যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রচন্ড তাপদাহ আর ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে মানুষের মরি মরি অবস্থা। তীব্র গরমের মধ্যে দিন-রাত মিলিয়ে অসংখ্যবার লোডশেডিং হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে এক ঘণ্টার মধ্যে দেখা মিলছে না। দিন-রাতে এ রকম বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে বিরক্ত-অতিষ্ঠ মানুষ।
এ মাসের প্রথম দিন থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রায় একই রকম তাপমাত্রা বিরাজ করছে যশোরে। আগামী চার-পাঁচদিন একই অবস্থা বিরাজ করতে পারে বলে জানিয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটিতে স্থাপিত আবহাওয়া অফিস। আর বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহের পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে গেছে। গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এ কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
টানা এক সপ্তাহ ধরে যশোরে তীব্র তাপদাহ চলছে। তাপমাত্রার রেকর্ড তাই বলছে। কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় জনজীবনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তারপর তীব্র লোডশেডিং যন্ত্রণা কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রচন্ড গরমের কারণে প্রাণিকূলেও এখন নাভিশ্বাস।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী,গতকাল রোববার যশোরে ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া, ১ জুন ছিল ৩৮.২, ২ জুন ৪০.২, ৩ জুন ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মানে কয়েকদিন একই রকম তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আগামী ৩-৪ দিন এই অবস্থা থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা।
তীব্র তাপদাহে প্রয়োজনীয় কাজ করতে গিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।
প্রচন্ড গরমের মধ্যে যশোরে ব্যাপক আকারে লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে যশোর ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে। ওজোপাডিকো-১ এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রওশন আলম জানিয়েছেন, ওজোপাডিকো-১ এবং ২ মিলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে। আর ৯২ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে দু’টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে। জানিয়েছেন যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার আবু বকর। তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে বিদ্যুতের ব্যবহার মাত্রারিক্ত বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ হলে এই সমস্যা কেটে যাবে।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে তার প্রভাবও যশোরে পড়বে। তবে, বৃষ্টি হলে এবং গরম কমে গেলে এই অবস্থা আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন, কর্মকর্তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, যে তাপমাত্রা চলছে তাতে রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকলে বা কাজ করলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। কারো শরীরে একটানা দু’ তিন ঘণ্টা ১০৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হতে পারে হিটস্ট্রোক। আবার সারাদিন পানি পান না করলে হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন তা হচ্ছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। তরমুজ, আনারস জাতীয় ফল বেশি বেশি খাওয়া। রোদের মধ্যে কাজ করতে করতে ছায়ায় গিয়ে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি।