
বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থানুযায়ী, আনুমানিক খ্রিষ্টীয় ৭ম শতকের গোড়ার দিকে বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একটি জনপদ। যদিও তৎসময়ে এ জনপদটি শুধু ঢাকা নামে পরিচিত ছিল না। সময়ে সময়ে এ অঞ্চলের নাম পরিবর্তন হয়েছে। তবে শেষমেষ বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঢাকা শহরের ঐতিহ্যবাহী জনপদ পুরান ঢাকা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।
বাংলার পুরোনো এই শহরটির যেমন ছিল গৌরবজ্জ্বল নানা ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংস্কৃতি, তেমনি ছিল স্থানে স্থানে গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি গড়ে তোলার সংস্কৃতি। বুড়িগঙ্গা নদীর মনোরম পরিবেশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গ্রন্থাগারগুলো অধিকাংশই শুরু হয়েছিল ব্যক্তিগত উদ্যোগে। কালের আবর্তনে আজ সেগুলো রূপান্তরিত হয়েছে গণগ্রন্থাগার বা পাবলিক লাইব্রেরিতে।
গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি না বলে গণমানুষের পড়ার জায়গা বললে হয়তো বিষয়টা আরেকটু স্পষ্ট হবে। অর্থাৎ এখানে যে কেউ আসতে পারেন পড়ার জন্য, পড়তে পারেন নিজের পছন্দানুযায়ী যেকোনো বই। সাহিত্য, বিজ্ঞান কিংবা ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদি হরেক রকম বইয়ে ঠাসা গ্রন্থাগার বা পাঠাগারগুলো। এখানে স্কুল-কলেজের মতো কোনো নির্ধরিত সিলেবাস থাকে না। নিয়মিত হাজিরা দেওয়ারও নেই কোনো বাধ্যবাধকতা। তবে ঐ যে মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতা থাকলে যা হয়, স্বেচ্ছাচারিতা মানুষকে নিয়ে যায় ভুল পথে, যার সংস্পর্শ আমাদের সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে আমরা তাকেই ত্যাগ করি।
পুরান ঢাকার লাইব্রেরিগুলো ঘুরে দেখলে কথাগুলোর মর্মবাণী আপনি স্বচক্ষেই দেখতে পারবেন। পুরোনো দালানকোঠা যেমন কেবল প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি পুরান ঢাকার লাইব্রেরিগুলোও শুধু প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবেই টিকে আছে। টিকে আছে বৈকি জোর করে ধরে রাখা হয়েছে, মৃত্যুর স্বাদ এখনো পায়নি, মুমূর্ষাবস্থায় অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগছে।
একটি পাঠাগার বা লাইব্রেরির অক্সিজেন হলো তার পাঠক সমাজ। একটি মানুষ যেমন অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমনি একটি লাইব্রেরিও পাঠক ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কেন্দ্র গ্রন্থাগার, নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি, রোকনপুর পাবলিক লইব্রেরিগুলো ঘুরে আসলে খুব সহজেই লাইব্রেরিগুলোর এ অক্সিজেন স্বল্পতা বুঝতে পারা যায়।
ঢাকা কেন্দ্র গ্রন্থাগার :
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে নেমে শ্যামবাজারের দিকে অগ্রসর হলে ২৪ মোহিনী দাস লেনে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে একটি মধ্যবয়সী ভবন। ভবনটির নিচ তলায় রয়েছে একটি চক্ষু হাসপাতাল এবং দ্বিতীয় তলায় গেলেই মিলবে ‘ঢাকা কেন্দ্র গ্রন্থাগার’। এর সুনসান নিরাবতাপূর্ণ পরিপাটি পাঠ কক্ষটি মন কাড়বে যেকেনো পাঠকেরই। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ভেতরে ঢুকতেই দেখা হলো ৭০ ছুঁই ছুঁই এক বয়স্ক ভদ্রলোকের সঙ্গে। প্রথমে ভদ্রলোককে পরিচালক ভেবে ভুল করে বসি। পরে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি তিনি এখানকার একজন পাঠক। মাঝে মধ্যেই আসেন পত্রিকা পড়তে। আমার দিকে একটি পত্রিকা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘পত্রিকা পড়লে দেশের হাল চাল জানা যায় আরকি।’ পাঠকক্ষ প্রায় খালি দেখে জানতে চাইলাম এখানে পাঠক কেমন আসে? ভদ্রলোক বললেন, ‘এখন কি আর মানুষের হাতে সময় আছে? সবাই যার যার কামে ব্যস্ত। আমি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, সময় কাটে না, এখানকার পরিবেশটা ভালো তাই পত্রিকা পড়তে আসি।’ বয়স্ক হলেও বেশ কথা প্রিয় মানুষ খন্দকার কালাম সাহেব। জানতে চাইলাম তার তারুণ্যের কথা। তখন কি আসতেন লাইব্রেরিতে? প্রথম কবে লাইব্রেরিতে পড়তে আসছিলেন তা স্পষ্ট বলতে না পারলেও যৌবনের সেই দিনগুলোকে বর্ণনা করতে লাগলেন কালাম সাহেব। অনেকটা আলোঝলমেলে সেই দিনগুলোকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘কল্পনার অতীত’। লাইব্রেরিতে ছেলে-মেয়েরা আসবে, উৎসবমুখর পরিবেশে তারা বই পড়বে। পড়তে পড়তে এক এক জন হারিয়ে যাবে লেখকের আওড়ানো কল্পনার রাজ্যে। হয়তো গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কাউকে মর্মাহত করবে, অজান্তেই চোখের কোণে জমা হবে বিন্দু বিন্দু জল। কারো কারো চোখে-মুখে ধরা দেবে হঠাৎই আলোর ঝিলিক। মনের মধ্যে বহুদিন জমা থাকা প্রশ্নের উত্তর আজ হলো তার জানা। লাইব্রেরি থেকে ফেরার পথে সমমনা বন্ধুদের মধ্যে চলবে পাঠ পর্যালোচনা বিতর্ক। এ সবই ছিল তখনকার দিনের লেখাপড়া জানা ছেলে-মেয়েদের বিনোদোনের উৎস। আর পাবলিক লাইব্রেরিগুলোই ছিল এ বিনোদন উৎসের মূল কেন্দ্র।
ঢাকা কেন্দ্রের একটা অংশে রয়েছ গ্রন্থাগার ও পরিপাটি পাঠ কক্ষ। অপর একটি অংশে রয়েছে অডিটোরিয়াম, সুদৃশ্য বাগান এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাষ্কর্য। রয়েছে সাহিত্য আড্ডা খানাও। মোট কথা একটা লাইব্রেরিতে পরিবেশ-প্রতিবেশ হিসেবে যা যা থাকা দরকার, তার সবই বিদ্যমান রয়েছে এ গ্রন্থাগারটিতে। অভাব শুধু পাঠকের।
অনেককেই লইব্রেরির বাগানে হাঁটতে, সাহিত্য আড্ডা খানায় বসে গল্প-গুজব করতে দেখা যায়, শুধু ফাঁকা পড়ে থাকে পাঠকক্ষ।
যাই হোক, ঢাকা কেন্দ্র গ্রন্থাগারের এ বিশাল কার্যক্রম পরিচালিত হয় মাওলা বখ্শ ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে। ট্রাস্টি হিসেবে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন চেয়ারম্যান আজিম বখ্শ। মাওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে ঢাকা কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়।
জানা যায়, পারিবারিক লাইব্রেরি থেকেই ঢাকা কেন্দ্রের জন্ম। এ লাইব্রেরিটিতে প্রায় ১০ হাজারের মতো বই রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিষয়ক বই রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। অর্থাৎ ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে যে কেউ নির্দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন ঢাকা কেন্দ্র গ্রন্থগারটিকে।
নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি:
বাংলাবাজার হয়ে ফরাশগঞ্জ সদরঘাট এলাকায় দেখা মিলবে লাল রঙের দৃষ্টিনন্দন ভবন। স্থানীয়দের কাছে এটি লালকুঠি নামে পরিচিত। এ লাল কুঠিতেই রয়েছে ঢাকার অন্যতম প্রাচীন লইব্রেরি নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি। জানা যায়, ১৮৭৪ সালে ভারতের গভর্নর জেনারেল জর্জ ব্যারিং নর্থব্রুকের ঢাকা আগমনকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় একটি টাউন হল। ফরাশগঞ্জের এ টাউন হলকে নর্থব্রুকের নামে নামকরণ করা হয়। এই নর্থব্রুক হলকেই পরবর্তীতে গ্রন্থাগারে রূপান্তর করা হয়।
একজন পাঠক ঢাকা কেন্দ্র গ্রন্থাগার দেখে উদ্বেলিত হলেও নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি দেখে তেমনটা হবেন না। মূল নর্থব্রুক হলটি বর্তমানে বন্ধ আছে। এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে মূল ভবনটির ঠিক বিপরীত পাশের একটি ভবনে লাইব্রেরিটাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিশাল একটি কক্ষের একপ্রান্তে দুটি আলমারিতে পড়ে আছে শ’দুয়েক বই। একটু উপরের দিকে নজর দিলেই দেখা যাবে বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে আছে আরো কিছু বই।
বর্তমানে গ্রন্থাগারটি কর্মহীন মানুষদের জন্য পরিণত হয়েছে একটি বিশ্রামাগারে। লালকুঠির প্রধান ফটক অতিক্রম করে হাতের ডান দিকের ভবনটির শেষ মাথার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে তিন তলায় মিলবে নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি। প্রথম দেখায় বোঝার জো নেই যে এটি কোনো লাইব্রেরি কিনা। বিশাল হল রুমের মাঝে দুটি টেবিলের চার পাশে রাখা আছে কয়েকটি চেয়ার। আর সেই টেবিলের ওপর শুয়ে আছেন চল্লিশোর্ধ্ব এক পুরুষ। কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েই লাইব্রেরির খোঁজ করতে গেলাম ওপর তলায়। কিন্তু না, ওপরে আর কোনো তলা নেই। ইচ্ছা না থাকলেও লোকটার ঘুম ভাঙাতে বাধ্য হলাম। তিনি হকচকিয়ে উঠে বললেন, কারা আপনারা? খোঁজ পেলেন কেমনে? দিনের পর দিন এখানে যেকোনো পাঠকের পা পড়ে না, তা তার কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গেল। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম তিনি এখানকার পিয়ন, নাম আলমগীর হোসেন। আলোমগীর হোসেন যে টেবিলের ওপর শুয়ে ছিলেন তার সামনের দিকের বাম পাশটায় কাচের দেওয়াল ঘেরা পরিচালক জাহিদ রহমানের কক্ষ। তিনি আজ আসেননি। ছুটিতে আছেন। অগত্যা আলমগীর হোসেনের সঙ্গেই কথা চালাতে হল। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি।
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন বই তেমন একটা যোগ হয়নি লাইব্রেরিটির গ্রন্থশালায়। পড়ার জন্য দৈনিক পত্রিকাও তেমন একটা রাখা হয় না। অথচ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এই নর্থব্রুক হলেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল ১৯২৬ সালে। লাইব্রেরির পুরনো ইতিহাস থেকে জানা যায়, একটা সময় ১৫ হাজারের মতো দুর্লভ সব বইয়ে সমৃদ্ধ ছিল লাইব্রেরিটি। ১৭টি কাঠের আলমারি ভরা ছিল বই, যার সবই এখন আটকা পড়ে আছে ঝুঁকিপূর্ণ মূল নর্থব্রুক হল ভবনটিতে। ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম লাইব্রেরি থেকে, ঠিক তখনই চোখে পড়ল লাইব্রেরির এক কোনে নিমগ্ন মনে বই পড়ছে এক যুবক। অনেকটা কৌতুহলী হয়েই এগিয়ে গেলাম তার দিকে। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি তিনি সদ্য মাস্টার্স শেষ করেছেন। তার কাছে প্রশ্ন ছিল আপনি তো এ যুগেরই সদ্য লেখাপড়া শেষ করা এক যুবক। আজকের দিনের কিশোর, তরুণ, যুবকদের লাইব্রেরি বিমুখতার পেছনের কারণ কি বলে মনে করেন আপনি? তিনি বেশ সহজ করেই বললেন ‘দেখুন, আমার জীবন শুরু হয়েছে নব্বইয়ের দশকে। আমরা আমাদের কৈশোর পার করেছি বই পড়ে। আমাদের সময়ে কৈশরের বিনোদনের অন্যতম উৎস ছিল বই পড়া। কৈশরে আমাদের বই পড়া শুরু হয়েছিল অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়ে। অবিভাবকরা ছেলেমেয়েদের কড়া পাহারায় রাখত, পাঠ্যপুস্তকের বাইরে যেন অন্য পড়া না পড়তে পারি। কারণ তাদের কাছে পাঠ্যবইয়ের বাইরে গল্প-উপন্যাসের বই পড়া আর নিজের পায়ে কুড়াল মারা সমান কথা। এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। কিশোর-কিশোরীরা এখন আর লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়ে না। এখন তারা লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইলে ফেসবুকিং করে। যেহেতু মোবাইলের অবাধ ব্যবহার বেড়েছে এবং আমাদের বর্তমান সময়ের অবিভাবকেরাও মোবাইল বা ফেসবুকিংয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাই তাদের উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা মোবাইলে নিমগ্ন থাকলে তা অবিভাবকদের চোখে পড়ে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘মোবাইল, টেলিভিশন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দিন দিন আমাদের কল্পনা শক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের একটি মেধাশূন্য জাতি হতে বেশি সময় লাগবে না।’
রোকুনপুর পাবলিক লাইব্রেরি:
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত রোকনপুর পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থাও একই। এটি রোকনপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাঁচতলায় অবস্থিত। কিন্তু এখন এটা দেখে মনে হবে না এখানে এক সময় জাঁকজমকপূর্ণ কোনো লাইব্রেরি ছিল!
কক্ষের ভেতরে কিছু পুরানো মালামাল পড়ে আছে। গ্রন্থাগার কক্ষের ভেতর প্রবেশ করে হাতের বামদিকে কিছুটা অগ্রসর হলে ভবনের উত্তর পার্শ্বে দেখা মেলে ছোট্ট একটা কক্ষের। সেখানেই এক পাশে জানালার কাছে একটি টেবিল নিয়ে বসেন লাইব্রেরির পরিচালক ঝর্ণা আক্তার। পাশাপাশি তিনি মহানগর মহিলা কলেজের সঙ্গীত শিক্ষিকা। সপ্তাহে তিন দিন সোম থেকে বুধবার ব্যস্ত থাকেন মহানগর মহিলা কলেজে সঙ্গীত শিক্ষা দানে। তার এই অনুপস্থিতির সময় লাইব্রেরীটি দেখাশোনা করেন লাইব্রেরিটির ক্লিনার মো. আব্দুল আলিম। সরাসরি সাক্ষাৎ না হওয়ায় ফোন কলের মাধ্যমে জানতে পারলাম লাইব্রেরিতে ১০৩ টার মতো বই আছে। তার টেবিলের সামনেই চারটি চেয়ার আর একটা টেবিল দিয়ে কোনো মতে তৈরি করা হয়েছে পাঠকদের বসার স্থান। বর্তমানে লাইব্রেরিটি প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এছাড়া বর্ণনা করার মতো সেখানে আর কিছুই চোখে পড়ল না।
লাইব্রেরি নিয়ে এতদিন মাথায় যে ইতিবাচক সব ভাবনা ছিল, ফেরার পথে তার কিঞ্চিত মাত্রও আর অবশিষ্ট রইল না। নিঃশব্দে যে যার মতো বই নিয়ে পড়ছে। দেরিতে আসার কারণে কেউ হয়তো জায়গা না পেয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে। এ সবাই আজ কল্পনার অতীত। কালের ধর্ম হলো, আজ যা যৌবন উদ্দীপ্ত কালক্রমে তাই একদিন হয়ে পড়ে পৌড়, শক্তিহীন, বৃদ্ধ। ভাবতে কষ্ট হলেও পুরান ঢাকার লাইব্রেরিগুলোর ক্ষেত্রে আজ এ উক্তিমালা বড়ই সত্য।
তাহলে কি লাইব্রেরিরগুলোর পুরোনো সেই যৌবন ফিরিয়ে আনবার কোনোই উপায় নেই? ঐ যে নর্থবুক হল লাইব্রেরির পিয়ন মো. আলমগীর হোসেনের কথা মনে আছে? তিনি যে হকচকিয়ে উঠে বলেছিলেন, ‘কারা আপনারা, খোঁজ পাইলেন ক্যামনে?’ এই প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে উত্তর। যান্ত্রিক নয়, সামাজিক ও মানবিক মানুষ গড়তে আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে এ প্রশ্নের উত্তর। মানুষ যে পুরান ঢাকার লাইব্রেরিগুলোর কথা তেমন একটা জানে না, আলমগীর হোসেনের প্রশ্নের মধ্যে সে বিষয়টিই স্পষ্ট। তাই নতুন প্রজন্মকে লাইব্রেরিমুখী করতে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক উৎসাহব্যঞ্জক প্রচারণার বিকল্প নেই।