প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩, ৮:৫১ পিএম |

ভোগতী নরেন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব শফিকুল ইসলাম। বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলার কারণে গা ঘেমে তার পরিবারের শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা সর্দি-জ্বর ও কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রন্ত হয়েছে।
তিনি জানান, চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর নাড়ির টানে রাজধানী ছেড়ে জন্মভিটায় চলে এসেছেন। বিদ্যুৎ এখন দৈনিন্দন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু তীব্র গরমে লোডশেডিংএ তার অসুস্থ শরীর যেন নেতিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে না আসে ঘুম, না থাকে কোথাও যাওয়ার জায়গা। গরমে শিশুদের চিৎকার চেচামেচিতে দুর্বিষহ অবস্থা হয়।
ঘন্টায় ঘন্টায় কেশবপুরে চলছে লোডশেডিং। দিন-রাত কয়েক দফায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা থাকছে না বিদ্যুৎ। তীব্র গরম আর টানা লোডশেডিংএ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেক থাকায় এ পরিস্থি সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস জানাচ্ছে।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কেশবপুর জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় ৮০ হাজার আবাসিক, বাণিজ্যিক, সেচ ও শিল্প গ্রাহক রয়েছে। ওই গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যায় ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট; যা চাহিদার তুলনায় প্রায় অর্ধেক। সন্ধ্যার শুরুতে সব জায়গায় একসাথে বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়। ফলে বাধ্য হয়ে সমন্বয় করে লোডশেডিং করতে হয়। এতে এক ঘন্টা পর পর চলে বিদ্যুতের আসা যাওয়া। পৌর শহরে লোডশেডিং একটু কম দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা বেশি খারাপ। এসব এলাকায় দিন-রাত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে কয়েক কদিন ধরে যশোর অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠা নামা করে। গত বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনের তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাগদা গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় ২ নং ফিডারে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা। একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। অন্য উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেশবপুরের মত এত লোডশেডিং না।
মজিদপুর গ্রামের গৃহবধূ নাসিমা বেগম বলেন, দীর্ঘ সময় পর পর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে ফ্রিজে রাখা খাদ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাবদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে ঘন্টায় ঘন্টায় বিদ্যুতের আসা যাওয়ায় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ায় দারুন ক্ষতি হয়েছে।
কেশবপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এস এম শাহীন আহসান বলেন, হঠাৎ গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় অর্ধেক। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।