
পাবনার সুজানগর উপজেলার আমিনপুরে প্রভাবশালী ভাইয়ের অত্যাচারে নিজ বাড়িতে বসবাস করতে পারছেন না এক বাকপ্রতিবন্ধীর পরিবার। সৌদি প্রবাসী স্বামী ও বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এছাড়াও জোর করে ও কৌশলে বাকপ্রতিবন্ধী বোনের কাছ থেকে জমিজমা লিখে নেয়ার চেষ্টারও অভিযোগ উঠেছে।
ন্যায় বিচারের জন্য বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগী বাকপ্রতিবন্ধী লতা খাতুন। কিন্তু অভিযুক্ত ভাই ইকবাল হারুন প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীরা সুজানগর উপজেলার আমিনপুরের সাগরকান্দি ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত তোফাজ্জল হোসেনের সন্তান।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে প্রতিবেশী কামাল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত তোফাজ্জল হোসেনের বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে লতা খাতুনের। মেয়ে বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তার নামে দুই বিঘা জমিজমা লিখে দেন তোফাজ্জল হোসেন। পরবর্তীতে কামাল হোসেন সৌদি আরব গেলে তার খরচ বাবদ দেড় বিঘা জমি লিখে নেন ভাই ইকবাল হারুন।
কামাল প্রবাসে থেকে ইকবাল হারুনের কাছে পরিবারের খরচসহ যাবতীয় টাকা-পয়সা পাঠাতেন। কামাল ফিরে আসলে সেইসব টাকার হিসেবে নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এছাড়াও বাবার নামে জমি ও দোকান বিক্রি করে দিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন ভাই ইকবাল হারুন হোসেন। এর প্রতিবাদ করায় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবন্ধীসহ পরিবারকে ভিটেছাড়া করেন অভিযুক্ত হারুন।
সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবন্ধী বোনকে ভুল বুঝিয়ে সুজানগর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে নিয়ে যান হারুন ও তার সহযোগীরা। সেখানে তার নামীয় জমিজমা লিখে নেয়ার চেষ্টা করলে সেটি ভেস্তে যায়। একইদিন কামাল হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে একটি চুক্তিনামায় স্বাক্ষর নেন হারুন। এরপর থেকে সৌদি প্রবাসী স্বামী ও বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী নিজ বাড়িতে উঠতে পারছেন না। বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে তাকে ভিটেবাড়ি ছাড়া করা হয় এবং জমি দখলের চেষ্টা করছেন।
এর আগে গত বছরের ৩ জুলাই সুজানগর উপজেলা চত্বরে সৌদি প্রবাসী কামাল হোসেনের উপর হামলা করে টাকা পয়সা, জমির দলিল, মোবাইলসহ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় হারুন ও তার সহযোগীরা। এবিষয়ে সুজানগর থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি কামাল হোসেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভাই ইকবাল হারুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা সালিশী বৈঠক করেছি। আমাদের এক সঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করা সম্ভব নয়। শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য তাদের চলে যেতে বলেছি, অন্য জায়গায় বাড়ি করার জায়গাও দিতে চেয়েছি। এজন্য আমরা চুক্তিও করেছি। কিন্তু সেসব এখন তারা মানছেন না।’
এবিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার বিষয়ে এখনো অভিযোগ পায়নি। তবে তাদের পারিবারিক ঝামেলার বিষয়টি জানা আছে। আর গত বছরের একটা ঘটনায় আমি উনাকে (ভুক্তোভোগী কামাল) মামলা করতে বলেছিলাম। বার বার বলার পরও উনি তা করেন না। উনি আসলে মামলা নেয়া হবে না।