সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৩ চৈত্র ১৪২৯
                
                
☗ হোম ➤ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
যমেক হোস্টেল যেন টর্চার সেল
শিমুল ভুইয়া :
প্রকাশ: শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৭ এএম আপডেট: ০৪.০২.২০২৩ ১২:১০ এএম |
যশোর মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে করা হয়েছে টর্চার সেল। কিছু অছাত্র এই সেলে মূল হোতা। তাদের নির্যাতনে কয়েক শিক্ষার্থী পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলেজ ত্যাগ করেছেন। আবার কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। যাদের নির্যাতনে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তারা এখনো সেই কাজ অব্যাহত রেখেছেন। অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থায় নিচ্ছে না। এদিকে,ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনকে মারপিট করে গুরুতর জখমের পর তিন দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত তদন্ত শুরু হয়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আহতসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, জাকির হোসেনের মারপিটের খবর জানাজানি হওয়ার পর বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ করা হচ্ছে, কলেজ হোস্টেলে কেবল মাদক সেবন করা হয় না; সেখানে তৈরি করা হয়েছে টর্চার সেল। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে হোস্টেলের ১০৪ নম্বর রুমে মারপিট করা হয় বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ওই রুমে এর আগেও অনেক শিক্ষার্থীকে অমানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে নির্যাতনের ভয়ে পড়ালেখা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আবার কারও কারও মানসিক রোগী হয়ে হাসপাতালে দিনের পর দিন থাকতে হয়েছে। মেডিকেল কলেজে পুলিশ পাহারা থাকার পরও এসব কর্মকান্ড অব্যাহত রযেছে। শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট এসব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে কথা বললেই টর্চার সেলে নিয়ে চলে রাতভর নির্যাতন। অথচ যারা টর্চারের সাথে জড়িত রয়েছে তারাই নীতিমালা অনুযায়ী, হোস্টেলে থাকতে পারেন না। তারা কোনো ধরনের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করেই চালাচ্ছে এ ধরনের কর্মকান্ড। বর্তমানে পুরো হোস্টেলে টর্চার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব কারণে যশোর মেডিকেল কলেজ বিমুখ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ না নিলে অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটির কেউই এখনো পর্যন্ত তার কাছে আসেননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি চরম আতঙ্কে রয়েছেন। জাকির বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসক মেহেদী হাসান লিওন, সাকিব আহমেদ তানিমসহ আরও কয়েকজন তাকে  দফায় দফায় মারপিট করেছেন। এমনকি তারা তাকে পানি পান পর্যন্ত করতে দেয়নি। এসব বিষয়ে আরও অন্তত ১০জন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, দেড় বছর আগে সাব্বির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীকে ১০৪ নম্বর রুমে আটকে রেখে তিনদিন ধরে নির্যাতন করে একই সিন্ডিকেট। নির্যাতনে সাব্বির মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।  এরপর তার পরিবারের লোকজন এসে তাকে যশোর থেকে নিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে আর যশোরে পাঠায়নি তার পরিবার।
একই সিন্ডিকেট ফয়সাল নামের আরেক শিক্ষার্থীকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। কেবল সাব্বির কিংবা ফয়সাল না, এমন অনেক শিক্ষার্থীকে কারণে অকারণে ১০৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে।  
সূত্র জানিয়েছে শামীম হোসেনের ইন্টার্ন শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে কর্মরত। তার ঘনিষ্ট সহযোগী ১০৪ নম্বর কক্ষে থাকা মেহেদী হাসান লিয়ন। ওই কক্ষেই তাদের মাদকের আড্ডা চলে। তাদের সাথে থাকেন ইন্টার্ন চিকিৎসক আব্দুর রহমান আকাশ, সাকিব আহমেদ তানিমসহ বহিরাগত অনেকেই।
সূত্র জানিয়েছে, তারা সবাই শাহাদত হোসেন রাসেলের অনুসারী। রাসেলের ইন্টার্ন শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। অথচ তিনিও হোস্টেলের ২০৪ নম্বর কক্ষটি দখল করে রেখেছেন।  
এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব হলসুপারের হলেও তিনি নিজেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। কারণ সহকারী হলসুপার ফয়সাল কাদির শাওন প্রতিটি বিষয়ে তাকে বাধাগ্রস্ত করেন বলে সূত্রের দাবি। শাওনই মূলত ওই সিন্ডিকেটই আশ্রয় প্রশ্রয় দেন।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ডাক্তার এন.কে আলম জানান, তাকে যে প্রধান করা হয়েছে তা তিনি লোক মারফত জেনেছেন। লিখিতভাবে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। এ কারণে তদন্ত শুরু হয়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, হোস্টেল সুপার আজম সাকলাইন, সহকারী হোস্টেল সুপার ফয়সাল কাদির শাওন, শান্তনু বিশ্বাস ও প্রভাষক আলাউদ্দিন আল মামুন।
হোস্টেল সুপার আজম সাকলাইন বলেন, ইন্টার্ন শেষ হওয়া ওইসব শিক্ষার্থীকে বারবার হোস্টেল ত্যাগ করতে বললেও তারা শোনেন না। তার কাজে সহকারী হোস্টেল সুপার শাওন বাধাগ্রস্ত করেন কিনা জানতে চাইলে বলেন,‘যা হয়েছে আগে হয়েছে। এখন দেখা যাক কী হয়।’
সহকারী হোস্টেল সুপার ফয়সাল কাদির শাওন অভিযোগ অস্বীকার করেন। কথার এক পর্যায় তিনি নিজেকে হোস্টেল সুপার দাবি করেন। পরে বলেন, ‘মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।’
এ বিষয়ে জানতে শাহাদত হোসেন রাসেলের কাছে জানতে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাজাদ জাহান দিহান বলেন, এর আগেও একাধিক বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
অধ্যক্ষ মহিদুর রহমান বলেন, এর আগে একজন শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তখন তাকে হোস্টেলে না থাকার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।



গ্রামের কাগজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন


সর্বশেষ সংবাদ
নড়াইলে ১০ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
রনির প্রথম ফিফটি, রানপাহাড়ের পথে বাংলাদেশ
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরাই আজ গণতন্ত্রের কথা বলে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশোধন হচ্ছে মোটরসাইকেল নীতিমালা
জঙ্গি ছিনতাই মামলার আসামির জামিন স্থগিত চায় রাষ্ট্রপক্ষ
মানবপাচার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন : কমিশন চেয়ারম্যান
রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে জাল টাকা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
যশোর জেনারেল হাসপাতালে যুবলীগ নেতার হাতে নার্স লাঞ্ছিত
গ্রামের কাগজকে ভালোবাসা জানাতে আসেন হাজারো মানুষ
আত্মহত্যা করলেন ভারতের জনপ্রিয় নায়িকা
যশোরের সিনিয়র সাংবাদিক শাহনারা বেগমের ইন্তেকাল
হঠাৎ আইরিশদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বদলের ঘোষণা
ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ৭ এপ্রিল থেকে
দেশের ৭ বিভাগে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে
আমাদের পথচলা | কাগজ পরিবার | প্রতিনিধিদের তথ্য | অন-লাইন প্রতিনিধিদের তথ্য | স্মৃতির এ্যালবাম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মবিনুল ইসলাম মবিন | সহযোগী সম্পাদক : আঞ্জুমানারা
পোস্ট অফিসপাড়া, যশোর, বাংলাদেশ।
ফোনঃ ০২৪৭৭৭৬২১৮২, ০২৪৭৭৭৬২১৮০, ০২৪৭৭৭৬২১৮১, ০২৪৭৭৭৬২১৮৩ বিজ্ঞাপন : ০২৪৭৭৭৬২১৮৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected]
কপিরাইট © গ্রামের কাগজ সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft