
পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এস এম শাহজাদা বলেছেন, সংসদে আমি কয়েকবার তামাকের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমার মতে, জনপ্রতিনিধিদেরও ডোপ টেস্ট করা দরকার।
ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলে তার মনোনয়ন বাতিল করা যেতে পারে। কারণ, নেশাগ্রস্ত মানুষের সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা উচিত না।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ‘তামাকবিরোধী সমসাময়িক আন্দোলন ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এস এম শাহজাদা বলেন, এলাকায় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধান উপকরণ থাকে চা-সিগারেট। আমরা এটা ভাবি না যে, যারা এখন সিগারেট দিচ্ছে, তারা তো আমাদের মেরে ফেলারই ব্যবস্থা করছে। কারণ, ১০ টাকার সিগারেট দিয়ে শুরু, পরে তারা ৭০০ টাকার ফেনসিডিল নেবে।
তিনি বলেন, আইন করে তামাক সেবন বন্ধ করা যাবে না। তামাকের বিরুদ্ধে আমাদের শুধু রুমে বসে প্রচারণা চালালে হবে না। স্কুল পর্যায়ে যেতে হবে। আমি মনে করি, আজকের সমাজে অভিভাবকরা ফেল করছেন। হয় তারা তাদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, না হয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তারা উদাসীন। বাচ্চারা রাতে বাসায় ফিরতে কেন দেরি করছে, সে বিষয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শহর কিংবা গ্রামের দোকানগুলোর প্রধান ব্যবসা চা-সিগারেট। দোকানে বসে টিভিতে সিনেমা দেখা চলে, আর এদিকে সমান তালে চলে তামাক সেবন। এই কারণে দোকানে বিনোদনের ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।
পটুয়াখালী-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো থেকে আমরা যে রাজস্ব পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি তামাক সেবনে অসুস্থ হওয়ার পর অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামাক নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিলেও শস্যের মধ্যে ভূত রয়ে গেছে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন সমন্বয় এর সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের মূল লক্ষ্য হলো- কম বয়সী নাগরিকরা যেন নতুন করে তামাক ব্যবহার শুরু না করেন, তামাক ব্যবহার করেন না- এমন নাগরিকদের তামাকের প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেওয়া। আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, কিংবা কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারেই অমূলক।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ফজলে হাসান বাদশা, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক কলেজের অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন চুন্নু, নিরাপদ সড়ক চাই- এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বিভিন্ন গবেষণার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রতি বছর বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত বিভিন্ন রোগে ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে, পঙ্গুত্ব বরণ করে প্রায় চার লাখ মানুষ। গণপরিবহনে ও পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় প্রায় প্রায় কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ।
তারা বলেন, তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতার কারণে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ সরকারের বছরে প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়, যা তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয় (২২ হাজার কোটি টাকা) থেকে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বেশি।