প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪২ এএম |

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের পাঁচকাটিয়া গ্রামের রূপা মন্ডল। বেশ কিছুদিন ধরে ভুগছেন শ্বাসকষ্টে। গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শে কোনো রকমে চলছিল তার চিকিৎসা। জেলা শহরের বড় হাসপাতালে যাওয়া-আসা এবং ডাক্তার ফি জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। রূপা মন্ডলের এই কষ্ট দূর করে দিয়েছে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যসেবা বৈকালিক চেম্বার। বৃহস্পতিবার বিকেলে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রঘুরাম চন্দ্রের কাছ থেকে ২০০ টাকা ফি দিয়ে সেবা পেয়ে খুশি রূপা মন্ডল। তার মতোই উচ্ছ্বসিত উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের দত্তকোনা গ্রামের সোনিয়া আফরিন ও আনিছুর রহমান দম্পতি। তারা প্রায় দু’বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে আরশীকে নিয়ে আসেন বৈকালিক চেম্বারে। মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ জেসমিন সুমাইয়ার চিকিৎসা সেবায় তাদের কণ্ঠেও স্বস্তির কথা শোনা যায়।
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো খুশির চিত্র কেশবপুরেও। এখানেও বৈকালিক চেম্বারের সেবা প্রদানের উদ্যোগে খুশি রোগীরা। তারা বলেছেন স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট হেলথ সার্ভিসের নবযুগের সূচনা করবে এই সেবা কার্যক্রম।
জনগণের হাতের মুঠোয় সেবা প্রদানে বৈকালিক চেম্বার উদ্যোগটি প্রথম দিনেই সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। সপ্তাহে দু’দিনের কথা বলা হলেও সেবাগ্রহীতাদের সুবিধার্থে যশোরে এ সেবা কার্যক্রম সপ্তাহে ছয়দিন চালানো হবে। বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত এ সেবা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান। বিকেলের শিফটে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য রোগীরা সরকার প্রদত্ত ফিতে দুপুর ২টা ৩০ থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকিট নিতে পারবেন।
মণিরামপুর ও কেশবপুরসহ দেশের আরও ৩৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আর ১২ জেলা সদর হাসপাতালে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বৈকালিক চেম্বারে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান। স্বাস্থ্য বিভাগ যেটিকে অভিহিত করেছে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস হিসেবে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা অফিস সময়ের পরে নিজের হাসপাতালেই চেম্বার করবেন। অর্থাৎ বিকেলে বা সন্ধ্যায় যেসব সরকারি চিকিৎসক বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ওষুধের দোকানে রোগী দেখতেন, তারা ওই সময় রোগী দেখবেন নিজের হাসপাতালে। দ্বিতীয় শিফটকে বলা হচ্ছে বৈকালিক চেম্বার। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই সেবার পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, যশোরের মণিরামপুর ও কেশবপুর, মাগুরার শ্রীপুর ও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ পাইলট কার্যক্রমের আওতায় এসেছে।
প্রথম দিনে সেবা প্রদান করে খুশি যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সরকার বদ্ধপরিকর।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাক্তার মঞ্জুরুল মুর্শিদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চেম্বারের উদ্বোধন করেন। এ সময় মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ^াস, ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার আশেক সুজা মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার, প্রেসক্লাব সভাপতি ফারুক আহম্মেদ লিটন, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রমুখ।
কেশবপুরে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীরের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা সাদেক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা-আরএমও আহসানুল মিজান রুমীসহ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। উদ্বোধনের আগে সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি টিম হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক সপ্তাহে দু’দিন করে রোগী দেখবেন। এক্ষেত্রে টিকিট নেওয়া যাবে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। এই সেবার জন্য অধ্যাপক চিকিৎসকের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এরমধ্যে ৪০০ টাকা পাবেন চিকিৎসক। আর সেবার সহায়তাকারী পাবেন ৫০ টাকা এবং হাসপাতালের কোষাগারে যাবে ৫০ টাকা। এছাড়া, সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালটেন্টের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা, যার ৩০০ টাকা চিকিৎসক পাবেন। সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালটেন্ট বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা, যার ২০০ টাকা চিকিৎসক পাবেন। এমবিবিএস বা বিডিএস বা সমমনা ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫০ টাকা চিকিৎসক পাবেন। এই টাকায় এক মাসের মধ্যে ফলোআপ হিসেবে আরও একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যাবে।
চিকিৎসা পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি ছোটখাটো সার্জারি ও টেস্টের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। এক্ষেত্রে লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া প্রয়োগে ছোট সার্জারির জন্য বিশেষজ্ঞ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা এবং সার্জারির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ফি হবে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু হতে যাওয়া এই বৈকালিক চেম্বারে চিকিৎসকের সেবার মান ভালো হলে মিলবে পদোন্নতি। এমনকি এই বিশেষায়িত ব্যবস্থায় চিকিৎসাসেবা দিলে তা চিকিৎসকের উচ্চশিক্ষার জন্যও সহায়ক হবে। পাইলট কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের পর এ সেবা কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া হবে দেশের ৬৪ জেলাসহ সব উপজেলায়।