এম. আইউব :

পাঠ্যপুস্তক পেতে দেরি হওয়ায় নতুন কারিকুলামের মূল্যায়নে পিছিয়ে যাচ্ছে যশোরের শিক্ষার্থীরা। পহেলা জানুয়ারি বই উৎসবের পর মাস পেরুলেও এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তক পায়নি যশোরের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মাত্র তিনটি করে বই পেয়েছে বলে শিক্ষকরা বলছেন। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দশাও প্রায় একই রকম। এ কারণে এক মাসেও নতুন কারিকুলামের মূল্যায়নের আওতায় আসতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। যদিও সদর উপজেলায় এই বই পাওয়ার হার কিছুটা বেশি বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে, সেটি উপজেলা শিক্ষা অফিসের দেনদরবারের কারণে সম্ভব হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। এদিকে, কী পরিমাণ বই এসেছে এবং কী পরিমাণ বাকি আছে সেই তথ্য দিচ্ছে না জেলা শিক্ষা অফিস। এই অফিসের বইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক রেজাউল ইসলামের কাছে তথ্য চাইলেই অসৌজন্য আচরণ করছেন। শনিবার রাতে পাঠ্যপুস্তকের সর্বশেষ তথ্য চাইলে তিনি অফিস চলাকালীন কথা বলতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযমকে ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
যশোরের আট উপজেলায় সর্বমোট ২ হাজার ২০৯ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৮৯ টি, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ৬৫, হাইস্কুল ৫৩০, মাদ্রাসা ৩১০ এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৫ টি। বর্তমানে জেলায় প্রাইমারি ও ইবতেদায়ী মিলে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বাকি হাইস্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। এই তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে ২ লাখ ৮০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জেলা শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে, এই সংখ্যা কিছু কমবেশি হতে পারে। শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানতে জেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক রেজাউল ইসলাম কোনো তথ্যতো দেননি; উপরন্তু অসৌজন্য আচরণ করেন। এ ধরনের আচরণ এর আগেও তিনি একাধিকবার করেছেন। তখন বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযমকে জানালে তিনি তাকে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে বলবেন বলে জানান। কিন্তু তার কোনো প্রতিফলনই প্রকাশ পাচ্ছে না রেজাউল ইসলামের আচরণে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এ বছর জেলার আট উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ ৪৮ হাজার ১১০ টির। পহেলা জানুয়ারি বই উৎসবের দিন পর্যন্ত চাহিদার ৬২ শতাংশ বই এসে পৌঁছে যশোরে। তারপর থেকে গত এক মাসে পুরো বই এসেছে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম শনিবার রাতে জানান।
যশোরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭৬ বইয়ের চাহিদা রয়েছে। পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ বই এসে পৌঁছে। ওইসময় বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম।
এ বছর দাখিলে মোট চাহিদা ৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৭৪ টি বইয়ে। এছাড়া, এবতেদায়ীতে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৩৮০, এসএসসি ভোকেশনালে ১ লাখ ২০ হাজার ১১৫ ও দাখিল ভোকেশনালে ৩ হাজার ৫৬০ টি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। বাকি ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৪৭ টি বইয়ের প্রয়োজন হাইস্কুলে।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, তারা এ পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণির মাত্র তিনটি বই পেয়েছেন। বেশ কয়েকটি বই বাকি রয়েছে সপ্তম ও নবম শ্রেণিতেও। জেলা শিক্ষা অফিসের তদারকির অভাবে এই অবস্থা বলে কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এনসিটিবিতে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির অনেক বই পৌঁছেছে। তারা উদাহরণ হিসেবে যশোর সদর উপজেলার কথা উল্লেখ করেন। বলেন, অন্যান্য উপজেলার তুলনায় সদর উপজেলায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই অনেক বেশি এসেছে। এর কারণ উপজেলা থেকে দেনদরবার করা। এই দেনদরবার যদি জেলা থেকে করা হতো তাহলে সব উপজেলায় অনেক বেশি বই আসতো বলে সূত্রের দাবি।
শনিবার রাত ৮.৫০ মিনিটে কেশবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণির মাত্র ১০ শতাংশ বই এসেছে। তবে, সপ্তম ও নবম শ্রেণির বই মোটামুটি পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার। এ পর্যন্ত তিনি পেয়েছেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার বই। যা জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ।
নতুন বছরের এক মাস পার হলেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে গুরুত্ব বইগুলো না আসায় চরমভাবে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন। তাদের বক্তব্য, যেকোনো উপায়ে ষষ্ঠ শ্রেণিসহ অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে হবে। তা না হলে পাঠদান থেকে পিছিয়ে পড়বে তারা।