প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম |

যশোর সদর উপজেলার বলাডাঙ্গায় ভুয়া ডাক্তারের অপারেশনের খবর গ্রামের কাগজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে ফেসবুক পেজে তা ভাইরাল হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার রাত ১০ টা পর্যন্ত এই সংবাদটিতে ২০ লাখ ভিউ হয়।
ভুয়া ডাক্তার অরুণের নেই কোনো সনদ। তবুও অপারেশন করেন। প্রতি অপারেশনের জন্য তাকে ফি দিতে হয় কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। গত ৩০ বছর ধরে এভাবেই রোগী দেখছেন যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বলাডাঙ্গা গ্রামের কথিত ডাক্তার অরুণ। পাইলস ও ফেস্টুলার মতো জটিল রোগের অপারেশন করেন নিজ বাড়িতেই। নেই কোনো অপারেশন থিয়েটার। খুপচি ঘরের মধ্যে একটি খাট। আর ওই খাটের ওপর পলিথিন বিছিয়ে রোগীকে শুইয়ে তিন টাকার ব্লেড দিয়েই করা হয় অপারেশন! সম্প্রতি এক গৃহবধূর পাইলস অপারেশন করতে গিয়ে মলদ্বারের বড় একটি অংশ কেটে ফেলার পর বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে। গ্রামের কাগজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ জাহানারা বেগম। তিনি জানান,দীর্ঘদিন ধরে পাইলস রোগে ভুগছিলেন। সাত মাস আগে অজ্ঞাত পরিচয়ের দু’ ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন ডাক্তার অরুণের কথা। এরপর তিনি সেখানে যান। অরুণের সাথে কথা বলার একপর্যায়ে পাইলস অপারেশনের জন্য তিনি ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। শেষমেষ ১১ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী গত বছরের ১১ নভেম্বর দুপুরে নিজ বাড়িতে অরুণ জাহানারার পাইলস অপারেশন করেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন তার মলদ্বারের বড় একটি অংশ কেটে ফেলেছেন অরুণ। এরপর থেকে তিনি আরও বিপাকে পড়েন। তখন এ পর্যন্ত ৮-১০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু কেউই আর তার সে সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। ইতিমধ্যে তার দু’লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে তিনি কোতোয়ালি থানায় অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি বলে দাবি করেন জাহানারা।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রামের কাগজের একটি টিম যায় বলাডাঙ্গা গ্রামে। তার বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রথমে এসব বিষয় অস্বীকার করেন। জিজ্ঞাসার একপর্যায়ে তিনি সব ঘটনা স্বীকার করেন। তার কথিত অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে একপাশে একটি খাট রয়েছে। আরেক পাশে রান্না ঘর। ঘরের দরজা জানালা আছে না থাকার মতো। ময়লা আবর্জনার স্তুপ। অরুণ জানান ১০ হাজার ৫০০ টাকার বিনিময়ে তিনি ওই অপারেশন করেন। সকলেরই ভালো হয় জাহানারার কেন এমনটি হলো সে বিষয়ে তিনি জানেন না। তিনি আরও জানান, এসব সমস্যার কারণে তিনি এখন আর অপারেশন করেন না।
এসব বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বললে তাদের অধিকাংশই বলেন, অরুণ স্থানীয়দের চিকিৎসা দেন না। মূলত তার শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল এলাকায় দালাল ঠিক করা আছে। সেইসব দালালের মাধ্যমে এখানে রোগী এনে চিকিৎসা করেন। আবার কখনো বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, যেকোনো ধরনের অপারেশন করতে হলে অব্যশই তার অভিজ্ঞতা ও সনদ থাকতে হবে। অরুণের বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি দ্রুতই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।
কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।