বৃহস্পতিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৬ আশ্বিন ১৪৩০
                
                
☗ হোম ➤ অর্থনীতি
দেশের ইতিহাসে সরকার সবচেয়ে বড় নির্বাচনী বাজেট ঘোষণা করবে আজ
কাগজ ডেস্ক :
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩, ১০:১২ এএম |
নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার।
রিজার্ভ-ডলারের সংকট, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী চাপসহ অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য তিনি এ বাজেট উপস্থাপন করবেন।
এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।
তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এটা পঞ্চম বাজেট। একইসঙ্গে বর্তমান অর্থমন্ত্রীরও এটি পঞ্চম বাজেট।
নির্বাচনকে মাথায় রেখে জনতুষ্টির বাজেট করতে পারছে না সরকার। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির চাপ, রাজস্ব আদায়ে অদক্ষতা, রিজার্ভ ও ডলার সংকটের মতো বিষয়গুলোর কারণে বাজেটের অর্থ সংস্থানকে কঠিন করে তুলেছে। ফলে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আগামী বাজেটে করহার ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। ভ্যাটের হার এবং আওতাও বাড়ানো হবে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা মানুষের একটি বড় অংশ নতুন করে আরও চাপে পড়তে পারে।
নির্বাচনী বছরের বাজেটে ভোটের কথা মাথায় রেখে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে ইতিবাচক পরিবর্তন, কৃষিখাতে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়নে সমন্বিত কার্যক্রম এবং সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এডিবির আকার ও এর বাস্তবায়ন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে মনে করা হচ্ছে।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো এবং বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মন্ত্রিসভার জন্য প্রস্তুত করা সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রিসভার জন্য প্রস্তুত করা সার-সংক্ষেপে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, বেকারদের কর্মসৃজন এবং পল্লি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় উপযুক্ত কার্যক্রম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা, কৃষি গবেষণা, যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃজনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার: আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
নতুন বাজেটে জিডিপির উচ্চাশা বহাল: ভোটের বছরে যতটা সম্ভব সন্তুষ্টি পূরণ করে আগামী এক বছর সরকারি উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন দায় মেটাতে তিনি এ বিশাল ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। একইসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সীমাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যেই আগামী অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার ৭ দশমিক ৫ অর্জন করতে চান অর্থমন্ত্রী। আর সেলক্ষ্য অনুযায়ী এবার জিডিপির মোট আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
বাজেটের আয়: সরকার আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওপর। নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা ধরা হতে পারে। এর মধ্যে কর বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে। কর বাবদ যে রাজস্ব আসবে তার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজাটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত ৪৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কর বাবদ যে রাজস্ব আয় ধরা হয় তার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর ১৮ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটের ব্যয়: আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী পরিচালন ব্যয় বাবদ ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন সরকারের সময় নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন বাজেটের ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বা ৯৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। সুদ পরিশোধ খাতগুলোর মধ্যে সরকারের যে অভ্যন্তরীণ ঋণে রয়েছে, তার সুদ পরিশোধে ব্যয় করা হবে ৮২ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করবেন বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে।
অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের খাতগুলোর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাতে ব্যয় হবে ৪২ হাজার কোটি টাকা। সরকারের বিভিন্ন মেয়াদি বিল-বন্ডের সুদে যাবে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জিপিএফ খাতের সুদ পরিশোধে ব্যয় করা হবে ৮ হাজার কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় নির্ধারণ করা হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ রাখা হয় ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি): উন্নয়ন ব্যয় ধরা হতে পারে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। বিভিন্ন স্কিম বাবদ রাখা হতে পারে ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে (এডিপি বহির্ভূত) ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
বাজেটের ঘাটতি: সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২০ শতাংশের সমান। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। আর অনুদানসহ আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৪ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বিপরীতে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে। তাতে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ধরা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক অনুদান ধরা হয় ৩ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ধরা হতে পারে। এর মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেওয়া হবে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।  ব্যাংক বহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হতে পারে। সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হতে পারে এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে।
চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি: মূল্যস্ফীতির সীমাহীন চাপে নাভিশ্বাস অবস্থা সাধারণ মানুষের। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান বাদে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাস, সার, খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেলের যে দাম, তার তুলনায় দেশের বাজারমূল্য অনেক বেশি। যখন সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনার নানা ত্রুটি, অনুৎপাদনশীল খাতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, ঘাটতি বাজেট পূরণে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণ নেওয়ার বিপরীতে মোটা অঙ্কের সুদ পরিশোধ এবং অভ্যন্তরীণ চোরাচালান ও মজুদদারির কারণে ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি তৈরি হচ্ছে।
গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ৬ মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, তখন আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর এই মূল্যস্ফীতিকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
ভর্তুকিতে রেকর্ড: আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে সরকার ব্যয় করবে মোট ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকির বড় অংশ ব্যয় করা হবে বিদ্যুতে, এর পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা।  কৃষিতে যাবে ১৭ হাজার কোটি, রপ্তানি ভর্তুকিতে যাবে ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং প্রণোদনায় ব্যয় হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।  অন্যান্য খাতের ভর্তুকিতে ব্যয় হবে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা।
সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বেশিরভাগ আয়কর রিটার্ন জমাকারীকে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আসছে। কারণ, ৪৪ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমার রশিদ লাগবে। যেমন সঞ্চয়পত্র কেনা, ক্রেডিট কার্ড নেওয়া, রাইড শেয়ারিংয়ে গাড়ি দেওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়াসহ সাধারণ করদাতার নেওয়াও কিছু সেবা এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। আগের ৩৮টি সেবার ওপর এবার আরও ৬টি সেবা যুক্ত হচ্ছে।
আগামী বাজেটে করহার ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। ফলে গৃহস্থালি সামগ্রীর ক্ষেত্রে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, যা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। একই হারে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী ও তৈজসপত্রের ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বাড়তে পারে টিস্যু পেপারের দাম। শুল্ক ফাঁকি রোধে বাজেটে সব ধরনের ওভেন আমদানির শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়াচ্ছে, মোট করভার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বিদেশি ওভেনের দাম বাড়তে পারে। সারা দেশে রান্নার কাজে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। বাজেটে সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত স্টিল ও ওয়েল্ডিং ওয়্যার আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে।
বিরিয়ানি-তেহারির প্রধান উপকরণ বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে চালের দাম বাড়তে পারে। বাজেটে তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই আমদানি করা কাজুবাদামের দাম বাড়তে পারে।  
বিভিন্ন ধরনের ফল ও বাদামের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে সব ধরনের সিগারেটের দামও। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের দাম ৯০ টাকা, মধ্যস্তরের ১৩৪, উচ্চস্তরের ২২৬ এবং অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম ৩শ টাকা করা হচ্ছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে আইএমএফএর পরামর্শে মোবাইলফোনকে বিলাসী পণ্য বিবেচনায় নিয়ে বাজেটে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইলফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে, সেখানে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে।
সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে। কলম উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। ফলে কলমের দাম বাড়বে। চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টন প্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশি টাইলস আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে আসন্ন বাজেটে বাড়ি নির্মাণের খরচ বাড়াবে। দেশের অভ্যন্তরে উড়োজাহাজে ভ্রমণকারীদের প্রথমবারের মতো করের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিদেশগামী উড়োজাহাজ যাত্রীদের ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বেশি কর দিতে হতে পারে।
অন্যদিকে কম আয়ের মানুষকে করজালের মধ্যে আনার ছক থাকছে বাজেটে। কারণ শূন্য আয় দেখিয়ে আগে রিটার্ন জমা দেওয়া গেলেও আগামীতে স্লিপ পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে সঞ্চয়পত্র কেনা এবং ব্যাংক ঋণ নেওয়া যাবে না। ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস নবায়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, বাড়ির নকশা অনুমোদনসহ সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে না।
জানা গেছে, আবার মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করার ঘোষণাও থাকতে পারে। আগামী বাজেটে এনবিআর বিভিন্ন খাতে উৎসে কর বসিয়ে কর আদায়ে বেশি মনোযোগী। জমি-ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে, উল্টো নিবন্ধন ফি বাড়তে পারে। ভ্রমণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব পাস হলে বিদেশ ভ্রমণে বাজেট বাড়াতে হবে।
এবার বাজেটে বড় চাপ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত। এগুলো ঋণ দেওয়ার প্রথম বছরেই বাস্তবায়ন করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে কর রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক চলতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। কারণ, আইএমএফএর হিসাবে আগামী অর্থবছরে কর রাজস্ব বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। শর্ত অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র থেকে চলতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা কম ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
নির্বাচনী বছরে সর্বোচ্চ ১৪ মেগা প্রকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন ১৪টি মেগা প্রকল্প ও কর্মসূচির জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৫৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। বাড়ছে প্রায় ১১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অধিবেশন ২৬ জুন পর্যন্ত চলার পর ২ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করা হবে। ২৬ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে। এবার কোরবানির ঈদের কারণে কিছুটা আগেভাগে পাস করা হবে। বাজেটের ওপর মোট ৪০ ঘণ্টা আলোচনা হবে। সংসদের বৈঠক প্রতিদিন বিকেল ৫টায় শুরু হবে।



গ্রামের কাগজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন


সর্বশেষ সংবাদ
বঙ্গমাতায় বসতপুর বঙ্গবন্ধুতে ধোপাদী স্কুল চ্যাম্পিয়ন
শেখ হাসিনা সেদিন সীমান্ত খুলে না দিলে কী হতো!
প্রধানমন্ত্রীর অনন্য উদ্যোগ, একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল বদলে দিচ্ছে দেশের অর্থনীতি
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত বরিশাল বিএনপি, দলীয় রোড মার্চ কর্মসূচিতে সংঘর্ষের শঙ্কা
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ক্যামেরা
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তারসহ ৩ চোর আটক
২৭ নভেম্বর থেকে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
যশোরেই চালু হলো পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র
বেশি শসা খাওয়া বিপজ্জনক!
দুদকের মামলায় খোলাডাঙ্গার লুৎফর কারাগারে
অবৈধ দখলদারের কারণে শুরু করা যাচ্ছে না নতুন ভবন নির্মাণের কাজ
রাজকে ৪ কারণে ডির্ভোস দিলেন পরীমণি
যশোরে একটি রাস্তার অপমৃত্যু
দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত হতে পারে তিন দিন
আমাদের পথচলা | কাগজ পরিবার | প্রতিনিধিদের তথ্য | অন-লাইন প্রতিনিধিদের তথ্য | স্মৃতির এ্যালবাম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মবিনুল ইসলাম মবিন | সহযোগী সম্পাদক : আঞ্জুমানারা
পোস্ট অফিসপাড়া, যশোর, বাংলাদেশ।
ফোনঃ ০২৪৭৭৭৬২১৮০, ০২৪৭৭৭৬২১৮১, ০২৪৭৭৭৬২১৮৩ বিজ্ঞাপন : ০২৪৭৭৭৬২১৮৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected]
কপিরাইট © গ্রামের কাগজ সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft