প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪২ এএম |

আজ ২ ফেব্রুয়ারি। ২০১৫ সালের আজকের দিবাগত ভয়াল রাত। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত দলের ছোড়া পেট্রোল বোমায় নিহত হন যশোরের ঠিকাদার নুরুজ্জামান পপলু (৫০) ও তার দশম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে মাইশা তাসনীম নহিয়ান (১৫)। আজ তাদের ৯ম হত্যাবার্ষিকী হয়েছে। স্বামী ও মেয়ের সাথে ওই সময় দগ্ধ হওয়া স্ত্রী মেহেরুন নেছা বেগম মিতা সেই বিভিষিকাময় স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। তিনি ওই ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান।
চলছিলো বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশব্যাপী অবরোধের নামে বিভিন্ন গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা হামলাসহ বিভিন্ন ধরণের নাশকতা। ওইদিন রাতে আইকন পরিবহনের একটি নৈশ কোচে কক্সবাজার থেকে ঢাকা আসার পথে পপলু-মাইশারা ওই নাশকতার শিকার হন। পৈশাচিক ওই ঘটনায় আরও নিহত হন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাদা গ্রামের মোহাম্মদ ইউসুফ (৪০), আবু তাহের (৩৮) ও গোবিন্দপুর গ্রামের মোহাম্মদ বাদশা, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আসমা বেগম (৪০) ও তার ছেলে শান্ত (১০)। দগ্ধ হন কমপক্ষে ২০ যাত্রী। স্বজন হারানোর ক্ষত আজো শুকায়নি তাদের পরিবারে।
২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি যশোর ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের রোকনুজ্জামানের ছেলে ঠিকাদার নুরুজ্জামান পপলু তার স্ত্রী মেহেরুননেছা মিতা ও মেয়ে মাইশা তাসনীম নাহিয়ানকে নিয়ে ঠিকাদারী কাজের পাশপাশি ঘুরতে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যান। তারা দুদিন সেখানে অবস্থান নিয়ে সমুদ্র সৈকতও উপভোগ করেন। দুদিন বেড়ানো শেষে ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে তারা আইকন পরিবহনের একটি নৈশ কোচে কক্সবাজার থেকে ঢাকা আসছিলেন। ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৪০৮০ যাত্রীবাহী বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের জগমোহনপুরে রাত সাড়ে ৩ টায় পৌঁছায়। আর ওই স্থানে আসলে বাসটি লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা পর পর কয়েকটি শক্তিশালী পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। টুহূর্তের মধ্যে বাসটিতে আগুন ধরে ঝলসে যায়। আর নিহত হন পপলু ও তার মেয়ে মাইশাসহ সাত জন। চোখের সামনে নিজের নয়নের পুতুলি মেয়ে মাইশা ও স্বামী নুরুজ্জামান পপলুকে মরতে দেখেন স্ত্রী মহেরুন নেছা বেগম মিতা। তিনি আজও কেঁদে চলেছেন শোকে। সেই বিভিষিকাময় রাত মনে পড়লেই আঁতকে ওঠেন তিনি। ওই ঘটনার সময় বাসের কয়েক যাত্রী জানালা দিয়ে লাফিয়ে প্রাণে বাঁচলেও তারা গুরুতর দগ্ধ হন মিতাসহ আরো ১৯ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার কাঁচামাল ব্যবসায়ী হানিফ (৩৫), তার ভাতিজা রাশিদুল ইসলাম (১৭), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের পপকর্ন বিক্রেতা শফিকুল (১৮), ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কৃষক আরিফ, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের জিলকদ আহমেদ (১৮) ও ফারুক (২৩)। বোমায় নিস্তেজ হয়ে যাওয়া মাইশা যশোর পুলিশ লাইন স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। সেই বায়না ধরেছিল বাবার সাথে কক্সবাজার ঘুরতে যাবে। আর মুহূর্তের সিদ্ধান্তে তারা ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। আর তারা লাশ হয়ে ফেরেন।
পপলুর ছোট ভাই কামরুজ্জামান ডাব্লু ঘটনায় জড়িতদের কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আজ।