
ভোটগ্রহণের পর ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হলেও প্রয়োজনে সেই ভোট বাতিলের ক্ষমতা নিজেদের কাছে চায় নির্বাচন কমিশন। আরপিওর এমন সংশোধনীর পাশাপাশি অন্তত ১৫ থেকে ১৭টি ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব আছে ইসির। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুর আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরপিওর (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২) এমন বেশকিছু ধারা সংশোধনের এসব প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উঠছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব মন্ত্রিসভা বৈঠকে উঠবে বলে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সংশোধনী প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়েছে।
যদিও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হলেও তাতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে জানা গেছে। তবে গেজেট প্রকাশের পরও ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে দিতে শুরুতে আপত্তি জানালেও পরে একমত হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তৎকালীন নূরুল হুদা কমিশন বলেছিল, নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পর ইসির হাতে কোনো ক্ষমতা নেই।
গেজেট প্রকাশের পর আদালতে মামলা দায়ের করা ছাড়া প্রতিকার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওই নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন সাবেক সিইসি।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আরপিওর সংশোধনী প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখার প্রস্তাব ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় উঠার আগে এ প্রস্তাব বেশ কয়েক বছর ধরে অপেক্ষমাণ ছিল।
সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে সংসদের আসন্ন অধিবেশনে এটি বিল আকারে উঠতে পারে। বিল পাস হলে দলগুলো নারী কোটা পূরণে আরও সাত বছর সময় পাচ্ছে। আগামী ৬ এপ্রিল সংসদের ২২তম অধিবেশন বসবে। আইন মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রস্তাবে ইভিএমে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার আঙুলের ছাপে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার জন্য ব্যালট ইস্যুর বিধান আরপিওতে যুক্তের প্রস্তাব করেছিল ইসি। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে তা সংশোধনী প্রস্তাবে থাকছে না। বিষয়টি সার্কুলার জারি করার বিদ্যমান যে প্রথা রয়েছে, তাই বহাল থাকছে। পাশাপাশি মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ এবং বিলখেলাপিরা তাঁদের খেলাপি টাকা পরিশোধ করলেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। বিদ্যমান আইনে সাত দিন আগে এসব পরিশোধের বিধান রয়েছে।
এছাড়া ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তির প্রভাব বিস্তার করলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাকে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তা কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন বন্ধ করবেন, তার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে সংশোধনীতে। পাশাপাশি ব্যালট পেপারের পেছনে অফিসিয়াল সিল ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর না থাকলে তা গণনায় আনা যাবে না– এমন বিধান স্পষ্ট করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোট গণনার বিবরণী ও ব্যালট পেপারের হিসাব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর এজেন্টকে দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এছাড়া ভোটগ্রহণ শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টা ও পরের ৪৮ ঘণ্টায় কেউ বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ, অস্ত্র ও পেশিশক্তি প্রদর্শন এবং ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিতদের ভয় দেখালে সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনি¤œ দুই বছর জেল-জরিমানার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও পেশিশক্তির বিস্তার রোধে নির্দিষ্ট মেয়াদে সাজার কথা বলা হয়েছে ইসির প্রস্তাবে।