
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেছেন, মেধাবী জাতি তৈরিতে দুধের চেয়ে ভালো খাবার আর নেই। তাই সরকার মানসম্পন্ন দুধ উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। দুধের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার ব্যবস্থা জোরদারকরণ, দুগ্ধজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণসহ স্কুলফিডিংয়ের মাধ্যমে দুধপানের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সকল ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
খাদ্য হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বেলা এগারটায় যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, পৌরমেয়র হায়দার গনী খান পলাশ, সহাকারী পুলিশ সুপার মণিরামপুর সার্কেল আশেক সুজা মামুন, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন। স্বাগত বক্তৃতা করেন সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপু কুমার সাহা। সভায় বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হক। খামারিদের পক্ষে বক্তৃতা করেন জয়নাল ডেইরির স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন। সভায় বক্তারা বলেন, একজন মানুষকে গড়ে দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা উচিৎ।
আলোচনা সভা শেষে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বড়দের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাবিবা জামান লিবা প্রথম, ক্যান্টনমেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাহমুদা হক পাপড়ি দ্বিতীয় এবং যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেহরী মুস্তাফিজ তৃতীয় স্থান লাভ করে। রচনা প্রতিযোগিতায় বালিয়াডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খান নাজিফা কবির প্রথম, যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেয়া দে দ্বিতীয় এবং যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ফাইরুজ মালিহা তৃতীয় স্থান লাভ করে। কুইজ প্রতিযোগিতায় পুরাতন কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মুনতাসির রহমান ইমাদ প্রথম, মহিলা সমাজ কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাহিম ফুয়াদ দ্বিতীয় এবং বালিয়াডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সৃজন শিকদার তৃতীয় স্থান লাভ করে। ছোটদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইশাল কবীর অরণী প্রথম, একই বিদ্যালয়ের সাহিত্য ইয়াশ ঘোষ দ্বিতীয় এবং দিয়া মন্ডল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। কুইজ প্রতিযোগিতায় পুরাতন কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি রায় প্রথম, মহিলা সমাজ কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবিদা সুলতানা দ্বিতীয় এবং একই বিদ্যালয়ের ফিজা খাতুন তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বিজয়ীদের মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিরা পুরস্কার তুলে দেন।
এর আগে সকাল দশটায় টেকসই দুগ্ধ শিল্প, সুস্থ মানুষ,সবুজ পৃথিবী প্রতিপাদ্য বৃহস্পতিবার সকালে কারেক্টরেট চত্বর থেকে বেলুন ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এরপর বের হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কালেক্টরেট চত্বরে এসে শোভাযাত্রা শেষ হয়। পরে কারেক্টরেট সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে শিশু পরিবারের বালিকারা। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হক। অনুষ্ঠানে বালিকাদের উপকরণ ক্রয়ের জন্য চেক হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক গ্রামের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি ও যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোর্শেদ আলম, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার তপু কুমার সাহা, শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক শান্তা শ্যামলী মণীষা, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের সায়েন্টিফিক অফিসার মেহেদী হাসান বিন্দু, উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাক্তার আফতাব উদ্দিন রুমি।
টেকসই দুগ্ধ : শিল্প সুস্থ্য মানুষ, সবুজ পৃথিবী প্রতিপাদ্যে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সরকারি শিশু পরিবারে বালিকারা তাদের প্রতিভার জানান দেয় গানে আবৃত্তি ও নৃত্যে। তারা পরিবেশন করে নজরুল সংগীত, দেশের গান, কবিতা এবং একক ও দলীয় নৃত্য। অংশ নেয় মিতু, সাদিয়া, রুমি, মিলি, মাহিমা, ঋতু, অন্তরা, সুমি, আছিয়া ও আনিয়া।