প্রকাশ: শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৩১ এএম আপডেট: ০৩.০২.২০২৩ ১২:৩২ এএম |

মেট্রোরেলের পর পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দেশের প্রথম পাতাল রেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি চালু হলে প্রতি ১০০ সেকেন্ড পরপর চলাচল করবে। ঢাকার জনসংখ্যার হিসাব এবং বাস্তবতার নিরিখে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পাতাল রেল নির্মাণ কাজের বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বেলা ১১টার কিছু পর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, পাতাল রেল বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিু হলো।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমরা পাতাল রেলের কাজের উদ্বোধন করলাম। এর আগে আপনাদের উড়াল মেট্রোরেল উপহার দিয়েছি। এটা ওপর দিয়ে যাচ্ছে, এবার মাটির নিচ দিয়ে পাতাল রেল।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের উন্নতি হয়। আওয়ামী লীগ সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের এক মাসের মাথায় পাতাল মেট্রো রেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করলেন তিনি।
৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই পাতাল মেট্রেরেল রূপগঞ্জের পীতলগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে জোয়ারসাহারার নুুনবাজারে যুক্ত হবে কমলাপুর-বিমানবন্দর মেট্রোরেল রুটের সঙ্গে।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর এক মাসের মাথায় শুরু হল দেশের প্রথম পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেুুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী উপস্থিত ছিলেন এ সময়।
৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই পাতাল মেট্রেরেল রূপগঞ্জের পীতলগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে জোয়ারসাহারার নুুনবাজারে যুক্ত হবে কমলাপুর-বিমানবন্দর মেট্রোরেল রুটের সঙ্গে।
বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল মাটির নিচ দিয়ে যাবে। তবে পীতলগঞ্জ থেকে নুুনবাজার পর্যন্ত এ মেট্রো লাইন হবে এলিভেটেড; ৩০০ ফুট সড়কের ওপর দিয়ে যাবে এ রেললাইন।
পাতালরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন উপলক্ষে পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেুাকর্মীরা সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে সমবেত হন অনুষ্ঠানস্থলে।
নেুাকর্মীরা রঙিন টি-শার্ট পরে ঢাকঢোল বাজিয়ে সুধী সমাবেশে যোগ দিতে এলে পুরো এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।
সুধী সমাবেশের জন্য বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয় মঞ্চ। পূর্বাচল-রূপগঞ্জ এলাকার সড়ক সাজানো হয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিু ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক গণ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মেট্রোরেলের লাইন-১ এর ডিপো নির্মাণ হবে নারায়ণগঞ্জ জেলার পিুলগঞ্জে। এ কাজের জন্য জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে ডিএমটিসিএল। পুরো প্রকল্পটির কাজ ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে।
এরমধ্যে প্যাকেজে সিপি-১ এর আওতায় ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়ন করার কাজ শুরু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর। যেখানে ডিপো নির্মাণ করা হবে সেখানে অনেক উঁচু নিচু জায়গা আছে। সেগুলো ভরাট করার কাজ শুরু হবে। তারপর সেখানেই ডিপো নির্মাণ করা হবে।
এমআরটি লাইন-১ হিসেবে চিহ্নিত এ প্রকল্পে বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটারের পুরো অংশ হবে ভূগর্ভে। এ অংশে থাকবে মোট ১২টি স্টেশন।
অন্য অংশ হবে এলিভেটেড; সেই অংশ নুুন বাজার থেকে কুড়িল হয়ে যাবে পূর্বাচলে। ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটারের এ অংশে থাকবে মোট নয়টি স্টেশন।
পাতাল ও উড়াল মিলে মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সাল নাগাদ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে দেশের প্রথম মেট্রোরেল গণ ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ লাখের বেশি যাত্রী পরিবহন করে মেট্রেরেল আয় করেছে প্রায় আড়াই ২ কোটি টাকা।
উড়াল-পাতাল মিলিয়ে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন থামবে প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিনিট পরপর। এই ৩১ কিলোমিটার পথে চলবে ২৫টি ট্রেন। যার প্রতিটি একবারে তিন হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করার সক্ষমতা থাকবে।
পাতালপথে কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, হাতিরঝিল, রামপুরা, পূর্ব হাতিরঝিল, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নুুন বাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ ও বিমানবন্দরে স্টেশন থাকবে। প্লাটফর্মে ওঠা নামার জন্য উভয় পথের স্টেশনে থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর।
তথ্যানুযায়ী, নতুনবাজার স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের সঙ্গে আন্তঃলাইন সংযোগ থাকবে। নর্দা ও নুুন বাজার স্টেশন আন্তঃসংযোগ রুট ব্যবহার করে বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচলে যাওয়া যাবে।
সূত্রমতে, এমআরটি লাইন-১ এর স্টাডি, সার্ভে, ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এই অংশের ডিপো নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে কয়েকটি স্টেশনের জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। ২০২২ সালের অক্টোবরে এ কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘রূপগঞ্জের পিুলগঞ্জ মৌজায় ৮৮ দশমিক ৭১ একর জমিতে হবে মেট্রোর ডিপো। এতে হবে ৬০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রো এই ডিপোর সুবিধা পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিতুলগঞ্জে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এমআরটি লাইন-১ দুই ভাগে বাস্তবায়ন করা হবে। একটি অংশ হবে পাতাল অন্যটি হবে উড়াল পথ। দুটি অংশের মূল ডিপো নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এমআরটি লাইন-১ বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেবে জাপান। আর বাকি খরচ মেটানো হবে সরকারি তহবিল থেকে।’
রাজধানীর যানজট কমিয়ে মানুষের যাতায়াত সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৬ ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সে পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। উড়াল ও পাতাল রেলপথ মিলিয়ে ৬ ধাপে রয়েছে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দান ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি লাইন-৬, ১ ও ৫ এই তিন লাইন যথাক্রমে ২০২৫ সালের জুন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে এমআরটি লাইন-১ ও ৫ এর কাজ শেষ হতে ২০৩০ সাল লেগে যেতে পারে। ২০২৮ সালের মধ্যে রাজধানীর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল-পাতাল মিলিয়ে মোট ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথ নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে উড়াল এবং ৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে পাতাল। মোট ১৪টি স্টেশনের ৯টি উড়াল পথে আর ৫টি স্টেশন থাকবে পাতাল পথে। এমআরটি লাইন ৫ নর্দান রুট নামে পরিচিত এই অংশের সার্ভে কাজ চলছে এখন।
লাইনটি ২০২৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও ডিএমটিসিএল এর কর্মকর্তারা বলছেন, এই লাইন ২০৩০ সালের আগে শেষ হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগতে পারে।
২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬, ১ ও ৫ যদি নির্মাণ শেষ করা যায় তাহলেও রাজধানীর যানজট অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল পথ নির্মাণের উদ্যোগের সূচনা হয় এমআরটি লাইন-৬ এর হাত ধরে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয় প্রথম ধাপে। উত্তরা থেকে আগাঁরগাও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের উদ্বোধন করা হয় গণ ২৮ ডিসেম্বর। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করে যাচ্ছে মেট্রোরেল।
সূত্র বলছে, আগামী বছরের শেষ দিকে চালু করা হবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এরপরের ধাপে নির্মাণ হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। আর এতে সময় লেগে যাবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।