভিযুক্ত গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট যশোর আঞ্চলিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ও উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের ১৬ বছর কোন বদলি নেই। সব সরকারের আমলেই তিনি কিভাবে রয়ে গেলেন খোঁজ খবর নিয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়।
রবিউল ইসলামের বড় শ্যালক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের একটি দায়িত্বশীল পদে কাজ করেন। মাদারিপুর বাড়ি হওয়ার সুবাদে কয়েকজন জনপ্রতিনিধির নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি প্রভাব খাটান। তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তিনি ফরিদপুরের এমপি নিক্সন চৌধুরী ও মাগুরার এমপি বীরেন সিকদারের নাম ভাঙিয়েও ভয় দেখান বলে অনেক শ্রমিক ও স্টাফ অভিযোগ করেন, যা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। গ্রামের কাগজের ওই সংবদে রীতিমত বেশামাল হয়ে পড়েছেন এই উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। পত্রিকার সাংবাদিকের কাছে গোপন তথ্য সব ফাঁস হয়ে গেল কিভাবে এ নিয়ে তিনি কয়েকজন স্টাফকে সন্দেহ করছেন বলেও তথ্য মিলেছে। এছাড়া উপরের অফিসারদের ম্যানেজ করতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলেও অভিযোগ এসেছে। পত্রিকার প্রতিবেদককে বিষোদগার করে কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে।
নব নিযুক্ত মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মিয়া গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, এখন থেকে স্বচ্ছতার সাথে এই কেন্দ্র পরিচালিত হবে। উৎপাদনমুখি কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে এ অঞ্চলের কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করা হবে। পিছিয়ে পড়া কৃষি অঞ্চলগুলোর দিকে বেশি বেশি নজর দিবেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।