
উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্যামনগরে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। বুড়িগোয়ালীনী ইউনিয়নের পোড়াকাটলা এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছেন।
ড্রেজার মালিক ফারুক হোসেন বলেন, মেসার্স আর-রাদ কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠানের মালিক সবুজ খান। আমরা জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে বালু উত্তোলন করছি। ফারুক হোসেনের নিকট থেকে অনুমোদনের কপি নিয়ে দেখা গেছে যে,অনুমোদনে বলা হয়েছে যে, বিষয়গুলো বিবেচনা করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ডেক্সিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার সাপেক্ষে বালু উত্তোলনের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি), শ্যামনগর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সুপারিশ করেছেন।
বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেনের কাছে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন জেলা প্রশাসকের অনুমোদন রয়েছে। প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবেদন দাখিলের বিষয় জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত ভাবে বলেন, গল্প করার সময় নেই বলে ফোনটি কেটে দেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আসাদুজ্জামান মোবাইলে বলেন, জেলা প্রশাসক অনুমোদন দিয়েছেন। আপনার অভিযোগ বলেন! প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয় অনুমোদন দিতে পারেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের মাধ্যমে অনুমোদন দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সরদার শফিকুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কোন মতে প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। আমরা বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় এমন কোন ছাড়পত্র দেয়নি। বালু উত্তোলনের অনুমোদনে সাতক্ষীরা আরডিসি মো: মহিউদ্দীনের স্বাক্ষরিত দেখে মোবাইল ফোনে প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয় শ্যামনগর পানিউন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামানের কাছে প্রতিবেদন চাইলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ডেক্সিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার সাপেক্ষে বালু উত্তোলনের উপযুক্ত হিসেবে প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আপনার যদি অভিযোগ থাকে অফিসে আসেন।
প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে বালু উত্তোলনের জন্য আবেদন করলে, বালু উত্তোলনের প্রতিবেদন তলব করেন। অতি মুনাফার লোভে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডের কর্তকর্তা সহ উপজেলার প্রভাবশালী কিছু কতিপয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডের কর্তকর্তা প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকার কথা গোপন রেখে বালু উত্তোলনে কোন অসুবিধা নেই মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ সনের ৬২ নং আইনের ৫ নং কলামে বলা হয়েছে, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে নদী বা ভূ-গর্ভস্থ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। এবং ১১ নং কলামে বলা হয়েছে, বালুমহাল হইতে বালু বা মাটি উত্তোলন, ইত্যাদি রাজস্ব আদায় নিষিদ্ধ৷ কোন বালুমহাল ইজারা প্রদান করা না হয়ে থাকিলে, উক্ত বালুমহাল হইতে এই আইনের অধীন ইজারা প্রদান ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে বালু বা মাটি উত্তোলন, পরিবহণ, বিপণন ও সরবরাহ করা যাইবে না এবং এই মর্মে কোন রাজস্বও আদায় করা যাইবে না।
বাংলাদেশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান “বারসিক” এর সমন্বয়কারী, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বৈচিত্র্য ও পরিবেশবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে নদীর সভাবিক গতিপথ বাঁধা সৃষ্টি করে পুরো হাইড্রোলজিক্যাল কার্যক্রমে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়৷ অন্যদিকে মাছের আবাসস্থল ও খাদ্য চক্রের চরম ক্ষতি হয়৷ মাটির লেয়ার ভেঙ্গে মাটি ও পানিদূষণসহ প্রান বৈচিত্র্যের চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে৷ অপরদিকে বোরিং করে বালু উত্তোলনে মাটির ক্ষয় যেমন ঘটছে, তেমনি মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, ভূগর্ভস্থ থেকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷