এম. আইউব :

যশোর শিক্ষাবোর্ডে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। সোমবার এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখা থেকে। ব্যবস্থা গ্রহণের তালিকায় যশোর বোর্ডে একটি স্কুল রয়েছে। সেটি হচ্ছে, যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার গলদা খরিঞ্চি গার্লস হাইস্কুল। এই স্কুলটি নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিওভুক্ত। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র একজন। কিন্তু সেই একজন পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি।
মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো পত্রে একজনও পাস না করা স্কুলের বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে, পাসের হার শূন্য হওয়ার কারণ কী, কী ধরনের সহযোগিতা দিলে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে পারবে, গত পাঁচ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল, শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী ও পাসের হারের বিস্তারিত তথ্য। জরুরি ভিত্তিতে এসব তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাসের হারে বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি রয়েছে কিনা সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এই পত্রের অনুলিপি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে।
২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষাবোর্ডে ১টি, দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে ৫টি ও রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে ২টি স্কুল থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি।
মণিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার জানান, গলদা খরিঞ্চি গার্লস স্কুলটি নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিওভুক্ত। নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের আটজন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী এমপিওর সুবিধা পাচ্ছেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে দু’জন শিক্ষক রয়েছেন। যারা এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি।
২০২২ সালে যশোর বোর্ডের আওতায় ২ হাজার ৫৪৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৩ পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০১ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩১৪ জন। জিপিএ-৫ পায় ৩০ হাজার ৮৯২ জন পরীক্ষার্থী। পাসের ছিল ৯৫.০৩ শতাংশ। যা সারাদেশে সর্বোচ্চ ছিল। তাক লাগানো এই ফলাফলের মধ্যে গলদা খরিঞ্চি গার্লস স্কুল থেকে একজন পরীক্ষা দিলেও পাস করতে পারেনি। এ নিয়ে সমালোচনা হয়।
ফলাফল প্রকাশের দিন যশোর বোর্ডের তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানিয়েছিলেন, গলদা খরিঞ্চি গার্লস স্কুলে তিনজন ক্যাজুয়াল পরীক্ষার্থী ছিল। তাদের মধ্যে একজন পরীক্ষায় অংশ নেয়। সেই একজন শিক্ষার্থীকে পাস করাতে পারেননি ১০ জন শিক্ষক!
পাস করা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২০ হাজার ৩০১ জন ছেলে ও মেয়ে ১৭ হাজার ৪৬৭ জন, মানবিক বিভাগে ছেলে ৪৮ হাজার ৮৫ ও মেয়ে ৫৩ হাজার ৬২৭ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১২ হাজার ৪৭২ ছেলে ও ৯ হাজার ৩৬২ জন মেয়ে ছিল।
এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পায় ৩০ হাজার ৮৯২ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৬১৭ ও মেয়ে ১৭ হাজার ২৭৫ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১১ হাজার ৭৭৭ জন ছেলে ও ১১ হাজার ৯২৪ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ৮৬২ জন ছেলে ও ৩ হাজার ৭০৩ জন মেয়ে এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৯৭৮ জন ছেলে ও ১ হাজার ৬৪৮ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পায়। এছাড়া, জিপিএ-৪ থেকে ৫ এর নীচে পায় ৫৪ হাজার ৭৫০, জিপিএ-৩.৫ থেকে ৪ এর নীচে পায় ৩২ হাজার ৫৯০, জিপিএ-৩ থেকে ৩.৫ এর নীচে পায় ২৫ হাজার ১৩০, জিপিএ-২ থেকে ৩ এর নীচে পায় ১৭ হাজার ১৫৭ এবং জিপিএ-১ থেকে ২ এর নীচে পায় ৭৯৫ জন।