
নামাজ ইসলাম ধর্মের একটি দৈনিক নিয়মিত ইবাদত। একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে হয় যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে। এটি মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন অবশ্যকরণীয় একটি ধর্মীয় কাজ।
তবে প্রতিদিন আবশ্যকরণীয় বা ফরজ ছাড়াও বিবিধ নামাজ রয়েছে যা সময়ভিত্তিক বা বিষয়ভিত্তিক। যেমন হাদিসে এসেছে- বুরাইদা (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সদাকা করা’। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! কার শক্তি আছে এই কাজ করার’? তিনি (সা.) বললেন, ‘মসজিদে কোথাও কারোর থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত সালাতই এর জন্য যথেষ্ট’। (আবু দাউদ; কিতাবুল ‘আদাব’, অধ্যায়: ৪১, হাদিস নম্বর: ৫২২২)
উপরিউক্ত হাদিসটি মুলত চাশতের সালাত বা সালাতুদ দুহার অপরিসীম গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথাই তুলে ধরে। এর থেকে আরো বোঝা যায় যে, চাশতের সালাত তথা সালাতুদ দুহা ৩৬০টি সাদাকার সমতুল্য।
আবু হোরাইরা (রা.) বলেন: ‘আমার বন্ধু [মুহাম্মাদ (সা.)] আমাকে তিনটি বিষয় আমল করার উপদেশ দিয়েছেন: প্রতি মাসের প্রথম তিন দিন রোজা রাখা; চাশতের সালাত (সালাতুদ দুহা) আদায় করা এবং ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে বিতরের সালাত আদায় করা’। (সহিহ আল বুখারি; ‘তাহাজ্জুদ’ অনুচ্ছেদ, অধ্যায়: ২, হাদিস নম্বর: ২৭৪ এবং সহিহ মুসলিম; কিতাবুস সালাত, অধ্যায়: ৪, হাদিস নম্বর: ১৫৬০)
চাশতের সালাত (সালাতুদ দুহা) একটি উপহার স্বরূপ এবং যে এই উপহার পাওয়ার আশা করে, সে যেন এই সালাত আদায় করে। তবে এই সালাত আদায় না করলে কেউ গুনাহগার হবে না।
আবু সাঈদ (রা.) হতে বর্ণিত: ‘রাসূল (সা.) ততক্ষন পর্যন্ত চাশতের সালাত পড়তে থাকতেন, যতক্ষনে আমরা ভাবতে শুরু করাতাম যে তিনি (সা.) এই সালাত আর কখনো বাদ দেবেন না। আবার যখন এই সালাত আদায় করা বন্ধ রাখতেন, আমরা ভাবতাম হয়ত তিনি এই সালাত আর কখনই আদায় করবেন না’। (তিরমিজি)
চাশতের সালাতের রাকাতের সংখ্যা ২, ৪, ৮, ১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহ্র রাসূল (সা.) আলী (রা.) এর বোন উম্মে হানী (রা.) এর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাত পড়েছিলেন। সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু এবং সেজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাত অন্তর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন। (সহিহ আল বুখারি; ‘সালাত সংক্ষিপ্তকরন’ অনুচ্ছেদ, অধ্যায়: ২, হাদিস নম্বর: ২০৭)
ইশরাক বা চাশতের সালাত আদায়ের উপযুক্ত সময়
‘ইশরাক’ এর সালাতই হলো ‘চাশতের সালাত’ বা ‘সালাতুদ দুহা’। ‘দুহা’ শব্দের অর্থ প্রভাত সূর্যের ঔজ্জল্য, যা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। এই সালাত প্রথম প্রহরের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্বেই পড়া হয় বলে একে ‘সালাতুদ দুহা’ বা ‘চাশতের সালাত’ বলা হয়। তবে প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে তাকে ‘সালাতুল ইশরাক’ বলে। এই সালাত বাড়ীতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা, রাসূল (সা.) এই সালাত কখনো পড়তেন, আবার কখনো ছেড়ে দিতেন। উল্লেখ্য যে, এই সালাত ‘সালাতুল আউয়াবীন’ নামেও পরিচিত।
শায়েখ ইবন বাজ (রা.) বলেছেন: ‘ইশরাক সালাত শুরু থেকেই চাশতের সালাত হিসেব আদায় হয়ে আসছে’। (মাজমূ’ ফাতাওয়াহ আল শায়েখ ইবন বাজ, ১১/৪০১)
চাশতের সালাতের সময় হচ্ছে, সূর্য একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠার পর থেকে শুরু করে জোহর সালাতের ঠিক পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত।
শায়েখ ইবন ঊসাইমীন (রা.) এর মতে: ‘চাশতের সালাত আদায়ের সময় হলো সূর্য উঠার ১৫ মিনিট পর থেকে শুরু করে জোহর সালাতের ১০ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত’। (আল-শারহ আল-মুমতি, ৪/১২২)
অতএব, এই পুরো সময়টাই হচ্ছে চাশতের সালাত বা সালাতুদ দুহা এর সময়। সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তখন এই সালাত আদায় করা উত্তম। কেননা, নবী করিম (সা.) বলেছেন: ‘এই সালাত (চাশতের সালাত) আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে তখন, যখন সূর্যের তাপ এতোটা প্রখর যে, সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক উটও সেই তাপ অনুভব করতে পারে’। (সহিহ মুসলিম; কিতাবুস্ সালাত, অধ্যায়: ৪, হাদিস নম্বর: ১৬৩০, শায়েখ ইবন বাজ: মাজমূ’ ফাতাওয়াহ, ১১/৩৯৫)
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দিনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ, দিনের চার ভাগের একভাগ পার হয় তখন এই সালাত আদায় করা উত্তম। কাজেই, চাশতের সালাত বা সালাতুদ দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং জোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময়টা। দেখুন, আন্নাওয়াবী (র.) এর মাজমূ’ ফাতাওয়াহ, ৪/৩৬ এবং আল মাওসূ’য়াহ আল ফিক্হীয়্যাহ, ২৭/২২৪)