প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩, ১১:১৭ পিএম |

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম আমরা। দেখি বাড়িতে সবাই ঘুমোচ্ছে। হাত মুখ ধুয়ে ব্যাগ একেবারে শেষবারের মতন ঘুছিয়ে ফেললাম আমরা। ডিসেম্বর মাসের ঠান্ডা ঝাড়গ্রামে বেশ ভালই লাগছিল। স্থির করলাম কোলকাতায় গিয়ে বাড়িতে স্নান করবো। আমাদের আওয়াজে স্বপন বাবু উঠে পড়েছেন দেখলাম। টাকা পয়সা আগেই সব মেটানো হয়ে গিয়েছিল। তাই উনাকে বলে আমরা উনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা গ্রামের রাস্তা থেকে বড়ো রাস্তায় এসে উঠলাম। রাস্তায় বিশেষ লোক ছিলো না। মানিকপাড়া বাজারে এসে চা বিস্কুট খেয়ে হাঁটা দিলাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে। সেখানে গিয়ে দেখি অনেক লোক কোলকাতায় আসবে বলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু বাসের দেখা নেই। হটাৎ খবর হলো বাস আসবে না। কি কারণ সেটা যদিও খুব স্পষ্ট করে জানা গেলো না। একবার ভাবলাম স্টেশন যাই। কিন্তু ট্রেন এই সময় নেই। মাথায় কিছুই খেলছিল না যে কি করবো। এই সময় যারা বাসের যাত্রী ছিলেন তারা এক এক করে এদিকে ওদিকে চলে গেলেন। এক টোটো হটাৎ হাই হাই রোড হাই হাই রোড করে চিৎকার করছিল দাঁড়িয়ে। রোসন আর আমি সেই টোটো রিকশায় উঠে পড়লাম।
অনেকটা দূরে হাই রোড। সূর্য উঠে গেছে। হাই রোড এলে আমরা সেখানে নেমে পড়লাম টাকা পয়সা দিয়ে। দেখি অনেক বাস যাত্রী সেখানে দাঁড়িয়ে। এটা কত নম্বর জাতীয় সড়ক সেটা আজ আর মনে পড়ে না। প্রচুর বাস এবং অন্যান্য যানবাহন যাচ্ছে এদিকে ওদিকে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একখানা বাস এলো। সেটা খড়গপুর যাবে। কিন্তু সেটায় বেজায় ভীড়। কোনমতে সেই বাসে আমি আর রোসন উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। বসার জাগা নেই। কন্ডাক্টর টিকেট কাটতে এলে শুনতে পেলাম খড়গপুর রেল স্টেশনের কাছেই এই বাসটির স্ট্যান্ড। নিশ্চিন্ত হলাম দুজনে। স্থির করলাম স্টেশনে নেমে ট্রেন ধরে হাওড়া হয়ে কলকাতায় ফিরবো। ঘণ্টাখানেক বাদে বাসের মধ্যে বসার সিট পেলাম। খড়গপুর বহু দূরে তখনও। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমরা দুজনে বাসের মধ্যে। হটাৎ কন্ডাক্টরের চিৎকার শুনে বুঝলাম স্টেশন এসে গেছে। টিকেট কাটলাম হাওড়া স্টেশনে যাবার। ট্রেন আবার লেট। ভোগান্তি কাকে বলে!
প্লাটফর্মে বহু সময় বসে থাকার পর অবশেষে ট্রেনের দেখা মিললো। সেই ট্রেনে আবার বসার জায়গা নেই। ট্রেন লেট থাকার দরুন বেজায় ভীড়। কোনমতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছালাম। সেখান থেকে বাসে করে শিয়ালদহ রেল স্টেশন। রোসন চললো তার নিজের বাড়িতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় আর আমি কোলকাতায় নিজেদের জীবনের প্রথম অভিযান শেষ করে। মনের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন রয়ে গেলো যার কোনো সঠিক উত্তর আজ এতো বছর বাদেও আমরা পেলাম না।
এক এক করে আমাদের অভিযানের ভিডিওগুলো আমরা আমাদের ইউটিউব চ্যানেল @https://youtube.com/@PlateauOfSpirits এ আপলোড করলাম। তখন অবশ্য আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের এই নাম ছিল না। অন্য একটা নাম ছিল। পরে আমরা নাম বদল করি। এবং তারও অনেক পরে একটা ফেসবুক পেজ খুলি আমরা Plateau Of Spirits নামে। এটাই ইউটিউবের জগতে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয় ভিডিও যা মোট ৬ পর্বে আমাদের ইউ টিউবচ্যানেলে আজও আছে। আশাকরি সবাই দেখবেন। কিন্তু, একদম ভয় পাবেন না।
এর পরের পর্বে দৈনিক গ্রামের কাগজ পত্রিকার ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমরা নিয়ে আসছি কোলকাতায় ভুতুড়ে রানি কুঠি নিয়ে আমাদের অভিযানের নেপথ্য কাহিনী। জানতে পারবেন ইউটিউব চ্যানেলগুলি প্রচার পাওয়ার জন্যে কি রটনা বাজারে রটিয়েছে আর প্রকৃত ঘটনা রানি কুঠি নিয়ে।
লেখক: ইউটিউবার