Published : Friday, 19 February, 2021 at 9:40 PM, Count : 841

‘নির্বাচন হচ্ছে-নির্বাচন হচ্ছেনা’ যশোর পৌরসভায় এখন এমন গোলকধাঁধা তৈরি হয়েছে। সে ধাঁধায় পড়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন প্রার্থী ও ভোটাররা। আসলে কবে পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে তা নিয়ে কারো কাছে স্পষ্ট কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা নেই। কখন কীভাবে কী হচ্ছে সেটিও বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। তবে, শেষ কথা হচ্ছে, নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এখন ২২ ফেব্রুয়ারির উপর।
গত ২০ জানুয়ারি যশোর পৌরসভার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২১ জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করেন রিটার্নিং অফিসার। যথারীতি ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বিঘ্নভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চলে। এ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রি, জমা এবং যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়। তারপরই জটিলতা তৈরি হতে থাকে। ৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন স্থগিত করতে হাইকোর্টে রিট হয়। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মো.মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো.কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নির্বাচন না করতে তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু সেই স্থগিতাদেশ গত নয়দিনেও নির্বাচন কমিশনে পৌঁছেনি। আর এ কারণে আদেশ আসেনি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। ফলে, রিটার্নিং অফিসার তার কার্যক্রম চালাতে থাকেন। স্থগিতাদেশের তিনদিন পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। ফলে, প্রার্থী এবং ভোটাররা ধারণা করেন নির্বাচন পূর্ব নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারিই হবে। সেই অনুযায়ী প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা।
১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত করেছেন। একইসাথে আবেদনটির শুনানির জন্য আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। আর অ্যাডভোকেট পঙ্কজ কুমার কুন্ডু ছিলেন রিটকারীদের পক্ষে।
স্থগিতাদেশ স্থগিত করার সংবাদ অতিদ্রুত যশোরে ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ শোনার পরপরই ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেন প্রার্থীরা। আর ভোটারদের মধ্যে তৈরি হয় নির্বাচনী ইমেজ। বিকেল থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার টাঙাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন নানা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা। নতুন উদ্যমে গণসংযোগ শুরু করেন অনেক প্রার্থী। যেন এক রকম উৎসব শুরু হয়! ব্যস্ততা বেড়ে যায় গণমাধ্যম কর্মীদেরও। বারবার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে খবর নেয়া হয় স্থগিত আদেশ স্থগিতের চিঠি এসেছে কিনা। ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত চিঠি না পাওয়ার কথা বলেন রিটার্নিং অফিসার।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হওয়ার পর ভিন্ন খবর শোনা যায়। জানা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচন স্থগিতাদেশের খবর আসে রিটার্নিং অফিসারের কাছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন স্থগিত সংক্রান্ত আদালতের আদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে যশোরে পাঠানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে মুহূর্তের মধ্যে হতাশ হয়ে পড়েন প্রার্থী, তাদের কর্মী-সমর্থক ও ভোটাররা। ‘নির্বাচন হচ্ছে, নির্বাচন হচ্ছে না’ এমন খবর শুনতে শুনতে যেন অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, যশোর পৌরসভায় আসলে কবে নির্বাচন হবে। এরপরও আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। সেখান থেকে কী আদেশ আসে তার উপর নির্ভর করছে নির্বাচন। তারপরও ২২ ফেব্রুয়ারির আদেশ যদি দ্রুত নির্বাচন কমিশনে না আসে তাহলে নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। তবে যেহেতু ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারিত, সেহেতু সরকারের পক্ষে দ্রুত সকল কার্যাদি সম্পন্ন করে ২৮ ফেব্রুয়ারিই ভোট অনুষ্ঠানের চেষ্টা থাকবে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।