এম. আইউব

বিকেল চারটে ২০ মিনিট। শহরের স্টেডিয়ামপাড়ার আলমাস একাডেমিক কেয়ারের সামনে শ’শ’ নারী-পুরুষ গাদাগাদি করে দাঁড়ানো। সাথে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল। গেটের ভিতরে ঢুকে দেখা যায় আরও শ’ খানেক নারী-পুরুষ। ভিতরে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। তারাও ছিলেন গাদাগাদি করে। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না সেখানে।
ক্লাস রুমে ঢুকে দেখা যায় শিশুরা পরীক্ষা দিচ্ছে। সরকারের কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশনার পর এমন দৃশ্য দেখা যায় আলমাস একাডেমিক কেয়ারে। এই কোচিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী আলমাস হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় বন্ধের নির্দেশনার পরেও কেন খোলা রেখেছেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘আজ মডেল টেস্ট ছিল। তাই খোলা রেখেছি। সামনে বন্ধ রাখবো।’
সরকারি যেকোনো নির্দেশনা না মানার অভিযোগ রয়েছে আলমাস একাডেমিক কেয়ারের বিরুদ্ধে। অতীতে এমন অনেক প্রমাণ মেলে। স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তার সন্তান আলমাস কোচিংয়ে পড়ার কারণে সকল আইনকানুনের থোড়াই কেয়ার করেন এখানকার পরিচালক- এমন অভিযোগ অভিভাবকদের।
কেবল আলমাস না, খোলা ছিল ম্যাক্স, ইমদাদ স্যারের কোচিং, অপু ক্যাডেট কোচিং, দৃষ্টি কোচিং সেন্টার, এসএস কোচিং সেন্টার, বর্ণমালা কোচিং সেন্টার, পিকাসো প্রভৃতি কোচিং সেন্টার। খোলা ছিল শিল্পকলা একাডেমির ছয়তলা বিশিষ্ট আহম্মদ ভিলার সবগুলো কোচিং সেন্টার।
শনিবার বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে গিয়ে খুলে রাখার দৃশ্য দেখা যায়। তবে, তালাবদ্ধ দেখা যায় দু’টি কোচিং সেন্টারে গিয়ে। এই দু’টি হচ্ছে, শহরের মুসলিম একাডেমি স্কুলের বিপরীতে নবদূত কোচিং সেন্টার ও সার্কিট হাউজপাড়ার এডুকেয়ার। কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ পাওয়ার পর এই দু’টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পাঠদান থেকে বিরত থাকেন। নবদূত কোচিং সেন্টারের পরিচালক আজমল কবীর শাহিন জানান, সরকারি নির্দেশনা মেনে তারা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি মডেল টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্ন ও খাতা পৌঁছে দিচ্ছেন; যে পরীক্ষা শনিবার নেয়ার কথা ছিল।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার শনিবার থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনা থেকে রক্ষা করতে আগাম সতর্কতা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আপাতত ১৪ দিন সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির পর নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষামন্ত্রণালয়।
সরকারি এ ঘোষণার পর শনিবার থেকে যশোরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও কানে তোলেননি কোচিং সেন্টার মালিকরা। তারা নানা অজুহাতে কোচিং সেন্টার খোলা রেখেছেন। কোচিং সেন্টার মালিকরা এটি করে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে যাচ্ছেন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের। বর্তমান পরিস্থিতিতে অসংখ্য অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। আলমাস একাডেমিক কেয়ারের একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কাগজকে বলেন, ‘করোনার যে অবস্থা তাতে করে সন্তানকে বাইরে বের করতে মন চাচ্ছে না। কিন্তু কোচিং সেন্টার খোলা থাকায় অন্যরা লেখাপড়ায় এগিয়ে যাবে এই কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়েই আনতে হচ্ছে।’
এসএস কোচিং সেন্টারের একাধিক অভিভাবকও একই কথা বলেন। তবে, পিকাসো কোচিং সেন্টারের একজন অভিভাবক বলেন, অন্য কোথাও করোনা নেই, যতো করোনা সব কি কোচিং সেন্টারে?
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং সেন্টার খোলা রাখার বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোনোকিছু করতে দেয়া হবে না। দ্রুত অভিযানে নামা হবে। কোনো কোচিং সেন্টার খোলা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’