
কিছু বিষয় ঘুরে ফিরে বার বার লেখার বিষয় হয়ে ওঠে, অনেক সময় মনে হয় এই বিষয়ে অনেক লেখা হয়েছে আর লিখবো না। কিন্তু কালের চক্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে আর মনের অজান্তেই সেগুলো লেখার মাধ্যম হয়ে ওঠে। বিষয় গুলো সুখকর যতটুকু তার চেয়ে অনেক বেশি মর্মবেদনার, যন্ত্রণাদায়ক। করোনা ভাইরাস পৃথিবীতে আঘাত হানার পর মানুষের জীবনে যে তোলপাড় হয়ে গেছে অসংখ্যবার লেখার ভিতর তা উঠে এসেছে। এই ভাইরাসের কারণে সামাজিক জনজীবনে বা শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নানাপ্রকার পরিবর্তন ও টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে সেটাও অনেক সময় লেখার বিষয় হয়ে উঠেছে। গত একবছরে যে অসংখ্য ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণজনিত হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে, প্রতিবারই কিছু না কিছু লিখেছি আর ভেবেছি এই যেন শেষ হয়। আর যেন একটাও ধর্ষণের মতো ঘটনা না ঘটে। আর কখনো ধর্ষণের মতো ঘটনা যেন নিয়ে লিখতে না হয়। ফুলের মত নিষ্পাপ শিশুরা যেন এমন পাশবিকতার শিকার না হয়।
সেই সাথে পাল্লা দিয়ে তেমনি চমকে ওঠার মতো সংখ্যায় বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। বার বার লিখি আর ভাবি আর যেন লিখতে না হয়। হয়তো পরের দিনই শুনি আরো বড় কোন দুর্ঘটনার খবর। অকালমৃত্যুতে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ, কত প্রিয়জন। রাস্তায় যেহেতু কর্মক্ষম মানুষের চলাচল বেশি থাকে তাই দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটে সংসারের গুরুত্বপূর্ণ মানুষটির। অপূরণীয় ক্ষতিই শুধু না তছনছ হয়ে যায় গোটা পরিবার। সম্প্রতি কিছুদিন একটা থেকে আরেকটা যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে তার অপূরণীয় ক্ষতি লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। বারোবাজারে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় একসাথে নিভে গেল বারোটি তরতাজা প্রাণ। যার মধ্যে ছয়জনই যশোর এম এম কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র। এতগুলো পরিবারের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিমেষেই ধুলোয় মিশে গেল।
ধর্ষণ প্রসঙ্গে যদি লিখি গত বছর করোনা কালীন দুঃসময়ের মধ্যেও মারাত্মক সংখ্যায় নারী, শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এমনকি ছেলে শিশুরাও সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েনি। নতুন বছর প্রতিবারের মতোই আশা করেছিলাম মানুষের বোধের উদয় হবে, আর একটাও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু বিবেকের মুখে চপেটাঘাত করে বছরের শুরুতেই ধর্ষণের শিকার হয়ে বলি হতে হলো আনুস্কা, অঙ্কিতার মতো নিষ্পাপ কন্যাদের। বিগত বছর গুলোর বিভৎসতায় সারাদেশের মানুষের দাবি ছিল ধর্ষণের দ্রুত বিচার করতে হবে এবং শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। মৃত্যুদণ্ড আইন গৃহীত হয়েছে কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতা বা পরিবেশের কারণে ধর্ষণ নির্মূল হবে এমনটা আমরা আশা করতে সাহস পাই না। শতভাগ মানুষের বিবেকবোধ কবে জাগ্রত হবে সেদিন আমরা ধর্ষণ মুক্ত জাতি হিসাবে বিবেক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবো।
শুধু তাই না,সমাজের নানা অসংগতি, অনিয়ম ক্রমাগত বাড়ছে বৈ কমছে না। স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষের নৈতিক অবক্ষয় যেন চরমে এসে ঠেকেছে। নীতিবোধসম্পন্ন, আদর্শবান মানুষেরা যেন স্বপ্ন দেখতেও ভয় পান।
কয়েক দিন আগে এক শ্রদ্ধেয় দাদা আমাকে ফোন করে বললেন, রিনি আমি আজ অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেছি। বাস্তবে এধরণের একটা ঘটনার কথা শুনেছিলাম। আজ স্বপ্নে তৎস্বদৃশ্য একটা ঘটনা দেখে মনে হলো তোমাকে বলি,তুমি তো লেখালেখি করো, কোন সময় তুমি হয়তো গল্পটা লিখতে পারবে। গল্পটা এমন 'এক ব্যক্তির একখণ্ড জমি আছে। তার অনেক দিনের স্বপ্ন সে ঐ জমিতে একখানা দোতলা বাড়ি তৈরি করবে। সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মোটামুটি একখানা দোতলা বাড়ি তৈরি করা যাবে। অনেক হিসাবকিতাব করে বাড়ি তৈরির প্রথম উপকরণ হিসাবে ঐ ব্যক্তি চারখানা বাঁশ কিনেছে। দেশের দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা ঐ ব্যক্তিকে আটক করে ফেললো। একজন সাধারণ মানুষ হয়ে দোতলা বাড়ি করার স্বপ্ন দেখে কি করে! প্রমাণ স্বরূপ চারখানা বাঁশ জব্দ করে এবং ঐ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।'
স্বপ্ন তো স্বপ্নই, এখানে হয়তো বাস্তবতা নেই তবে এমন ঘটনা যে একেবারেই ঘটে না তেমনও তো নয়। পুকুর পর্যন্ত চুরি করে পকেটে পুরে হাপিস করে দেয়ার ক্ষমতা যে আমরা রাখি সেই প্রমাণ তো বহুবার পেয়েছে এদেশের মানুষ। অথচ রুটি চোর শাস্তি পায়। জেলখানা গুলোতে যে ঠাসাঠাসি, গাদাগাদি ভীড় তার কতভাগ মানুষ দুর্নীতি, জালিয়াতি দেশ-খেগো সেবিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। চুনোপুঁটিরা ধরা পড়ে, শাস্তি পায়, রাঘব-বোয়াল আরামসে সাঁতার কেটে বেরিয়ে যায়।