শুক্রবার ২ জুন ২০২৩ ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
                
                
☗ হোম ➤ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
বাগেরহাটে ইটের বিকল্প হয়ে উঠছে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক
বাগেরহাট প্রতিনিধি :
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩, ২:৫৯ পিএম |
বাগেরহাটে পোড়া মাটির ইটের পাশাপাশি বিভিন্ন নির্মাণ কাজে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
ব্যয় কম, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বসত বাড়িসহ নানা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে ব্লক দিয়ে।
জেলায় পাঁচটি বাড়ি, একটি লাইব্রেরি ভবন ও ৮৫০ মিটার একটি রাস্তা ব্লক দিয়ে তৈরি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। চাহিদা থাকায় জেলায় অন্তত ২০টি ছোট বড় ব্লকের কারখানা গড়ে উঠেছে। যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে বেকার যুবকদের।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মাদরাসা বাজার এলাকায় ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শাকিলা বেগম। দেড় হাজার পিস ব্লক দিয়ে নির্মাণ করেছেন ছাদসহ ৬৫০ বর্গফুটের একতলা ভবন। সিমেন্ট, বালু, মিস্ত্রিসহ সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। এমন ভবন ইট দিয়ে করলে অন্তত সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা ব্যয় হতো বলে ধারণা তার।
তিনি বলেন, চাকরির সুবাদে পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকি। মাঝে মধ্যে বাড়িতে থাকার জন্য একটি ছোট ঘর করেছি। মাহবুব নামে এক ব্লক কারিগরের পরামর্শে ব্লক দিয়ে ঘরটি তৈরি করি। ব্লকের তৈরি ঘরটি দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছে। নতুনত্ব আছে। আমার খরচও অনেক কম পড়েছে।
ঘর তৈরির কারিগর রাজমিস্ত্রি মাহবুব আলম বলেন, আমি নিজেই ব্লক তৈরি করি। এলাকায় কেউ ব্লক দিয়ে বাড়ি করতে চাইলে, তাকে বাড়ি বানিয়ে দিই। আমার সঙ্গে অন্য দক্ষ শ্রমিকরাও থাকেন। শাকিলা বেগমের বাড়ি ইট দিয়ে তৈরি করতে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লাগত। আমার পরামর্শে তিনি ব্লক দিয়ে করেছেন। এতে তার যেমন টাকা সাশ্রয় হয়েছে, সেই সঙ্গে শীত-গরমেও আরামে থাকতে পারবেন।
বাগেরহাট শহরের সোনাতলা এলাকায় কংক্রিটের ব্লক দিয়ে দোতলা বাড়ি তৈরি করছেন সরকারি পিসি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুর রহমান ফারুকী শামীম। বাড়িটির কাজ এখনও চলছে। তার ধারণা, ইটের স্থানে ব্লক ব্যবহার করায় অন্তত ৩০ শতাংশ ব্যয় কম হয়েছে।
তিনি বলেন, পুরোনো একটি সেমি অটোমেশিন দিয়ে নিজে ব্লক তৈরি করেছিলাম। পাঁচটি ইটের সমান প্রতিটি ব্লক তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৪৮ টাকা। ব্লক দিয়ে করায় প্লাস্টার ও গাঁথুনির জন্য ব্যয় কম হয়েছে। এখনও কাজ চলছে, পুরো কাজ শেষ হলে ব্যয়ের অংকটা বোঝা যাবে।
এদিকে সরকার প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী ইটের ব্যবহার কমিয়ে নির্মাণ কাজে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছে পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) “সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট”। কমিনিউটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা প্রকল্পটি বাগেরহাটে বাস্তবায়ন করছে। কোডেকের উদ্যোগে কংক্রিটের ব্লক, পার্কিং টাইলস নির্মাণে দক্ষ শ্রমিক ও উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় নাগরিকদের সচেতন করতে সভা সেমিনার, লিফলেট, পোস্টার বিতরণসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে বাগেরহাট ও আশপাশের এলাকায় ১৫ জন উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে। এ উদ্যোক্তারা প্রতি মাসে লক্ষাধিক ব্লক তৈরি করে বাজারজাত করছেন। এছাড়া কোডেক ও প্রকল্পের যৌথ অর্থায়নে মডেল স্থাপনা হিসেবে বাগেরহাট খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজে ব্লক দিয়ে ৭২০ বর্গফুটের একটি পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ব্লকের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক লোকমান হোসেন।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কয়েক বছর ধরেই সরকার চাচ্ছে নির্মাণ কাজে পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার কমে আসুক। এজন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের উদ্যোক্তারা কংক্রিটের ব্লক তৈরি এবং বাজারজাত করছেন। নতুন নতুন চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এ পর্যন্ত আমরা ব্লকের উদ্যোক্তা তৈরি ও সচেতনা বৃদ্ধির জন্য দেড় শতাধিক মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সচেতনামূলক প্রচার প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।
“সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট”-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে মেশিন কিনে ব্লক তৈরি করে নিজের বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন বাগেরহাট পৌরসভার সোনাতলা এলাকায় উদ্যোক্তা আবু সাইদ।
তিনি বলেন, আমার কারখানায় এখন ১২ জন শ্রমিক কাজ করে। নিজের বাড়ির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী অনেক লোকের বাড়িতে ব্লক সরবরাহের চুক্তি করেছি। দুই লাখ টাকা অগ্রিমও দিয়েছেন একজন। ব্লকে যেমন ব্যয় কম, লাভও ভালো। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় অনেকেই এখন ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে চান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরীফুজ্জামান বলেন, পোড়া ইটের থেকে কংক্রিট ব্লক অনেক বেশি কার্যকর, ব্যয় সাশ্রয়ী, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। এ কারণে অনেক গ্রামীণ সড়ক ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। দিন দিন এ ব্লকের ব্যবহার বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
কংক্রিট ব্লক তৈরি পদ্ধতি, ব্যয় ও সুবিধা: মোটা বালু, সিমেন্ট ও পানি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় অথবা আধা স্বয়ংক্রিয় মেশিনে সাইজ ও আকার অনুযায়ী ব্লক তৈরি করা হয়। ব্লকটির মাঝখানে ফাঁকা থাকায় ভবনের ওজন কম হয়, গাঁথুনি অনেক দ্রুত হয়, প্লাস্টার ও শ্রমিকের ব্যয় কম হয়। ব্লক দিয়ে তৈরি দেয়ালে ছত্রাক, শেওলা ও লবণ লাগার ঝুঁকি কম থাকে। পাঁচটি ইটের আকৃতির অর্থ্যাৎ ১২৮ বর্গ ইঞ্চির একেকটি ব্লক তৈরিতে ব্যয় হয় ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। এ ব্লক ব্যবহারে ইটভাটায় কৃষিজমির মাটির ব্যবহার কমছে। সেই সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করছে।



গ্রামের কাগজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন


সর্বশেষ সংবাদ
চার দিন পর জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন কাদের গাজী
দলিল থেকেও জমির দখল পাচ্ছেন না চুড়ামনকাটির এক দিনমজুর
মোরেলগঞ্জে জমি দখলে মরিয়া প্রভাবশালীরা
মেধাবী জাতি তৈরিতে দুধের চেয়ে ভালো খাবার আর নেই : ডিসি
কালীগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা সরকারি সহযোগিতা চান
হেরোইন মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড
যশোরে বার্মিজ চাকুসহ ৩ কিশোর আটক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ ১৪ জুনের মধ্যেই আঘাত হানতে পারে
লালদীঘির পাড়ে চাঁদার বিনিময়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান
১০ বছর চাঁদা দিলে মিলবে আজীবন পেনশন
দেশের ইতিহাসে সরকার সবচেয়ে বড় নির্বাচনী বাজেট ঘোষণা করবে আজ
দাম কমল এলপিজির
গাওঘরা সরকারি বড় পুকুর নিয়ে উত্তেজনা, তদন্ত দাবি
বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা
আমাদের পথচলা | কাগজ পরিবার | প্রতিনিধিদের তথ্য | অন-লাইন প্রতিনিধিদের তথ্য | স্মৃতির এ্যালবাম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মবিনুল ইসলাম মবিন | সহযোগী সম্পাদক : আঞ্জুমানারা
পোস্ট অফিসপাড়া, যশোর, বাংলাদেশ।
ফোনঃ ০২৪৭৭৭৬২১৮০, ০২৪৭৭৭৬২১৮১, ০২৪৭৭৭৬২১৮৩ বিজ্ঞাপন : ০২৪৭৭৭৬২১৮৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected]
কপিরাইট © গ্রামের কাগজ সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft