
যশোর পৌরসভার নির্বাচন আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ সংক্রান্তে ১৯ জানুয়ারি তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এ তফশিল কিংবা নির্বাচন হওয়া- না হওয়া নিয়ে যতোটা না আলোচনা, তার চেয়েও বেশী আলোচনা চলছে নৌকার মালিকানা নিয়ে। ঐতিহ্যবাহী এ পৌরসভায় কে পাচ্ছেন নৌকা?
যশোর পৌরসভায় বিএনপির কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে সরব আলোচনা না চললেও শুধু পৌর এলাকায় নয়, গ্রামাঞ্চলেও তুমুল আলোচনা হচ্ছে, কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন? বর্তমান নির্বাচিত মেয়রই মনোনয়ন পাবেন, নাকি সুযোগ পাবেন অন্য কেউ? এ আলোচনায় এ পর্যন্ত সাত জন নেতার নাম মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। আগামীতে এ তালিকা আরও বাড়তে পারে বলে মহল বিশেষ আভাস দিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, যশোর পৌরসভার নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন আগামী ২ ফেব্রুয়ারি, বাছাই ৪ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ১১ ফেব্রুয়ারি এবং ১২ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। পঞ্চম ধাপের এ নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। স্থানীয়ভাবে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, যশোর পৌরসভায় পুরোনো সীমানাতেই ভোট গ্রহণ করা হবে। কাজেই এখানে গেজেটে প্রকাশিত নতুন করে একোয়ার করা এলাকায় ভোট গ্রহণ না হওয়ায় কোনো জটিলতা থাকছে না। ফলে নির্বাচন পেছানোরও কোনো আশংকা এখানে নেই। এখন কে কোন দলের প্রার্থী হবেন সেটাই দেখার বিষয়। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের যারা প্রার্থী হতে চান, তাদের কেউ শহরে পোষ্টার লাগিয়ে, কেউ প্যানা ঝুলিয়ে, আবার কেউ সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের প্রার্থীতা জানান দিয়েছেন। আবার কারো প্রকাশ্য প্রচারণা চোখে না পড়লেও তাদের নাম শোনা যাচ্ছে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মুখে।
যশোর পৌরসভার সর্বশেষ ভোট অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। সে নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। তিনি শুধু পরিচ্ছন্ন নগরী কিংবা আলোকিত শহরই উপহার দেননি, মোটা দাগে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন তিনি করেছেন। সে হিসেবে তিনি আবারও নৌকার দাবিদার। তিনি আশা করছেন, যেসব উন্নয়ন কাজ এখনো চলছে, সেগুলো সফলভাবে শেষ করতেই তাকে আবারও মেয়র নির্বাচিত হওয়া দরকার। আর তার জন্য দরকার দলীয় মনোনয়ন।
যশোর জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সবুর হেলাল আসন্ন পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চান। ইতিমধ্যে তার সমর্থনে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার সাটানো হয়েছে। তার আপন দু’ভাই এবং তিনিসহ একই পরিবারে রয়েছেন তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ন্যাপ নেতা কাজী আব্দুস শহীদ লাল তার আপন বড় ভাই। তিনি জীবনের দীর্ঘসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত রয়েছেন। তিনি আশা করেন, এসব দিক বিবেচনায় এনে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মূল্যায়ন করবেন, তাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন।
যশোর পৌরসভার তিন নম্বর ঘোপ ওয়ার্ডের তিনবারের সফল কাউন্সিলর মোকছিমুল বারী অপু এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান। তার দাবি, তিনি দীর্ঘদিনই কাউন্সিলর পদে দায়িত্ব পালন করলেন। এবার যশোর পৌরবাসীকে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার সাথে সেবা করতে চান। এজন্যই তিনি ও তার সমর্থকরা দলীয় মনোনয়ন দাবি করছেন।
হুমায়ূন কবীর কবু জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক। তিনি যশোর চেম্বারের নেতাও। তিনি সবার কাছে সমাজ সেবক, দানশীল এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি যশোরবাসীকে সেবার মানসিকতা নিয়েই পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চান।
যশোরের ছাত্র এবং যুব রাজনীতিতে জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবে সবার কাছে পরিচিত মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী। তিনি প্রায় তিন দশক ছাত্র ও যুবলীগের রাজনীতিতে শীর্ষ পদগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে কাউন্সিলে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি আসন্ন নির্বাচনে যশোর পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন দাবি করেছেন। তিনি ইতিপূর্বেও এ পদে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি আশা করছেন, তার রাজনৈতিক জীবন বিবেচনা করে দল তাকে সঠিক মূল্যায়ন করবে।
যশোর এম এম কলেজ এবং জেলা ছাত্রলীগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ছাড়াও হামলা ও নির্যাতনের শিকার আসাদুজামান মিঠু বর্তমানে জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব কৃতিত্বের সাথে পালন করা ছাড়াও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। যশোরে তিনি যত বড় ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি একজন সমাজ সেবকও বটে। তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার সাথে এগিয়ে নিতেই যশোর পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দাবি করেছেন।
যশোর জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী তার দায়িত্ব পালনকালে যশোরবাসীর কাছে অত্যান্ত জনপ্রিয় নারী নেত্রী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। করোনাকালে অনেক রাজনীতিক যখন ঘরবন্দি ছিলেন, তখন সোনালী মানুষের দোরে দোরে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। যা অনেকের কাছেই ছিল ইতিবাচক। তিনি তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়নের নির্বাচিত মেম্বর থেকে শুরু করে উপজেলা ভাইস চেয়রম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। এবার যশোর পৌরসভায় প্রথমবারের মত নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় তিনি যশোর পৌরসভায় দলীয় মনোনয়ন দাবি করেছেন।
এখন যশোরবাসীর দেখার বিষয়, কে হবেন আসন্ন পৌর নির্বাচনে নৌকার মাঝি? দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যেই মম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো জানিয়েছে।