
আগামী মাস থেকে আর লাইনে দাঁড়ালেই মিলবে না ওএমএস এর চাল কিংবা আটা। একই ব্যক্তি একাধিক কেন্দ্রে গিয়ে কিনতে পারবেন না। একাধিক কেন্দ্র থেকে ভর্তুকির দামে কিনে গোপনে বাইরে বেশি দামে বিক্রিও করতে পারবেন না। ওএমএস কেন্দ্রে চাল আটা কিনতে গেলেই খাদ্য বিভাগ প্রদত্ত কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। আর এর জন্য আজ থেকে শুরু হচ্ছে ওএমএস এর পাইলট প্রকল্পের কাজ।
আজ থেকে সংগ্রহ করা হবে নিম্ন আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও স্ট্যাম্প সাইজের ছবি। পরীক্ষামূলক দেশের ৪শ’ ওএমএস কেন্দ্রকে এর আওতায় আনা হয়েছে। প্রতি জেলায় কমপক্ষে ৫টি কেন্দ্র হিসেবে প্রাথমিকভাবে যশোর পৌসভার ৫টি কেন্দ্র পাইলটিং কার্যক্রমের আওতায় এসেছে। আগামী ১ জুলাই থেকে প্রতি কেন্দ্রে ২১৩ জন কার্ডধারী এই ওএমএস সুবিধার আতায় আসছে। ফলপ্রসু হলে একে একে দেশের সব কেন্দ্র এর আওতায় আনা হবে। এতে করে ওএমএস সুবিধাভোগীর সংখ্যা সত্যিকার বাড়বে।
এদিকে চলতি মাসে ওএমএস থেকে চাল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে, দেয়া হচ্ছে আটা। টানা এক মাস চাল বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অসন্তোষ চলছে নিম্ন যশোরের আয়ের মানুষের মধ্যে।
খাদ্য বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ওএমএস (ওপেন মাকেটিং সেল, খোলাবাজার) চাল আটা বিক্রি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি নজরে পড়ায় কার্ডের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওএমএসের পণ্য কিনতে ক্রেতাদের ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। আবার এক ব্যক্তি একাধিক কেন্দ্র থেকে চাল আটা কেনায় অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর ওএমএস চাল কার্ডের মাধ্যমে দেয়া হলে লোকজনকে অহেতুক দীর্ঘ ভিড়ের মধ্যে থাকতে হবে না, শৃংখলা ফিরে আসবে। এসব বক্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দিকনির্দেশনা দেন খাদ্য বিভাগকে।
এরপর গত ২৯ মে খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্টিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওএমএস পাইলট প্রকল্পের। ১ জুলাই থেকে কার্ডের মাধ্যমে চাল আটা বিক্রির লক্ষে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সকল প্রস্তুতি স¤পন্ন করতে বলা হয়। আর সে লক্ষে দেশের সকল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের মাধ্যম পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারী ডিলারগণ ১ জুন থেকে প্রচারের কাজ শুরু করেছেন জনপ্রতিনিধি ও মাইাকিংয়ের মাধ্যমে। যশোরের ৫টি ওএমএস কেন্দ্রেও কাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে আটা বিক্রির সাথে সাথে নিম্ম আয়ের ভোক্তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকটি ও স্ট্যাম্প সাইজের ছবি গ্রহণ করা হবে আজ থেকে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৫২টি জেলা সদরের পৌরসভায় ৫টি করে মোট ২৬০টি ওএমএস কেন্দ্র আওতায় রাখা হয়েছে। ঘনবসতি ৪ জেলা ঢাকা, নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় ১০টি করে ৪০টি ওএমএস কেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া দেশের ১০টি সিটিকর্পোরেশনের ১০০টি কেন্দ্রও এই কার্ডের মাধ্যমে চাল আটা বিক্রি করা হবে। যশোর পৌরসভার যে ৫টি ওএমএস কেন্দ্র আওতায় এসেছে সেই ওএমএস ডিলারগন হচ্ছেন ঢাকা রোড পূর্ববারান্দীপাড়ায় আবুল কাশেম, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে রবিউল ইসলাম, খড়কী কবরস্থান এলাকায় রোকন ব্যাপারি, চারখাম্বা মোড়ে তোতা মিয়া ও বেজপাড়া গুলগুল্লা মোড়ে গোলাম মোস্তফা। এই ৫টি ওএমএস কেন্দ্র ঘিরে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন যশো জেলা খাদ্য বিভাগ। ইতিমধ্যে ওই পাঁচ ওএমএস কেন্দ্রে আটা কিনতে আসা লোকজনকে বলে দেয়া হয়েছে, আজ থেকে পরিচয়পত্র উপস্থাপন করলে তবেই আটা বিক্রি করা হবে। বলে দেয়া হয়েছে ভোক্তা সাধারণকে ওএমএস কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি কর্মকর্তার কাছে এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ও ১টি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে ওই ৫টি ওএমএস কেন্দ্রে ১০ জন তদারকি কর্মকর্তা কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া যশোর জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মাঠে নেমে নিজেই কার্যক্রম তদারকি করছেন।
তথ্য মিলেছে, আজ থেকে আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ানো ভোক্তা সাধারণের এনআইডি নিয়ে তার নামসহ এনআইডি একটি বাধাই করা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই দিনগুলোর রেজিস্টার মাস্টার রোল হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। একইসাথে আজ থেকে আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত আটা কিনতে আসা ভোক্তাদের দুই লাইনে করে এনআইডির ফাটো কপি ও ছবি সংগ্রহ করবেন তদারকি অফিসারগণ। এরপর আগামী ১৪ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত আটা কিনতে আসা ভোক্তাদের আইডি কার্ড ও ছবি মেলাবেন আগের ৫ দিনের সাথে। এরপর প্রকৃত নিম্ন আয়ের ভোক্তার চূড়ান্ত তালিকা করা হবে।
এদিকে আগাম ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসে ওএমএম কেন্দ্র থেকে সরকারি ভর্তূতির শুধু আটা বিক্রি করা হচ্ছে। এ মাস জুড়ে শুধু আটাই বিক্রি হবে। কিন্তু মাস জুড় শুধু রুটি খাওয়ার ব্যাপারে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। তারা দাবি করছেন, সকালে অনেকে রুটি খাওয়ায় অভ্যস্ত। কিন্তু বাঙালি হিসেবে দরিদ্র হলেও দুবেলা মোটা চালের ভাতে অভ্যস্ত সবাই। এ কারণে গোটা মাস চাল বন্ধ না রেখে এ সপ্তাহে চাল পরের সপ্তাহে আটা এভাবে ওএমএস কার্যক্রম সাজালে ভাল হয়।
ঘোপ বউ বাজারের রিকসা চালক আলমের স্ত্রী শিরিনা জানান, তিনি গত ৩ মে আটা কিনেছেন। গতকাল গেলেও আটা পেয়েছেন। সারা মাস রুটি খাওয়া যায় না। বাইরে থেকে বাধ্য হয়েই বেশি দামে চাল কিনতে হয়েছে। আটা না দিলেও চাল অবশ্যই থাকা উচিৎ।
এ ব্যাপারে পাইলটিং কার্যক্রমের আওতায় আসা ওএমএস ডিলার বেজপাড়ার গোলাম মোস্তফার ছেলে ইমরান রশীদ গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, তার বাবার ডিলার ব্যবসা তিনিই দেখাশুনা করেন। তার কেন্দ্রটিও পাইলটিং কার্যক্রমের আওতায় এসেছে। যে কারণে কেন্দ্রটি এখন সরব। প্রতিদিন অফিসার আসছেন। আজ থেকে ছবি ও আইডি কার্ড জমা দেয়ার কথা। কিন্তু চলতি মাসে ওএমএস কার্যক্রমে শুধু আটা রাখা হয়েছে। অনেকেই আটার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। প্রতিদিনই সাধারণ ক্রেতাদের দাবি, চাল দেয়া হোক। গরীব মানুষ ওএমএস এর উপর নির্ভরশীল। সারা জুন মাস জুড়ে আটার রুটি খেতে অনিহা সব ক্রেতারই। তাদের কাছে ক্রেতাদের দাবি, চাল চালু করা হোক। কিন্তু এতে ডিলাগণের কোনো হাত নেই। সরকারি নির্দেশনায় তারা চাল পেলে চাল, আর আটা পেলে আটা বিক্রি করছেন।
এদিকে পরীক্ষামূলক পাইলট প্রকল্পের ব্যাপারে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, এই পাইলটিং কার্যক্রম জোরেসোরে এািগয়ে চলেছে যশোরে। যশোরে ৫টি ওএমএস কেন্দ্রের আওতায় আনা হয়েছে। সারাদেশের কেন্দ্র আগামীতে আরো বাড়তে পারে, সে সময় যশোরেও বাড়বে। আজ থেকে ভোটার আইডিকার্ড ও ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে ভোক্তা সাধারণের। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সকল কার্যক্রম সমাপ্ত করা হবে। আগামী ১ জুলাই থেকে কার্ডের মাধ্যমে চাল আটা বিক্রি করার টার্গেট রয়েছে। এতে করে একই ব্যক্তি একাধিক কেন্দ্র থেকে আর চাল আটা কিনতে পারবেন না। আর কিনতে গেলেও ধরা পড়বেন। কেননা জাতীয় সার্ভারে তার কার্ডটি সংযুক্ত করে দেয়া হবে। বিশৃংখলা ও কারসাজি থাকবে না।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন একটি কেন্দ্রে ২১৩ জন কার্ডধারীকে এর আওতায় আনা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দিক নির্দেশনায় এই পাইলটিং কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। তিনিসহ খাদ্য ভিাগ যশোরের সংশ্লিষ্ট অফিসার কর্মচারীগন মাঠে কাজ করছেন। স্বচ্ছতার সাথে এ কাজ এগুচ্ছে।