
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ৫০ হাজার ভোটে মুখ্যমন্ত্রীকে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা।
সোমবার নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। মমতার গড় দক্ষিণ কলকাতায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন সদ্য দল বদলানো নেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রাম যাঁর খাসতালুক হিসেবে পরিচিত।
দুই দশকেরও বেশি সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামে তিনিই ছিলেন মমতার মূল সেনাপতি। সেই শুভেন্দুই এখন বিজেপিতে। সোমবার নন্দীগ্রামে সভা করতে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, নন্দীগ্রাম আসনে তিনি নিজেই লড়বেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক দক্ষিণ কলকাতায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করছেন। বিজেপি মমতাকে অন্তত ৫০ হাজার ভোটে হারাবে। না হলে শুভেন্দু রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে জন্ম৷ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রতীক জোড়া ঘাসফুল ও স্লোগান ‘মা-মাটি-মানুষ’৷ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে এককভাবে ১৮৪টি আসন পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিধানসভার ২২৭ টি আসন নিয়ে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে৷ ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে ২৯৪টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২১১টি আসন পেয়ে আবার ক্ষমতায়৷
এ দিন দক্ষিণ কলকাতার সভায় শুভেন্দুর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং একাধিক রাজ্য নেতা। শুভেন্দু সেখানে বলেন, 'নন্দীগ্রামে মাননীয়াকে যদি হাফ লাখ ভোটে হারাতে না পারি, রাজনীতি ছেড়ে দেব।' নন্দীগ্রামে শুভেন্দুই প্রার্থী হবেন কি না, তা অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয়। শুভেন্দু বিকেলের সভায় বলেছিলেন, বিজেপি একটি রেজিমেন্টেড দল। ফলে নন্দীগ্রামে কে দাঁড়াবেন, তা দল স্থির করবে। তবে যিনিই পদ্মফুলের প্রতীকে দাঁড়াবেন, তিনিই মমতাকে ৫০ হাজার ভোটে হারাবেন। এটাই তাঁর চ্যালেঞ্জ।
রাতে অবশ্য নন্দীগ্রামে নিজের দাঁড়ানোর বিষয়টি খানিকটা স্পষ্ট করে দেন শুভেন্দু। টুইটে তিনি লিখেছেন, 'স্বাগতম দিদি। ২১ বছর সঙ্গে ছিলাম। এবার নন্দীগ্রামে সামনা-সামনি দেখা হবে।' বিজেপি এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''প্রার্থী বাছার সময় এখনো আসেনি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্ব আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করবেন। এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার অর্থ হয় না।'' তবে বিজেপির অন্দরের খবর, নন্দীগ্রাম থেকে শুভেন্দুই যে প্রার্থী হবেন, তা মোটের উপর নিশ্চিত। মমতার বক্তৃতার পরে শুভেন্দু যদি সেখানে না দাঁড়ান, তাহলে জনসাধারণের কাছে খুব ভালো বার্তা যাবে না। ফলে শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নন্দীগ্রামেই দাঁড়াতে হবে।
নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর ক্ষমতা বিপুল। বস্তুত, গোটা পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকারী পরিবারের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সকলেরই জানা। অন্য যে কেউ প্রার্থী হলে নন্দীগ্রাম জয় শুভেন্দুর পক্ষে খুব কঠিন হতো না। কিন্তু স্বয়ং মুখঅযমন্ত্রী যদি সেখানে প্রার্থী হন, তাহলে নিঃসন্দেহে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ফের নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে চলে এলো। এ কথা বলাই যায় যে, নন্দীগ্রামে যারাই জিতবে, রাজ্যে তারাই সরকার গঠন করবে।