
উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে যশোর, নড়াইল ও মাগুরা জেলায় ভয়াবহ প্রতারণা করা হয়েছে। উচ্চ বেতন ভাতা দেয়ার নাম করে করা হয়েছে নিয়োগ প্রতারণা। ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায় পদ বিক্রি করে প্রায় কোটি টাকা আদায় করে লাপাত্তা হয়েছে উদয়নের অসাধু চক্রটি।
এদিকে জামানত দিয়ে ৫ শতাধিক বেকার যুবক এখন পথে পথে ঘুরছেন। এছাড়া তিন জেলায় গ্রামে গ্রামে পরিবার কেন্দ্রিক গাছ জরিপ প্রতারণার শিকার হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ্। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রতারক চক্রকে আটক ও টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে তথ্য মিলেছে, ২০২০ সালের প্রথম দিকে উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতি (ইউএসকেএস) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে অফিস নেয়া হয় যশোর, নড়াইল ও মাগুরা জেলায়। বায়ু মন্ডলে কার্বণহ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ বেইজ লাইন সার্ভে করার কাজ শুরু করে। নড়াইলের বাসিন্দা গোলাম আকবর নামে এক ব্যক্তি খুলনা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে একটি প্রতারক চক্রকে সাথে নিয়ে ৩ জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে জামানত নিয়ে এরিয়া ম্যানেজার, শাখা ম্যানেজার, মাঠ কর্মী ও মনগড়া আরো কয়েকটি পদে নিয়োগের নামে ৩ জেলা থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। যশোর শিক্ষাবোর্ড এলাকায় নেয়া হয় যশোর অফিস। ঢাকার মতিঝিল দিলকুশা এলাকায় উদয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বলে প্রচার করে গোলাম আকবর প্রশাসনিক কর্মকতা সাইফুল ইসলাম, সিইও জাহিদুর রহমান খানের নাম ভাঙিয়ে অর্থ আদায় শুরু করেন। যশোর, মাগুরা ও নড়াইল এলাকার সহজ সরল বেকার যুবকেরা প্রতারাণায় পড়ে বাড়ির খুঁটিনাটি বিক্রি করে জামানতের নামে ওই প্রতারক চক্রের হাতে টাকা তুলে দেন। এরপর ৫ শতাধিক কর্মীকে তিন জেলার গ্রামে গ্রামে গাছ জরিপের কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়, যাতে তারা বুঝতে পারে তারা চাকরি করছেন।
এদের প্রত্যেককে ১০ হাজার থেকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেয়ার প্রলোভন দেখান। কারো কারো ২২ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেয়া হবে মর্মে নিয়োগ পত্রও দেয়া হয়। চাকরি পেয়েছে ভেবে যশোর, নড়াইল ও মাগুরায় এসব বেকার গ্রামে গ্রামে ছুটে কাজ শুরু করেন। উদয়নের ফরম হাতে নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিবারে পরিবারে ছুটে গাছ গুনতে থাকেন।
কিন্তু ৩ থেকে ৪ মাস হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেও তারা বেতন ভাতার মুখ চোখে দেখেননি। এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের সাথে তারা প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। অনেককে উদয়নের নামে অনেক প্রতিশ্রুতিও দিয়ে আসেন কর্মীরা। অথচ সবই ছিল ভুয়া। ৪ মাসে তারা বেতন পাননি, আর তাদের দেয়া জামানতের টাকাও পাননি। ৩ জেলার অফিসে এখন তালা ঝুলছে। অফিসার সেজে বসা চক্রটি এখন আত্মগোপনে। এখন তারা ফোন ধরছেন না। আবার কারো ফোন বন্ধ। যশোরের জেলা ব্যবস্থাপক পদে চাকরি পাওয়া রুহুল কুদ্দুসসহ সদর উপজেলার শতাধিক যুবক প্রতারণার শিকার। জেলা ব্যাবস্থাপক নিজেই ২০ হাজার টাকা দিয়ে পদ পান। তিনিসহ শ’ শ’ বেকার জামানত ও বেতন না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে চলেছেন। এখন তারা মিডিয়ার কাছেও যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে যশোরের এরিয়া ম্যানেজার পদ পাওয়া রাজু শেখ, ফতেপুরে শাখা ব্যবস্থাপক মোতালেব হোসেন, কচুয়ার শাখা ব্যবস্থাপক জাহিদুর রহমান, রিয়াদ হোসেন, নরেন্দ্রপুরের আল আমিন, বস্ুিন্দয়ার আল মামুন, মাঠকর্মী বিথি, জুথি, জোহরা রেবেকা. খাদিজা, আসমা, বিজয় সমিরণসহ কমপক্ষে ৪০ জন গ্রামের কাগজের এ প্রতি্েবদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তারা প্রতারণার শিকার। তাদের পথে বসিয়েছেন বিভাগীয় ব্যবস্থাপক দাবি করা আলোচিত প্রতারক গোলাম আকবর। তারা ওই গোলাম আকবরের হাতে টাকা গুনে দিয়েছিলেন জামানত হিসেবে। তাদের পদ দিয়ে কাজ করিয়ে বেতন দেয়নি। উল্টো তাদের টাকা আত্মসাৎ করেছে। তিন জেলায় ৫ শতাধিক বেকার যুবক যুবতী ওই উদয়ন চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ অঞ্চল থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়েছে ওই চক্রটি। এ ব্যাপারে তারা সরকারের উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত খুলনা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক দাবি করা গোলাম আকবর জানিয়েছেন, তার হাতে কেউ টাকা দেননি। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। অন্য কেউ টাকা নিতে পারে। উদয়ন প্রতারণা করেনি। করোনার কারণে অফিস গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। দ্রুতই কার্যক্রম শুরু হবে। অকারণে তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা অফিসে কথা হচ্ছে, বেতন ও জামানতের টাকা দেয়া হবে।
এদিকে উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পরিচালক সাইফুল ইসলাম এক নোটিশে জানিয়েছেন, গোলাম আকবর মাগুরা, যশোর ও নড়াইলে প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে কারণে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গেলাম আকবর অনেক অনৈতিক কর্মকান্ড করেছেন। তদন্ত করে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে, যশোরের জেলা ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রুহুল কদ্দুুস গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও প্রতারণার শিকার। বিভাগীয় ব্যবস্থাপক গোলাম আকবর এজকন প্রতারক। ৩ জেলায় তিনি প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে এখন পালিয়েছেন। যশোরের শ’শ’ যুবক ধরাশায়ী হয়েছেন প্রতারণার জালে। আর অফিস গুটিয়ে সটকে পড়েছে ওই চক্রটি। যশোরে কর্মীদের নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কাছে অভিযোগও করেছেন। গোলাম আকবর এখন পলাতক রয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের উপর মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।