মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা যশোর কালেক্টরেট স্কুলের পাশের টিউবওয়েল থেকে ড্রাম ভর্তি পানি নিয়ে ফিরছিলেন শফিকুল হাসান ও মরিয়ম দম্পত্তি। বাড়িতে তিনজন অতিথি। ধরে রাখা পানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে পানি নিতে বের হন তারা। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাজলী মুখার্জী। পাঁচ সদস্যের পরিবারের সারাদিনের ব্যবহারের পানি ধরে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। পানি সংকটে কোনো রকমে চলছে গোসলসহ অন্যান্য কাজ।
প্রচণ্ড গরম আর বিদ্যুৎ না থাকায় হাঁসফাঁস অবস্থায় বর্তমানে যশোর শহরের অধিকাংশ পরিবারে চলছে এমন অবস্থা। লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি ব্যহারকারীরা চরম ভোগান্তিতে। লাইনে পানি না থাকায় অনেকে রান্না, গোসলসহ গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারছেন না ঠিকমতো। বালতি-কলস নিয়ে ছুটতে হচ্ছে টিউবওয়েলের দিকে। এদিকে, এখনো অনেক টিউবওয়েলে লেয়ার লসের কারণে কাটেনি পানি সংকট। যেসব পরিবার শুধু সাপ্লাইয়ের পানির উপর নির্ভরশীল শুধু তারা বিপাকে না, একই অবস্থা ব্যক্তিগত মোটর ব্যবহারকারীদেরও।
যশোর পৌরসভার প্রায় সব এলাকার সাপ্লাইয়ের পানির ফোর্স অনেক কম বলে তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
খড়কি এলাকার একটি ছাত্রাবাসের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, তাদের ছাত্রাবাসে ১২ জন সদস্য। যেটুকু সময় পানি পাওয়া যাচ্ছে তা পরিমাণে কম। লোডশেডিংয়ের কারণে সারাদিন পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দিনে পাঁচ-সাতবার লোডশেডিং। গরমে খুব খারাপ অবস্থা। এর মধ্যে যদি পানি না থাকে তাহলে এর চেয়ে বড় বিপদ আর হয় না। পৌরসভার পানি সাপ্লাইয়ের সময় আরও একটু বৃদ্ধি করলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে বলে জানান তিনি।
বারান্দিপাড়ার এক বাড়ির মালিক জানান, পানি সঞ্চয়ের জন্য ৫০০ লিটারের ট্যাংকি থাকলেও তাতে সারাদিনে চার বালতি পানিও উঠছে না। পানি সংকটে গোসল এমনকি বাথরুম করার সময়ও চিন্তা করতে হচ্ছে। ভাড়াটিয়াদের তাগিদে পাইপ ওয়াশ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত পৌরসভা পানি সরবরাহ করলেও লোডশেডিংয়ের কারণে অর্ধেকের বেশি সময় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরে বর্তমানে ১০ হাজারেরও বেশি পানির গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের দৈনিক পানির চাহিদা ২২ লাখ গ্যালনের বেশি। ২৭ টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে সাপ্লাইয়ের পানি দেয়া হয়। এছাড়া, ৫০০ তারা পাম্প এবং ৪-৫ হাজার টিউবওয়েল ও সাবমার্সিবল রয়েছে। যদিও এর মধ্যে সচল কতটি তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২৭ টি গভীর নলকূপ একসাথে অন এবং অফ করা হয়। এগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ রয়েছে। যে এলাকায় বিদ্যুৎ থাকছে না সেই পাম্প বন্ধ হলে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। আর এ কারণে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
পানি সংকট চলছে স্বীকার করে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহম্মেদ বলেন, এতে তাদের কিছু করার নেই। তারপরও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি পৌর মেয়রকে জানানো হয়েছে। পাম্প চালু রাখার সময় বৃদ্ধির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেকেই অপ্রয়োজনে পানির অপব্যবহার করেন। তাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।