Published : Friday, 15 January, 2021 at 10:19 PM, Count : 234
শুক্রবারের শীতের সকাল। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের হাজরাইলে মুক্তেশ্বরী নদীর পাড়ে ছোট্ট জমায়েত। দূর থেকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন অনেকেই। খানিক পরেই এখানে লটারি অনুষ্ঠিত হবে। তাদের প্রতীক্ষা সেই ভাগ্য পরীক্ষার জন্যই! যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের হাজরাইলে ভূমিহীন, গৃহহীন ৫০টি পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর অধীনে নির্মাণ করা বাসগৃহ বণ্টনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আয়োজন করা হয় এই লটারির। উৎসবমুখর পরিবেশে স্বচ্ছ একটি পাত্রের মধ্য থেকে এক এক করে সুবিধাভোগীরা ঘর বরাদ্ধের টোকেন তোলেন। স্বচ্ছ পাত্র থেকে উঠানো টোকেন নম্বরটিই তার পাওয়া ঘরের নম্বর। এক একটি টোকেন ওঠার সাথে যুক্ত হচ্ছে হর্ষধ্বনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই নান্দনিক আয়োজনে সুখানুভূতির আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সুবিধাভোগীরা। তাদেরই একজন শ্যামা রানি দাস। যার ভাগ্যে জোটে এই প্রকল্পের প্রথম ঘরটি। মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মহিতোষ দাস। বাজারে জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জমি জিরেত বলতে কিছুই নেই। উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের জিতেন দাসের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় শ্যামা রানি দাসকে বিয়ে করে নিজের সংসারে আনেন। সেও ১৪ বছর আগে। আর দশটা মেয়ের মতো অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি এসেছিলেন তিনি। কিন্তু বাড়ি বলতে তাদের নিজের কিছু ছিল না। মহিতোষ দাসের কাকা গোকুল দাস যশোর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তিনি যশোর শহরে অবস্থান করায় তার পরিত্যক্ত ঘরটিতে ছিল শ্যামা রানির সংসার। সেই শুরু থেকেই শ্যামা রানির দু’চোখে ছিল কষ্টের নোনাজল। ভবদহের জলবেস্টিত বসত ভিটেয় নিত্য দুঃখের জলাবদ্ধতা। ১৩ বছরের মেয়ে অন্তরা দাস, ১০ বছরের পূর্ণিমা দাস আর তিন বছরের ছেলে দেবদাসকে নিয়ে দিন আনা দিন খাওয়া সংসার। করোনার কারণে আয় উপার্জনে ভাটা পড়ে। মহিতোষ দাস কাজের সন্ধানে চলে যান ঢাকায়। বর্তমানে গাবতলী মন্দিরের সামনে নিজ পেশায় কর্মরত। মাঝেমধ্যে বাড়ি এসে ঘুরে যান তিনি। ভূমিহীন-গৃহহীন এই পরিবারটি হতে চলেছেন দু’শতক জমির ওপর পাকা ঘরের মালিক। মুজিববর্ষে মণিরামপুরে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায়, ও দরিদ্র পরিবারের জন্য সরকারি খরচে নির্মাণ করা হচ্ছে দুশ’ ৬২টি পাকা ঘর।
শুক্রবার হাজরাইলে মুক্তেশ্বরী নদীর পাড়ের আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের লটারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম আবু আবদুল্লাহ বায়েজিদ,হরিদাসকাটি ইউপি চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে, ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন, মুক্তেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের ইংরেজির প্রভাষক গৌতম সরকারসহ প্রকল্পের সুফলভোগীরা।
ঘর পাওয়া নিয়ে ঠেলাঠেলি ও অনিয়ম দূর করতে আয়োজন করা হয় লটারির। এ কারণে এই প্রক্রিয়াকে অনন্য বলে অভিহিত করেছেন সুফলভোগীরা। লটারির মাধ্যমে ঘর বরাদ্দে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই উদ্যোগ হতে পারে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত-বলছেন সুধিজনেরা।