বুধবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২ আশ্বিন ১৪৩০
                
                
☗ হোম ➤ জাতীয়
কয়লা সংকট, তেলে উৎপাদন হবে বিদ্যুৎ
ঢাকা অফিস:
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩, ৫:৫৩ পিএম |
কয়লা সংকটের কারণে ৫ জুন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমান সংকট নিরসনে তেলভিত্তিক প্ল্যান্টগুলোতে ফের উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে পিডিবি।
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রও পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে ক্রমেই বাড়ছে লোডশেডিং। এই ঘাটতি মেটাতে তেল, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সংকট কাটাতে বাঁশখালিতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু এবং ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুতের ওপর ভরসা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব উদ্যোগের ফলে জুন মাসের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কাগজে-কলমে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৩টি। এই সংখ্যক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট। কিন্তু গ্যাস, তেল, কয়লা সংকটসহ নানা কারণে এরমধ্যে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যেগুলো চালু রয়েছে। সেগুলোর মধ্যেও বেশ কিছু কেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে দেশের সাড়ে ৪ কোটি গ্রাহকের ঘরে আলো জ্বালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে লোডশেডিং।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, সোমবার (৫ মে) বিকাল পর্যন্ত সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১৫ হাজার ৭৯ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হয় ১১ হাজার মেগাওয়াট। বাকি ৪ হাজার ৭৯ মেগাওয়াট করা হয়েছে লোডশেডিং। এর আগে, রোববার (৪ জুন) সন্ধ্যায় বিদ্যতের চাহিদা ছিলো ১৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা হয় ১৩ হাজার ৭৮১ মেগাওয়াট। কিন্তু রাতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে ১৬ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াটে পৌঁছে যায়। বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১২ হাজার ৬৭১ মেগাওয়াট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩৫০ মেগাওয়াটের মতো আসতো। ফলে কিছুটা হলেও ঘাটতি পূরণ হতো। কিন্তু সোমবার (৫ জুন) দুপুরে সেটিও বন্ধ হয়ে গেলো। ফলে সরবরাহে ঘাটতি বেড়ে গেছে।’
এদিকে সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এরই মধ্যে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাপপ্রবাহ বিদ্যুতের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন এবং সোমবারে চার হাজার ছাড়িয়েছে ঘাটতি। এই পরিস্থিতিতে রোববার (৪ জুন) জরুরি বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুন মাসে গ্যাস, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর। পাশাপাশি এ মাসেই বাঁশখালিতে নির্মাণ হওয়া এস আলম গ্রুপের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারতের ঝাড়খ- থেকে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এসব মাধ্যম থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে চলমান যে সংকট তা কিছুদিনের মধ্যেই কেটে যাবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশই গ্যাসভিত্তিক। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। তবে গ্যাস সংকটের কারণে এখন উৎপাদন করা হয় ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি হলেও বর্তমানে সেখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। আর কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট হলেও এখন তা ২ হাজার মেগাওয়াটে নেমেছে। ডলার সংকটের কারণে কয়লা কিনতে না পারায় উৎপাদন বন্ধ রেখেছে দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা মেটাতে সরকার গ্যাস ও তেলের যোগান কিছুটা বাড়াতে চায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আসলে পায়রা সব সমস্যার উৎস না। তবে পায়রা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা একটু বাড়লো। আমরা বৈঠক করেছি, কিভাবে কতটুকু সেভ করা যায়। পায়রা ছাড়াও আমরা এস আলমকে আনার চেষ্টা করছি, লিকুয়েড ফুয়েল বাড়ানোর চেষ্টা করছি, একটু গ্যাস বাড়ানোর চেষ্টা করছি। পায়রার ঘাটতিটুকু, যেন পূরণ করা যায়।’
এদিকে চলতি জুন মাসেই ভারতের ঝাড়খ-ে আদানি পাওয়ার থেকেও বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খ-ের গোড্ডা জেলায় আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে প্রায় সাড়ে ৭০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করছে। ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটারের ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ আসছে তা মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট থেকে আসছে। চলতি জুন মাসে আদানি পাওয়ার লিমিটেড থেকে আরও ৮০০ মেগাওয়াটের বেশি আসার কথা রয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় নির্মাণ হওয়া এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘এসএস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেডে’র দু’টি ইউনিটই জুনে উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে। প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে এখান থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা।
২০১৬ সালে এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জায়গা অধিগ্রহন নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে চার জন নিহত হয়েছিলো। ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের আরেক সংঘর্ষে আরও পাঁচ জন নিহত হন। সেই এসএস পাওয়ার লিমিটেড এখন উৎপাদনের অপেক্ষায়।
বর্তমান কয়লা সংকটে যেখানে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, সেখানে কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র কি করে উৎপাদনে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘কয়লা তো আসবেই, পায়রাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা সাময়িক। বর্তমান বিদ্যুতের ঘাটতি কমিয়ে আনতে ৫ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত একটি পরিকল্পনা নিয়েছি। আবার ১৩ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত আরেকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২২ জুনের পর থেকে আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারণ এরমধ্যে পায়রা ফের উৎপাদনে যেতে পারবে, আদানির বিদ্যুৎ চলে আসবে। এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া যাবে ৭০০ মেগাওয়াট।’


গ্রামের কাগজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন


আরও খবর
সর্বশেষ সংবাদ
রেলস্টেশনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে যবিপ্রবি শিক্ষার্থী জখম
বিশ্বকাপ দলে না থাকার গভীর ষড়যন্ত্রের কথা জানালেন তামিম
সিন্ডিকেটের কারণে আলুর দাম বৃদ্ধি : নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে : কৃষিমন্ত্রী
ভিসানীতি আমেরিকার নিজস্ব ব্যাপার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একযোগে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
বাবা হত্যা মামলায় জেলে ছিলেন ৩ বছর, ছাড়া পেয়েই স্ত্রীকে হত্যা
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ শংকরপুরের ৪ ছিনতাইকারী আটক
ভাতুড়িয়ায় দু’ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা
দাফনের ৫ দিন পর গৃহবধূকে জীবিত উদ্ধার
যশোরে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার শঙ্কা
যশোরের চার জনসহ ৫০ বিচারক প্রশিক্ষণে ভারতে যাচ্ছেন
দেশকে ধ্বংস করতে মরিয়া বিএনপি জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসীরা
মাসুদ হত্যা মামলার তিন আসামি রিমান্ডে
আমাদের পথচলা | কাগজ পরিবার | প্রতিনিধিদের তথ্য | অন-লাইন প্রতিনিধিদের তথ্য | স্মৃতির এ্যালবাম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মবিনুল ইসলাম মবিন | সহযোগী সম্পাদক : আঞ্জুমানারা
পোস্ট অফিসপাড়া, যশোর, বাংলাদেশ।
ফোনঃ ০২৪৭৭৭৬২১৮০, ০২৪৭৭৭৬২১৮১, ০২৪৭৭৭৬২১৮৩ বিজ্ঞাপন : ০২৪৭৭৭৬২১৮৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected]
কপিরাইট © গ্রামের কাগজ সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft