প্রকাশ: বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩, ২:৩৩ পিএম আপডেট: ৩১.০৫.২০২৩ ২:৩৫ পিএম |

প্রথম বাঙালি ক্রিকেটের ইতিহাসে যারা উৎসাহী, তারা প্রবীর সেনকে চেনেন একমাত্র ভারতীয় কিপার হিসাবে যিনি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে স্টাম্প করেছিলেন। আজ তার জন্মদিন।
প্রবীর ৩১ মে, ১৯২৬ সালে কুমিল্লায় এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম অমিয় সেন, আর মা বাসন্তী সেন। পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন প্রবীর। কলকাতার লা মার্টিনেয়ার কলেজে পড়েছিলেন তিনি। এরপর গ্র্যাজুয়েশন করেন সিনিয়র ক্যামব্রিজ থেকে। তবে এসবের পাশাপাশিই ক্রিকেট খেলায় নিজের পারদর্শীতা দেখাতে শুরু করেছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে স্কুলের বৈতরণী পেরোনোর কিছুদিন পরই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যায় তার। ইডেন গার্ডেনসে হওয়া সেই ম্যাচে বাংলার প্রতিপক্ষ ছিল বিহার। ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে মাত্র ১৩ ও ২ রান করেছিলেন। এছাড়া উইকেটকিপার হিসেবে ছিল তিনটি ডিসমিসাল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ভারত যখন আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে, ততদিনে প্রবীর ঘরোয়া ক্রিকেটে তিন বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছেন। তারপরও ১৯৪৬ সালে ভারত যখন ইংল্যান্ড সফরে গেল, সেই দলে ছিলেন না তিনি। অবশ্য ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি ঠিকই ডাক পেয়ে যান। দলের সাথে প্রবীর অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিলেন কিন্তু তার জাতীয় দলের টেস্ট ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা ছিল খুবই ক্ষীণ। দলে রয়েছেন জেনি ইরানির মতো উইকেটকিপার। তাই প্রবীর ধরেই নিয়েছিলেন, ইরানিকে বিশ্রাম দিতে কয়েকটা ট্যুর ম্যাচে হয়তো তাকে মাঠে নামাবে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু গ্যাবায় প্রথম ম্যাচে ভারতের শোচনীয় পরাজয়, এবং সিডনিতে দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র করার পর, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তৃতীয় টেস্টে ইরানির বদলে স্কোয়াডে নিয়ে আসা হলো প্রবীরকেই।

তবে জাতীয় দলে অভিষেকের আগেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন প্রবীর। অ্যাডিলেড ওভালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ট্যুর ম্যাচে তিনি ভিনু মানকাড়ের বোলিংয়ে স্টাম্পিং করেছিলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। আর তাতেই তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমে।
প্রবীর ১৯৫২ সালে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৫২ সালের ইংল্যান্ড সফরের জন্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রবীর। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টেও খেলেছিলেন তিনি, যে ম্যাচে ভারত একই দিনে ৫৮ ও ৮২ রানে অল-আউট হয়েছিল। হেডিংলি ও লর্ডসে প্রথম দুই টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রবীর দ্য ওভালেও খেলেছিলেন। এই সফরজুড়েও গ্লাভস হাতে বিস্ময় ছড়িয়েছিলেন প্রবীর, কিন্তু ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছিলেন ব্যাটসম্যান হিসেবে। তবে একটি ব্যতিক্রম ছিল গ্ল্যামোরগানের বিপক্ষে ট্যুর ম্যাচটি, যেখানে ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
১৯৫৭-৫৮ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যান প্রবীর। নিজের শেষ মৌসুমে প্রেজেন্ট ইলেভেনের বিপক্ষে পাস্ট ইলেভেনের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে ১৮ ও ৩৯ রান এসেছিল তার ব্যাট থেকে। তারচেয়েও জরুরি বিষয়টি হলো, দুইটি ক্যাচ আর ছয়টি স্টাম্পিংও করেছিলেন উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে। এর দুই সপ্তাহ পরে সার্ভিসেসের বিপক্ষে তিনি তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেন। সে ম্যাচে ব্যাট হাতে ৫৭ রান করেছিলেন, কিন্তু ডিসমিসাল ছিল শূন্য। বোধকরি এভাবেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তার সময় ফুরিয়েছে। ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রবীর সেন আজও পরম সম্মানের পাত্র হয়েই আছেন।