শনিবার ২৫ মার্চ ২০২৩ ১১ চৈত্র ১৪২৯
                
                
☗ হোম ➤ ফিচার
ভাষার রহস্য, মানুষ প্রথমে যা বলেছিল
কাগজ ডেস্ক:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ২:৩১ পিএম |
মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে- ভাষা। ভাষার মাধ্যমে ভাবের বিনিময়, কথার আদান প্রদান করা হয়। বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হিসেবে দেখা হয় ভাষাকে। সবকিছুকে বদলে দিয়েছে এই ভাষা। বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে ছয় হাজারের মতো ভাষা আছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রথম কবে কথা বলতে শিখেছিল? এখন যে হাজার হাজার ভাষায় মানুষ কথা বলে সেগুলো কী ঐ একজন পূর্বপুরুষের কাছ থেকেই এসেছিল? ভাষার উৎস কী? এসব সম্পর্কে জানতে দারুণ উৎসাহী মানুষ। আজকে আমরা এসব বিষয় জানার চেষ্টা করবো।
ভাষার বয়স: ভাষার উৎপত্তি নিয়ে মত বিরোধের শেষ নেই। পৃথিবীতে সবচেয়ে পুরনো ভাষার নাম জানতে চাইলে আমরা অনেকেই ভাবি ব্যাবিলনীয়, সংস্কৃত অথবা মিশরীয় ভাষার কথা।
কিন্তু অধ্যাপক টলারম্যান বলছেন, ‘এসব ভাষা তার ধারে-কাছেও নেই। সাধারণত আমরা বলি যে ভাষা ছয় হাজার বছর পুরনো। কিন্তু ভাষার প্রকৃত উৎস যদি খুঁজে দেখতে হয় তাহলে অন্তত ৫০ হাজার বছর পেছনে ফিরে যেতে হবে। আমাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে ভাষার উৎপত্তি পাঁচ লাখ বছর আগেও হতে পারে।’
অনেক ভাষাবিজ্ঞানী মনে করেন, ভাষার ইতিহাস আসলে এর চেয়েও পুরনো।
অধ্যাপক ফোলির মতে, পৃথিবীতে যত ভাষা আছে সেগুলোর চরিত্র আলাদা আলাদা হলেও এটাও সম্ভব যে বর্তমানে সব ভাষাই একজন পূর্বপুরুষের কাছ থেকে এসেছে।
জীববিজ্ঞানের বিবর্তনের ইতিহাসের সূত্র ধরে বিজ্ঞানীরা ভাষা কবে শুরু হয়েছিল তার কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। জিন-বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুসারে আমরা কমবেশি সবাই এসেছি আফ্রিকার একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে। ভাষার এই তালিকার বাইরেও হয়তো অন্যান্য ভাষাও থাকতে পারে, কিন্তু আজকের দিনে যেসব ভাষায় কথা বলতে শোনা যায় সেগুলোর সবই সম্ভবত একই ভাষা থেকেই বিবর্তিত হয়েছে।
জীবাশ্ম থেকে প্রমাণ: আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম থেকে কিছু ধারণা পাওয়া যায় যে আমরা ঠিক কবে থেকে কথা বলতে শুরু করেছিলাম।
অধ্যাপক ফোলি বলছেন, ‘কথা হচ্ছে একধরনের শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া। এটা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই আমরা শব্দ তৈরি করে থাকি। এটা করার জন্যে শরীরের পেশীর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয়। আমাদের বক্ষ এবং উদরের মাঝখানে যে ঝিল্লির পর্দা সেটি অন্যদের থেকে আলাদা। আমাদের কাছাকাছি যে প্রাণী, অর্থাৎ বানর বা এইপ, যারা কথা বলতে পারে না, তাদের ঝিল্লির তুলনায় আমাদের ঝিল্লিতে নার্ভের সংখ্যা বহুগুণে বেশি।’
এসব নার্ভের অর্থ হচ্ছে, আমাদের স্পাইনাল কর্ড এইপের স্পাইনাল কর্ডের চেয়ে মোটা এবং আমাদের ভার্টিব্রাল কলামও একটু বেশি প্রশস্ত। নিয়েন্ডারথাল নামে আমাদের যে আত্মীয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যারা ছয় লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে বেঁচে ছিল, তাদের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে তাদের স্পাইনাল কলামও প্রশস্ত ছিল।কিন্তু আপনি যদি দশ লাখ বছর আগের হোমো ইরেক্টাসের দিকে তাকান, যারা মানবজাতির প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ, তাদের দেহে এরকম ছিল না। এ থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায় যে মানুষ কবে থেকে কথা বলতে শুরু করেছিল।
জিন-বিজ্ঞানের ভূমিকা: বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্মের রেকর্ডের বাইরেও জিন-বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে ভাষার বয়স জানা সম্ভব হচ্ছে।
অধ্যাপক ফোলি বলেন, ‘এফওএক্সপিটু নামের একটি জিন আছে। স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর শরীরেই আছে এই জিন। কিন্তু মানবদেহে যেটি আছে সেটি এর রূপান্তরিত জিন। জিনের এই রূপান্তর গবেষণা করেও বোঝা যায় কেন মানুষ কথা বলতে পারে, কিন্তু শিম্পাঞ্জি পারে না। কথা বলা ও ভাষার বিকাশে এই জিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারণ যেসব মানুষের শরীরে এই জিনটি রূপান্তরিত অবস্থায় থাকে না, তাদের কথা বলতে অসুবিধা হয়।’
মজার বিষয় হচ্ছে, এখনকার মানুষদের মতো নিয়ান্ডারথালদের এই এফওএক্সপিটু ধরনেরই জিন ছিল। এর ফলে ধারণা করা যায় যে তাদের মধ্যেও কোন না কোন ধরনের কথা বা ভাষা ছিল। তবে তাদের সেই ভাষা সম্পূর্ণ এবং উন্নত ছিল কিনা সেটা ভিন্ন বিষয়।
অধ্যাপক টলারম্যান বলছেন, কথার সঙ্গে ভাষার পার্থক্য আছে। তবে কী কারণে কথা একসময় ভাষা হয়ে উঠে সেটা জিনগত তথ্যপ্রমাণ থেকে নির্ণয় করা কঠিন।
মস্তিষ্কের আকার: আদি-মানবের মাথার খুলির আকৃতি থেকে কি ভাষার উৎপত্তির সময় খুঁজে বের করা সম্ভব? অবশ্যই না।
সবচেয়ে সহজ কারণ হলো আমরা ঠিক জানি না যে একটি ভাষা তৈরির জন্যে কতো বড় মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয়।
অধ্যাপক টলারম্যান বলেন, ‘নিয়ান্ডারথালদের মস্তিষ্ক আমাদের চেয়েও বড় ছিল। কারণ প্রাণী হিসেবেও তারা বড় ছিল’।
প্রথম শব্দ কী ছিল: মানব ইতিহাসের শুরুর দিকে যে শব্দগুলো চালু ছিল বলে ধারণা করা হয় সেগুলোর অর্থ হতে পারে ঈগল, চিতা অথবা দেখ।
অনেকে মনে করেন, আমাদের পরিবেশের আশেপাশে সহজ ও সুনির্দিষ্ট কোনো জিনিসই হয়তো মানুষের মুখ থেকে প্রথম এসেছিল।
আরেকটি তত্ত্ব হচ্ছে প্রথম দিককার শব্দগুলোর মধ্যে এমন শব্দগুলোই ছিল যেগুলো আমরা এখন সবসময় ব্যবহার করি। যেমন- ইশ, হেই, ওয়াও, থ্যাংকস, গুডবাই- এ ধরনের শব্দ। এসব শব্দ প্রায় সব ভাষাতেই আছে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে মিল হচ্ছে যে এসবের কোন সিনটেক্স বা ব্যাকরণ নেই।
খাওয়ার সময় ভাষা তৈরি হয়েছিল: মানবজাতির শুরুতে কথা বলা শুরু হয়েছিল একে অপরকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি খাদ্য গ্রহণ করতে গিয়েও। আমাদের পূর্বপুরুষরা বড় বড় শিকারি প্রাণীদের হাতে নিহত পশুর মৃতদেহ থেকে মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করতো।
বিজ্ঞানীদের ধারণা খাদ্য গ্রহণের তাড়না এবং বেঁচে থাকার চেষ্টার কারণে মানুষের মধ্যে একে অপরকে জানানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
পরচর্চা বা গসিপের ভূমিকা: বিজ্ঞানীরা বলছেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইতিহাসবিদ ড. লরা রাইট বলেন, একসঙ্গে মিলে কাজ করার ক্ষমতা থেকেও ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা তৈরি হয়েছে। আড্ডা মারার মতো করে কথা বলার গুরুত্বও কম ছিল না। টুকটাক কথা বলা, পরচর্চা বা গসিপ এগুলো প্রতিদিনেরই অংশ। সূত্র: বিবিসি


গ্রামের কাগজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন


সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী পুলিশ লাইনসে বয়ে গিয়েছিল রক্তবন্যা
লালপুরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের পরিচিতি সভা
তিস্তা বাঁধ: পরিবেশ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি
ঝিনাইদহে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইলেকট্রিশিয়ানের মৃত্যু
ঝিনাইদহে গণহত্যা দিবস পালিত
সাতক্ষীরার ৩ গ্রামের মানুষ মোবাইল নেটওয়ার্ক পান না
নড়াইলে গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাঁশ কাবাব, রাজস্থানি তান্দুরি ছিল মূল আকর্ষণ
কেন ঊনসত্তরেও ছিলেন সিঙ্গেল, জানালেন সেই সাবেক অধ্যাপক
৫১ বছর বয়সে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী
ব্যসায়ীকে পথে বসাতে মরিয়া সেই বাশার, থানায় অভিযোগ
রামনগর ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত
টাকা শূন্য যশোর ডাকঘর!
খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা
আমাদের পথচলা | কাগজ পরিবার | প্রতিনিধিদের তথ্য | অন-লাইন প্রতিনিধিদের তথ্য | স্মৃতির এ্যালবাম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মবিনুল ইসলাম মবিন | সহযোগী সম্পাদক : আঞ্জুমানারা
পোস্ট অফিসপাড়া, যশোর, বাংলাদেশ।
ফোনঃ ০২৪৭৭৭৬২১৮২, ০২৪৭৭৭৬২১৮০, ০২৪৭৭৭৬২১৮১, ০২৪৭৭৭৬২১৮৩ বিজ্ঞাপন : ০২৪৭৭৭৬২১৮৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected]
কপিরাইট © গ্রামের কাগজ সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft