প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২, ৯:২৪ পিএম |

যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধিনে এবারের এসএসসিতে ঝরে গেছে আড়াই হাজার পরীক্ষার্থী, যারা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেনি। এদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। করোনা মহামারি, দারিদ্র ও বাল্যবিয়েসহ নানা কারণে তাদের শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটেছে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের এবারের এসএসসির ফলাফল সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধিনে খুলনা বিভাগের দশটি জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে মোট এক লাখ ৭২ হাজার ৮৩ জন এসএসসির ফরম পূরণ করে। এদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫০১ জন। এ হিসেবে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেনি দুই হাজার ৫৮২ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে এক হাজার ৬৬৭ জন ছাত্রী ও ৯১৫ জন ছাত্র। বিপুল সংখ্যক এসব ছাত্র-ছাত্রী তাদের শিক্ষা জীবন হারিয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। তারা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আবেদন করেও শেষমেষ পরীক্ষা দিতে পারেনি। করোনা মহামারির প্রভাব, দারিদ্র ও বাল্য বিয়েসহ নানা কারণে তাদের শিক্ষা জীবনের শেষ হয়েছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
এবারের এসএসসিতে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৩ হাজার ৮৭৮ জন ছিল ছাত্রী। অথচ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের আবেদন ছিল ৮৫ হাজার ৫৪৫ জন ছাত্রীর। এ পরিসংখ্যানে ঝরে গেছে এক হাজার ৬৬৭ জন ছাত্রী। আর ছাত্রদের আবেদনের সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ৫৩৮ জন। এদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৫ হাজার ৬২৩ জন। এ তালিকায় এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝরে গেছে ৯১৫ জন ছাত্র। ঝরে যাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন। যারা জীবনের বাস্তবতায় অভিভাবকের চাপে পড়াশুনা ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে। করোনায় ঘরবন্দি জীবন যাপন ও দারিদ্রের কারণে অভিভাবকরা মেয়েদের বাল্যবিয়ের ব্যবস্থা করেছে বলে যশোরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক মন্তব্য করেছেন।
শিক্ষকরা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকায় মানুষ কাজে বেরুতে না পেরে বেকার হয়ে পড়ে। এ কারণে তাদের পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাড় ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। যার প্রভাব আজো তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে অভিভাবকরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাদের মেয়ে সন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন। আর অভাবের কারণে ছেলেদের পড়াশুনার ইতি ঘটিয়ে বিভিন্ন কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য ওইসব পরীক্ষার্থীর আর এসএসসি পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। অথচ এবছরই এসএসসিতে যশোরবোর্ড তাক লাগানো ফলাফল অর্জন করেছে। এবার পাসের হার ছিল দেশের সব বোর্ডের ভেতরে সর্বোচ্চ ৯৫ দশমিক ১৭ ভাগ। আর এ বোর্ড থেকে এবার খুলনা বিভাগের সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থী ৩০ হাজার ৮৯২ জন মেধাবী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এদিকে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে মোট ৯ জন পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মিহির কান্তি সরকার বলেন, করোনা বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীকে এলোমেলো করে দিয়েছে। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। সরকার নানা চেষ্টা করে শিক্ষাখাতকে আগের অবস্থায় আনতে সক্ষম হচ্ছে। তবে এরইমাঝে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবন হারিয়েছে। তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমেছে। গরীব ঘরের ছেলেরা অনেকেই পড়াশুনা ছেড়ে পিতার সাথে কাজে যোগ দিয়েছে, আবার বিপুল সংখ্যক মেয়ে শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এ জাতীয় কারণে এবারের এসএসসিতে আবেদন করেও অনেক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এসব নিয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, করোনার প্রভাব দেশের সকল সেক্টরে পড়েছে, যা আজো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। দারিদ্র এবং বাল্যবিয়েসহ নানা কারণে এবারের এসএসসিতে কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করতে পারেনি। তবে আগামীতে তারা ফিরে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।