প্রকাশ: শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:২৫ এএম আপডেট: ০৩.০২.২০২৩ ১২:২৬ এএম |

টানা আট বছর পর মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলেও এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ক্ষোভ-অসন্তোষ।
তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খোদ উপজেলা সভাপতি এ কমিটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় এমপি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, কমিটির ব্যপারে তার মতামত নেয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাকে সভায় ডাকা বা জানানো হয়নি।
পহেলা ফেব্রুয়ারি রাতে যশোর সার্কিট হাউসে সভা করে আওয়ামীলীগের তিনটি কমিটি যশোর শহর, মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগের অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারন সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি।
ওই রাতে এবং পরদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কমিটি নিয়ে বাদপড়ারা নানা প্রতিক্রিয়া জানান। তবে সবচেয়ে বেশী আলোচনায় এসেছে মণিরামপুর উপজেলা কমিটির অনুমোদন।
২০১৪ সালের ২৮ নভেম্বর মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সে কাউন্সিলে মাত্র চারজন কমিটির দায়িত্ব পান। তারা হলেন, সভাপতি মণিরামপুরের পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মামুদুল হাসান, সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সদস্য আমজাদ হোসেন লাভলু ও আবুল কালাম আজাদ। পরবর্তীতে গোলাম মোস্তফার মৃত্যু হলে সাধারণ সম্পাদক পদে তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেনকে মনোনীত করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নাজমা খানমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় আমজাদ হোসেন লাভলু দল থেকে বহিস্কৃত হন। অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে বাকী তিনজন এতোদিন সংগঠন চালিয়ে আসছিলেন। তার মাঝে ২০২২ সালের ৪ মার্চ সভাপতি অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান ও সাধারন সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত একটি কম্পিউটার কম্পোজ করা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলা কমিটির কাছে অনুমোদনের জন্য দেয়া হয়। সেই কমিটির ২৫ স্থানে কাটাছেঁড়া করে ২৫ জনের নাম ও ছয়টি নাম নতুন করে হাতে লিখে সংযোজন করে পহেলা ফেব্রুয়ারি রাতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমি কাটাছেঁড়া হওয়া এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করছি। আমাকে উপস্থিত না রেখে এবং স্থানীয় এমপিকে সম্পৃক্ত না করে দেয়া কমিটির বিষয়ে আমি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে নালিশ জানাবো।’
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যশোর-৫ মণিরামপুর আসনের সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, সংগঠনের যে কোনো স্থানীয় কমিটি গঠনের সময় স্থানীয় এমপিকে সম্পৃক্ত করে এবং তার সাথে সমন্বয় করে কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু মণিরামপুরের কমিটি ঘোষণার সময় কেন্দ্রের সে নির্দেশনা মানা হয়নি। আমি যশোরে অবস্থান করলেও আমাকে ডাকা হয়নি। এমনকি ভদ্রতা দেখাতে ন্যুনতম আমাকে জানানোও হয়নি, যা শিষ্টাচার বহির্ভূত। তারপরও সভাপতি-সম্পাদকের জমা দেয়া কমিটির ২৫টি নাম কেটে যাদেরকে ঢোকানো হয়েছে, তাদের অনেকেই বিতর্কিত। এদের মধ্যে এমন একজন রয়েছেন, যে অতি সম্প্রতি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার প্রশংসা করে বক্তৃতা করে সমালোচিত ও নিন্দিত হয়েছেন। ঘোষিত কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী নাশকতা মামলা ও হত্যা মামলার আসামিও রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিগত উপজেলা নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী নাজমা খানমের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জামানত হারানো এবং দল থেকে বহিস্কৃত নেতা আমজাদ হোসেন লাভলুকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমি এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করছি। আমি এ কমিটি নিয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ জানাবো।’ এসব বিষয় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়েও। বিশেষ করে যারা দলের জন্য নিবেদিত এবং যোগ্য বলে বিবেচিত তাদের নাম বাদ পড়ায় ক্ষোভ দানা বেধে উঠছে।