
আজ পর্যন্ত নিজ স্কুলেই নেননি ইংরেজির কোনো ক্লাস। তারপরও হয়েছেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের ইংরেজি ২য় পত্রের প্রধান পরীক্ষক। সাতজন পরীক্ষক রয়েছেন তার তত্ত্বাবধানে। তাদের দায়িত্বও তার কাঁধে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বোর্ডের কাছ থেকে নিয়েছেন আরও ৫০০ উত্তরপত্র। অথচ সেসব উত্তরপত্র নিজে মূল্যায়ন না করে দেখাচ্ছেন অন্যদের দিয়ে। স্কুলের নাইটগার্ড দিয়ে করাচ্ছেন উত্তরপত্রের কাভার পৃষ্ঠার ২য় অংশের কাজ। গ্রামের কাগজের কয়েকদিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব চিত্র।
প্রশিক্ষণ ব্যতীত ব্যক্তিদের দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এসব উত্তরপত্র দেখানোর বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থী নির্বাচনে। প্রধান পরীক্ষক হয়ে নিজেই কীভাবে বিধিবহির্ভূত কাজ করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ কাজটি করছেন যশোরের মিউনিসিপ্যাল প্রিপ্রারেটরি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর খান।
এসএসসির ফর্ম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগের পর এবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে আরও গুরুতর অভিযোগ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ৩১ মে সরেজমিনে মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি স্কুলে যায় গ্রামের কাগজ টিম। শিক্ষকদের রুমে গিয়ে দেখা যায় ওই স্কুলের খন্ডকালীন সহকারী শিক্ষক ইমামুল ইসলাম এসএসসির ইংরেজি ২য় পত্রের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করছেন। অন্যান্য শিক্ষকদের সামনেই তিনি এ কাজ করছিলেন। উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়ে কথা বললে ইমামুল ইসলাম সব কিছুই স্বীকার করেন। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নিজেই তাকে ১০০ উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য চাপিয়ে দিয়েছেন। এর আগেও তাকে দিয়ে এভাবেই মূল্যায়ন করিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, এই কাজের বিনিময়ে তাকে কোনো টাকাও দেয়া হয় না। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ তাই পালন করছেন, তা না হলে সমস্যা।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর খানের কক্ষে যায় গ্রামের কাগজের টিম। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সবকিছু অস্বীকার করেন। সবুর খান বলেন, এ কাজ কখনোই সম্ভব না। এক পর্যায়ে গ্রামের কাগজের কাছে থাকা ইমামুল ইসলামের উত্তরপত্র মূল্যায়নের ভিডিও দেখাতেই চুপসে যান। বলেন, অনেক উত্তরপত্র তাই ইমামুল ইসলামকে কিছু মূল্যায়ন করতে দিয়েছেন। পরীক্ষকদের উত্তরপত্রও তাকে মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। সাথে নিজের জন্য বরাদ্দ উত্তরপত্রও রয়েছে। তাহলে কেন এত উত্তরপত্রের দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরপত্র মূল্যায়নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন নৈশপ্রহরী বকুল হোসেন ও লাভলু। তারা উত্তরপত্রের কাভার পৃষ্ঠার ২য় অংশের কাজ করছেন। যার সত্যতা নিশ্চিত করতে গত ৫ জুন রাতে গ্রামের কাগজের টিম যায় ওই স্কুলে। সেখানে গিয়ে নৈশপ্রহরী লাভলুর সাথে কথা বললে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন। এসব প্রধান শিক্ষক করতে বলেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে ওই স্কুলের অন্তত ১০-১২ জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানায়, প্রধান শিক্ষক সবুর খান তাদের ইংরেজির কোনো ক্লাসই নেন না। মাঝে মাঝে অর্থনীতির ক্লাস নেন।
এ বিষয়ে অন্তত চার-পাঁচজন অভিভাবকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, নিয়মিত ইংরেজি ক্লাস না নেওয়া কিংবা এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকা এমন কাউকে দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়ন যথার্থ হবে না। শিক্ষার্থীরাও সঠিক নম্বর পাবেন না। এক কথায় তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে শঙ্কিত বলে দাবি করেন অভিভাবকেরা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, প্রধান পরীক্ষক আব্দুস সবুরের আওতায় রয়েছে আরও সাতজন পরীক্ষক। তাদের দেখা ২ হাজার ১৪৯ শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব সবুর খানের। এত বড় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে অবহেলা করছেন অবলীলায়। এ বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব বলেন, প্রত্যেক পরীক্ষককেই এ বিষয়ের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেসব নির্দেশনা মেনেই তাদের কাজ করতে হয়। উত্তরপত্র অন্যের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।