শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
                
                
☗ হোম ➤ ইসলামী জাহান
ক্ষমা আল্লাহর দেওয়া গুণ
কাগজ ডেস্ক :
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩, ২:৪০ পিএম |
আল্লাহতায়ালা মানুষকে স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা দান করেছেন। সেই বুদ্ধিমত্তার দাবি হচ্ছে দায়িত্বশীলতা।
একজন মানুষের বুদ্ধিমত্তা যত বেশি থাকবে, তিনি তত বেশি দায়িত্বশীল। তিনি নারী বা পুরুষ, যা-ই হোন না কেন।
বুদ্ধিমত্তা না থাকলে দায়িত্ব থাকে না। যেমন ছোট শিশুদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। কারণ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটেনি। তেমনি উন্মাদকে কোনো কিছুর জন্য দায়ী করা যায় না। কেননা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য হারিয়ে গেছে। যা হোক, আমাদের মানবসত্তার একটি অংশ হলো আমরা ভুল করে থাকি। মাঝে মধ্যে আমরা অনিচ্ছাকৃত ভুল করি। তবে কখনো কখনো আমরা জেনেশুনে এবং ইচ্ছা করেই পাপকাজ করি এবং অন্যদের ব্যাপারে ভুল করে থাকি। একটা কথা আছে, তা হলো- ভুল করা মানবিক ব্যাপার এবং ক্ষমা করা আল্লাহ প্রদত্ত গুণ।
এই কথাটির উভয় অংশই অত্যন্ত সত্য। মানুষ হিসেবে আমরা দায়িত্বশীল ঠিকই; তবে আমাদের ভুলত্রুটি হয়ে থাকে। তাই আমরা সর্বদাই আল্লাহতায়ালার ক্ষমা প্রত্যাশী। ইসলাম দুই ধরনের ক্ষমার কথা বলে-
ক. আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা
খ. মানুষের করা ক্ষমা।
দুটোই আমাদের দরকার। এর কারণ হলো আমরা আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেমন ভুল করে বসি, তেমনি ভুল হয় মানুষ হিসেবে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বেলায়।
পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালার অনেক নামের উল্লেখ আছে। এগুলোকে বলা হয় ‘আসমাউল হুসনা’ বা সবচেয়ে সুন্দর নাম। নামগুলো প্রকাশ করছে আল্লাহতায়ালার বিভিন্ন ও বহুমুখি গুণ ও বৈশিষ্ট্য। তার, কয়েকটি নাম করুণা ও ক্ষমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যেমন-
১. আল গাফুর (সর্বাধিক ক্ষমাশীল)। কোরআনে কারিমে নামটি এসেছে ৭০ বারেরও বেশি। এই নামের একই উৎস থেকে আরো কিছু নাম এসেছে আল্লাহতায়ালার।
২. আল আফুয়্যু। এটা ক্ষমার আরেক অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোরআনে নামটির উল্লেখ রয়েছে পাঁচবার। অর্থ- উপশম, পুনঃস্থাপন, অব্যাহতিদান, মুক্ত করা। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শব্দটির অর্থ হলো, আমাদের পাপ ও ভ্রান্তির কারণে যে শাস্তিপ্রাপ্য, এর বোঝা থেকে আমাদের মুক্তি দেয়া; অথবা পাপ ও ভুলের মাধ্যমে আমরা নিজেদের যে মর্যাদা হানি করেছি, এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৩. আৎ তাওয়াব (তওবা বা অনুশোচনা গ্রহণকারী)। এই নাম কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে ১১ বার। এই নামের তাৎপর্য হলো আল্লাহ বারবার তওবা কবুল করে থাকেন। তারপর আবার আমরা গুনাহ করি, ভুল করি। তবুও আমরা তওবা করলে তিনি দয়াবশত তা গ্রহণ করে থাকেন। এভাবে আমাদের আরো একবার সুযোগ দেন সত্যের পথে ফিরে আসার।
৪. আল হালিম (ধৈর্যশীল)। কোরআন শরিফে এই নাম ১৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। এই নামের তাৎপর্য হলো, আল্লাহতায়ালা বিচার করে ফেলার জন্য তাড়াহুড়া করেন না। তিনি বান্দাদের সময় দেন। তিনি পরিচয় দেন ধৈর্যশীলতার, যাতে তার বান্দারা তার দিকে ফিরে আসে।
৫. আর রাহমান ও আর রাহিম (সর্বাধিক করুণাময় ও দয়ালু)। কোরআনে আল্লাহতায়ালার এই দু’টি নাম সবচেয়ে বেশি এসেছে। আর রাহমান এসেছে ৫৭ বার। আর আর রাহিমের দ্বিগুণ ১১৫ বার। আর রাহমান ইঙ্গিত দেয়, আল্লাহর করুণা বিপুল। আর রাহিম বোঝায়, আল্লাহতায়ালা সব সময়ই করুণাময় বা দয়ালু। তিনি ভালোবাসা ও করুণায় পরিপূর্ণ।
আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা, করুণা ও ক্ষমা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত এবং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনেক হাদিস রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের যেসব মোনাজাত শিখিয়েছেন, তার একটিতে তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি সবচেয়ে বেশি ক্ষমাশীল; আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করুন। ’ -তিরমিজি ও ইবনে মাজা
আল্লাহতায়ালার করুণা ও ক্ষমায় আস্থা রাখার বিষয়টি অতিশয় গুরুত্ববহ। তেমনি, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ক্ষমাশীলতার ভিত্তিতে গড়ে তোলা প্রয়োজন।
যারা আমাদের প্রতি অন্যায় করে, তাদের আমরা ক্ষমা না করা পর্যন্ত আমরা আল্লাহর তরফ থেকে ক্ষমা লাভের প্রত্যাশা করতে পারি না। পরস্পরকে ক্ষমা করে দেয়া, এমনকি শত্রুকে পর্যন্ত ক্ষমা করা হলো ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোর একটি।
একটি সুবিখ্যাত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন যে, আল্লাহ তাকে ন’টি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। এর একটি হচ্ছে, ‘তাদের ক্ষমা করা যারা আমার প্রতি অন্যায় করে। ’
হজরত রাসূলে কারিম (সা.) ছিলেন সর্বাধিক ক্ষমাশীল ব্যক্তি। তিনি তার শত্রুদেরও ক্ষমা করে দিতে সদা প্রস্তত ছিলেন। তায়েফবাসীদের ক্ষমার কথা আমরা সবাই জানি।
এছাড়া যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখনও তিনি মক্কার শত্রুদের ক্ষমা করে দিলেন। যারা রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বছরের পর বছর; সাহাবাদের নির্যাতন করেছে, অনেককে হত্যা করেছে। তিনি সবাইকে মাফ করে দিলেন, এমনকি হিন্দাকেও। যে তার পিতৃব্য হজরত হামজা (রা.)-এর হত্যাকা- ঘটিয়েছিল। তাকে হত্যার পর এই মহিলা তার দেহকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল, আর চিবিয়েছিল হামজা (রা.)-এর কলিজা। যখন সে ইসলাম গ্রহণ করে, রাসূল (সা.) তাকেও ক্ষমা করেদিলেন।
ইসলাম ন্যায়বিচার এবং অন্যায়কারীদের শাস্তিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে একই সমান গুরুত্বারোপ করে ক্ষমা, দয়া ও ভালোবাসার ওপর। সামাজিক শৃঙ্খলার স্বার্থে দরকার সুবিচার, আইন এবং আরো কিছু। কিন্তু ক্ষতির উপশম এবং মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন ক্ষমার।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমাদের নিজেদের পাপ ও ভুলত্রুটির ক্ষমার জন্য আমরা যেমন আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রত্যাশা করি, তেমনি যারা আমাদের প্রতি অন্যায় করে থাকে, তাদের ক্ষমা করার অভ্যাস নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে অবশ্যই। এটাই ইসলামের শিক্ষা।



গ্রামের কাগজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন


সর্বশেষ সংবাদ
নওগাঁয় নদী ভাঙনে ভয়াবহ বন্যা, পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ
চলে গেলেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ জর্জ কোটান
দেশে ডেঙ্গু টিকার সফল গবেষণা
বাউফলে পবিত্র ঈদ-মিলাদুন্নবী পালিত
বাগমারায় বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে রাজশাহী জেলা প্রশাসক
শেখ হাসিনার জন্মদিনে বাউফলে ৭৭ জন হাফেজকে সম্মাননা
শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়ন : রাবি উপাচার্য
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দাফনের ৫ দিন পর গৃহবধূকে জীবিত উদ্ধার
ভাতুড়িয়ায় দু’ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা
দারোগা আশীষ সাহার বিরুদ্ধে ৮০ লাখ টাকা অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
যশোরে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার শঙ্কা
রেলস্টেশনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে যবিপ্রবি শিক্ষার্থী জখম
অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের ভয়েসকল ফাঁস
মাসুদ হত্যা মামলার তিন আসামি রিমান্ডে
আমাদের পথচলা | কাগজ পরিবার | প্রতিনিধিদের তথ্য | অন-লাইন প্রতিনিধিদের তথ্য | স্মৃতির এ্যালবাম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মবিনুল ইসলাম মবিন | সহযোগী সম্পাদক : আঞ্জুমানারা
পোস্ট অফিসপাড়া, যশোর, বাংলাদেশ।
ফোনঃ ০২৪৭৭৭৬২১৮০, ০২৪৭৭৭৬২১৮১, ০২৪৭৭৭৬২১৮৩ বিজ্ঞাপন : ০২৪৭৭৭৬২১৮৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected]
কপিরাইট © গ্রামের কাগজ সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft