প্রকাশ: শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:১৪ এএম |

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের বিদায়ী অতিরিক্ত পরিচালক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সব শর্ত ভঙ্গ করে পদায়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে মোটা অংকের টাকায় এক উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে তিনি উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করেছেন। আর ওই পদায়ন ইস্যুতে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তাকে তড়িঘড়ি করে কালীগঞ্জে পাঠিয়েছেন।
আরো ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, উৎপাদনে দেশে বিশেষ অবদান রাখা যশোর সদর উপজেলার মত জায়গা থেকে ব্লক শুন্য করে তিনি উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করেছেন। এসব নিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পিআরএল এ যাওয়ার আগ মুহূর্তে নানা অপকান্ড করে যাওয়ায় ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন খামারবাড়ি প্রধান কার্যালয়ের কাছে।
কৃষি বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চাকরি শেষ হওয়ার মাত্র দেড় মাস আগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি হটিকালচার সেন্টার থেকে বদলি হয়ে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসে অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন আমিনুল ইসলাম। গত ২ ফেব্রুয়ারি তার সরকারি চাকরি শেষ অফিস হওয়ার সুবাদে এক মাস আগে থেকেই বদলি ও পদায়ন বাণিজ্য শুরু করেন। তিনি একজন উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা পদায়নের নামে শর্ত ভঙ্গের উৎসবে মেতে ওঠেন। ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসে উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তার একটি পদ খালি থাকাকে পুঁজি করেন তিনি। ঝিনাইদহ সদরে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিলন ঘোষকে উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন দিয়েছেন। শর্ত অনুযায়ী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হতে গেলে কম পক্ষে ১৫ বছর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু মিলনের চাকরির বয়স মাত্র ৯ বছর। তিনি ২০১৩ সালে ১৪ আগস্ট যোগদান করেন। এছাড়া নিজ জেলায় পদায়ন হবে না। অথচ এই মিলনকে সব শর্ত ভেঙে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন দিয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক আমিনুল ইসলাম। আইপিএম ট্রেনিং থাকাসহ কমপিউটার বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কিন্তু সব শর্ত ভুলুণ্ঠিত করে মিলনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ ওই পদের জন্য একমাত্র যোগ্য ও শর্তের মধ্যে পড়া যশোর সদরের জাকির হোসেনকে ওই পদে পাদায়ন করা হয়নি। জাকির হোসেন চাকরিতে যোগ দেন ২০০৪ সালে।
এখানেই শেষ নয়, ওই মিলনকে পদায়ন করে তার পছন্দমত জায়গায় দিতে শৈলকুপার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা প্রদ্যোৎ গুহকে তড়িঘড়ি করে কালীগঞ্জে বদলি করেছেন জায়গা খালি করার জন্য। ১ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ তাকে ছাড়পত্র দেন শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান। ১ ফেব্রুয়ারি অফিসে গেলে আনিসুজ্জামান তাকে জানান, অতিরিক্ত পরিচালক স্যারের নির্দেশনায় তাকে বদলি করা হচ্ছে। আর ছাড়পত্র গ্রহণ না করলে তাকে হুমকি দেয়া হয় স্ট্যান্ড রিলিজ করা হবে। আর নতুন উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন পাওয়া মিলন ঘোষকে পাঠানো হচ্ছে শৈলকুপায়।
এদিকে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বদলি করার কাজেও সিদ্ধহস্ত আমিনুল ইসলাম। এক মাসেই সব করেছেন। যশোর সদর উপজেলা দেশের কৃষি সেক্টরে ব্যাপক অবদান রাখে। সবজী ও খাদ্য শস্য উৎপাদনে কৃষিতে ঈর্ষনীয় ভূমিকা রাখে এই সদর উপজেলার কৃষি। কিন্তু আমিনুল ইসলাম কৃষিকে ক্ষতিগ্রস্ত্ করতে ৪ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বদলি করেছেন। এরা হচ্ছে মাহবুব হোসেন, জাকির হোসেন, মিলন মাহবুবসহ ৪ জন। শর্ত ভঙ্গ করে উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তার পদায়ন ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বদলির ঘটনায় গোটা যশোর অঞ্চল কৃষি বিভাগে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। দেড় মাস আগে যোগদান করে আবার পিআরএল এ যাওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে অর্থ বানিজ্য করে এই পদায়ন করেছেন বলে অভিযোগ সূত্রগুলোর। পদায়নে ৪ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্য করা হয়েছে এমন অভিযোগ এসেছে পত্রিকা দপ্তরে।
এ ব্যাপারে উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা প্রদ্যোৎ গুহ গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, মূলত তার উপর অবিচার করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারির আগে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি এখনও বদলি অর্ডার পাননি। অথচ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তার হাতে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেন। এটা ঘোড়ার আগে গাড়ি যাওয়ার মত ঘটনা। জুনিয়র ছেলে ঝিনাইদহের মিলনকে শৈলকুপায় পাঠানোর জন্যই তাকে তড়িঘরি করে সরিয়ে কালীগঞ্জে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও হাতে বদলি আদেশ পাননি, যে কারনে ছাড়পত্র পেলেও যোদগাদন করেননি কালীগঞ্জে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বাংলদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার নাথ ও বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদের সভাপতি সুভাস চন্দ্র সরকার গ্রামের কাগজকে জনিয়েছেন, তারা যতদুর জানতে পেরেছেন উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা পদায়নে সকল শর্তই ভঙ্গ করা হয়েছে। মিলনকে ওই পদে পদায়ন করলে বিদায়ী অতিরিক্ত পরিচালক যথেচ্ছা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এটাই প্রতীয়মান হয়। তারা তথ্য পেয়েছেন প্রায় ৪ লাখ টাকা অর্থ বানিজ্য করা হয়েছে ওই পদায়নে। এছাড়া যশোর সদর উপজেলার কয়েক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকেও বদলি করা যথাযথ হয়নি। তাদের কাছে তথ্য রয়েছে বদলির কারণে সদরের ব্লক কর্মকর্তা শুণ্য হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের বিদায়ী অতিরিক্ত পরিচালক আমিনুল ইসলামকে ৫ বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ২ ফেব্রুয়ারি সকালে, দুপুরে, বিকেলে এবং সন্ধ্যায় ফোন করা হয় গ্রামের কাগজের টেলিফোন এবং এই প্রতিবেদকের মোবাইল ফোন থেকে। এছাড়া শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান খানকে দুই বার ফোন করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে রাতে কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদায়ী অতিরিক্ত পরিচালক আমিনুল ইসলাম ২ ফেব্রুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ পরিচালকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে পিআরএল গ্রহন করেন। আগামি ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ দিনের মত তিনি অফিসে যেতে পারেন বলেও জানায় ওই সূত্রটি।