
প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র পরিচালক বেবী ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। একজন সৃজনশীল, মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক ছিলেন বেবী ইসলাম। চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রহণে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৫, ১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ সালে তিনবার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
বেবী ইসলাম ৩রা জানুয়ারি, ১৯৩১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার বেলগাছিয়া। তাঁর পিতা আবুল হোসেন বিশ্বাস এবং মাতা মোতাহারুন নেসা ছিলেন একজন শিক্ষক।
বেবী ইসলাম শিয়ালদহের একটি মিশনারি স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং পরে ক্যাথেড্রাল মিশন হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৫ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন।
বেবী ইসলাম ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক অজয় করের সাথে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে প্রথমে কাজ শুরু করেন। কলকাতা, বোম্বে, মাদ্রাজের বিখ্যাত চলচ্চিত্রে তিনি সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন।
সাজঘর, জিগাংসা, মেজদিদি, হারানো সুর ও বড়দি প্রভৃতি সব বিখ্যাত চলচ্চিত্রে, অজয় করের সঙ্গে চিত্রগ্রহণের কাজ করেছেন তিনি।
১৯৫৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এছাড়াও তিনি এফডিসিতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এফডিসি থেকে নির্মিত প্রথম চারটি চলচ্চিত্রের দুইটি ‘আসিয়া’ ও ‘আকাশ আর মাটি’র

প্রথম চিত্রগ্রহক ছিলেন বেবী ইসলাম- যদিও তিনি আংশিক কাজ করে ছেড়ে দেন, নিজে পরিচালক হবার জন্যে।
তিনি এফডিসিতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৯ সালে তিনি এফডিসি থেকে প্রযোজিত ও নির্মিত প্রথম চারটি ছবির একটি আকাশ আর মাটির চিত্রগ্রহণের কাজ করেন। সূর্যস্নান (১৯৬২), শ্যামলী, সাজঘর, নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭), সোয়ে নদীয়া জাগে পানি (১৯৬৮), এতটুকু আশা (১৯৬৮), নীল আকাশের নিচে (১৯৬৯), ক খ গ ঘ ঙ (১৯৭০), একাত্তরের যীশু (১৯৯৩) সহ অনেক ছবিতে মূর্ত হয়ে আছে তার চিত্রগ্রহণের শৈল্পিক দক্ষতা। ১৯৬৪ সালে উর্দু ভাষায় তানহা নামের একটি ছবি পরিচালনা করেন বেবী ইসলাম। পরে ১৯৭৫ সালে নির্মাণ করেন চরিত্রহীন। এই চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি নয়নের আলো (১৯৮৪) ও প্রেমিক (১৯৮৫) চলচ্চিত্রের জন্য আরও দুইবার এই বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩) ও যুক্তি তক্কো গপ্পো (১৯৭৭) ছবিরও চিত্রগ্রহণ করেছেন।
বেবী ইসলাম ২৪ মে, ২০১০ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর ৮ মাস। তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে, এদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অবদান অনিস্বীকার্য। বিনয়ী ভদ্র ও অত্যান্ত ভালো মানুষ হিসেবে, চলচ্চিত্ররসংশ্লিষ্টদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বেবী ইসলাম।