আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে, শুক্রবারে পা দেওয়ার আগমুহূর্তে এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সময় রাত ১২টার কিছু আগে আকাশে জোরালো বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে কাবুল শহর।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম পাকিস্তান অবজারভার জানিয়েছে, অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নির্ভুল এ হামলায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি)-এর প্রধান নূর ওয়ালি মেসুদ নিহত হয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। তার সঙ্গে ক্বারী সাইফুল্লাহ মেসুদসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ সহযোগীও প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সাইফুল্লাহ মেসুদকে টিটিপির পরবর্তী প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কাবুল শহরের এক ব্যস্ত সড়কে চলার সময় নূর ওয়ালি মেসুদের গাড়ি লক্ষ্য করে এ বিমান হামলা চালানো হয়। এতে তার গাড়িটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এখনো তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি, তবে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় মেসুদ প্রকাশ্যে গাড়িতে যাচ্ছিলেন। পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন টিটিপির প্রধান হিসেবে তিনি ছিলেন দেশটির অন্যতম ওয়ান্টেড ব্যক্তি।

এ হামলার পর টিটিপি প্রতিশোধমূলক হামলায় যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আফগান সীমান্তের কাছাকাছি খাইবার পাখতুনখাওয়ার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় টিটিপির ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। কয়েকদিন আগেই এ অঞ্চলে টিটিপির হামলায় ১২ পাকিস্তানি সেনা নিহত হন। তার আগেও পাক সেনারা অভিযানে কয়েক ডজন টিটিপি যোদ্ধাকে হত্যা করেছিল।

বৃহস্পতিবারই পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক বক্তব্যে বলেন, “অনেক হয়েছে। আমরা আর এমন হামলা সহ্য করব না।” তার এ হুঁশিয়ারির কিছু ঘণ্টার মধ্যেই কাবুলে বিমান হামলার ঘটনা ঘটে।

কাবুলের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা দুটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এরপর আকাশে যুদ্ধবিমান ঘুরতে দেখা যায়, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, আরও হামলা হতে পারে।

পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা (ডিজিএফআই)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী শুক্রবার সকালে পেশোয়ার কর্পস সদরদপ্তরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানা গেছে। সেখানে কাবুল হামলার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

আফগান তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বিস্ফোরণ ও সম্ভাব্য বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি দাবি করেন, বিস্ফোরণের মাত্রা ছোট ছিল এবং সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। অন্যদিকে স্থানীয়রা বলছেন, হামলাটি ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী ও ভয়াবহ।

সূত্র: পাকিস্তান অবজারভার