
আমরা ২০২১ এ পদার্পণ করেছি। নতুন বছর পৃথিবীর জন্য শুভ হোক, প্রতিটি মানুষ নির্ভয় হোক। গত একবছরের বিষময় অভিজ্ঞতা ভুলে সারা পৃথিবীর মানুষ নিশ্চিন্ত জীবনে ফিরে আসুক তেমনটাই শুভকামনা। ২০২০ সাল নানা কারণে আমাদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকতে পারতো-- আমরা এবছর পালন করেছি বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী, পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হয়েছে, এমনি আরো অসংখ্য অর্জন 'কোভিড উনিশ করোনা ভাইরাস' এর তাণ্ডব লীলায় পরিপূর্ণতা পায়নি। ব্যহত হয়েছে সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। মুখ থুবড়ে পড়েছে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা।
২০২০ সাল আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে চরম ভয়, উৎকণ্ঠা আর দুঃসংবাদের মধ্য দিয়ে, যা এখনো আমাদের তাড়া করে ফিরছে। স্বজন হারানোর বেদনা, অনিশ্চিত জীবনের দীর্ঘশ্বাস আর কর্মহীন মানুষের আহাজারি আমাদের নতুন এক পরিস্থিতির সম্মুখে দাঁড় করিয়েছে। এই উৎকণ্ঠা শুধু আমাদের নয়, বিশ্ব ব্যাপি মানুষ বিগত এই বছরের দুঃসহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি জীবদ্দশায় কখনো ভুলতে পারবে না। পৃথিবীতে সম্পুর্ণ নতুন এই মহামারীর আবির্ভাব কেড়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ। অসংখ্য দেশবরেণ্য গুণী মানুষকে বিদায় নিতে হয়েছে প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে।
অদৃশ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্ববাসী যেন নাজেহাল, নাস্তানাবুদ। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এই বিশ্বের মানুষ নিশ্চয়ই শান্তিময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে। মানুষ তার জন্ম থেকেই সংগ্রাম করে টিকে থেকেছে। সংগ্রাম করেই আজকের এই সভ্যতায় পৌঁছেছে। তাই মানুষকে করোনা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই জয়ী হতে হবে। আশা করি আমরা তা নিশ্চয়ই পারবো। ইতিমধ্যে করোনার প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে। কতদিনে তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌছবে তা অবশ্য আমাদের অজানা তবুও আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। এই প্রতিষেধক আমাদেরও করোনাকে প্রতিহত করতে সাহস যোগাবে।
গত একবছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের শিশুরা। এক নিরানন্দ জীবনের মধ্যে আটকে আছে তারা। স্কুলে যাওয়া নেই, পড়াশোনার প্রতিযোগিতা নেই। নতুন বই,নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দও নেই, নতুন বই যদিও পাচ্ছে কিন্তু সেই নতুনের কোন উদযাপন নেই। সাংস্কৃতিক কোন কর্মকাণ্ড বা বিনোদনের ব্যবস্থাও নেই। সময়ের সবথেকে অনিশ্চিত লক্ষ্য ও পরিকল্পনাহীনতায় ভুগছে তারা এবং তাদের অভিভাবকগণ। করোনা পরিস্থিতিকে এড়িয়ে ধীরে ধীরে অনেক কিছু চলমান হলেও শিক্ষা কার্যক্রমকে এখনো মূলধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। শিক্ষা কার্যক্রমকে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কিছুটা সচল রাখার চেষ্টা করা হলেও তা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন বছরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কোমলমতি শিশুদের আপন ভুবনে প্রাণোচ্ছল পরিবেশ ফিরিয়ে দেয়া যাবে কিনা সেটাই আগামী সময় দেখার বিষয়।
২০২০ সাল আমাদের জনজীবনে তৈরি করেছে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কে বেড়েছে সংকোচ, বেড়েছে দুরত্ব। মানুষের বিপদে বা আত্মীয় পরিজনের অসুস্থতায়ও মানুষ দেখতে যেতে সংকোচ বোধ করে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলে এইসময়ে সারাদেশে অসহনীয় আকারে বেড়েছে খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন। কর্মহীন, অভাবগ্রস্থ মানুষের সংসারে অসহিষ্ণুতা ঢুকে পড়া খুবই স্বাভাবিক। সেখানে আমাদের সমাজের মানুষ তো আরো এককাটি উপরে। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো সকল দোষের মূলে নারীকে দায়ী করা সাধারণ সমাজে নিত্য সমাচার। একশ্রেণীর মানুষ সবসময়ই বেপরোয়া। সেই নিরিখেই দেখা যায় বিগত বছরে ধর্ষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে অস্বাভাবিক হারে। করোনার ভয় রোধ করতে পারেনি লুটপাট দুর্নীতির মহাবাণিজ্য । আমরা দেখেছি করোনা ভাইরাস এর পরীক্ষা নিয়েও লুটপাট, দুর্নীতি। যেখানে করোনার আক্রমণে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন নিয়েও দুর্নীতি হতে পারে সেখানে অন্য সব ঘটনা তো নস্যি। দাঁতে দাঁত চেপে মানুষ যেন এই বছরটাকে বিদায় দেয়ার অপেক্ষায় ছিল। নতুন বছর মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে, দূর হবে সব ভয়, ভীতি, অন্ধকার।
বিপর্যয় যত ভয়াবহই হোক না কেন বিপরীতে মঙ্গল কিছু রেখে যায়, তা যত ক্ষুদ্রই হোক। আমরা সেই অর্জনটুকুই খুঁজে নিয়ে আগামীর লক্ষ্যে এগিয়ে যাব এমনটাই আশা করি। এই নতুন বছরে আমরা দেখতে চাই সুন্দর, নির্মল একটা পৃথিবী। দেখতে চাই করোনা ভাইরাস পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে, মানুষ লোভ-লালসা থেকে সরে এসেছে। লজ্জাজনক দুর্নীতি আর হচ্ছে না। একটাও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে না, হবে না কোন নির্যাতন। এমন একটা দেশ আশা করা কি খুব অন্যায়? আমরাই পারি আমাদের যা আছে তাই নিয়ে সুন্দর, সমৃদ্ধ একটা দেশ গড়তে। দেশের মানুষ ভালো থাকবে, আমরা সবাই ভালো থাকবো। ২০২১ সাল পৃথিবীতে শান্তির বারতা বয়ে আনুক।
যা কিছু সঞ্চয়--- আনন্দ, সুখময়--
তাই দিয়ে বরণ করি নতুন বছর!
ভুলে যাই বেদনা, হারানো যাতনা,
সুখ-স্মৃতিচারণে ভরা থাক অন্তর।
এসো নতুন রূপে- মঙ্গলালোকে
আলোকিত করো-- করো সুন্দর।
শুভ সময়ের শুভকামনা ২০২১