
যদি মাংস খাওয়া বাদ দিতে হয়, তবে প্রোটিনের অভাব পূরণ হবে কী দিয়ে? ভালোমন্দ খাওয়া মানেই মাংসের কোনো না কোনো পদ। মাংসের তরকারি, কাবাব, রোস্ট, গ্রিল, বার্গার বা পিৎজা সবকিছুতেই আছে মাংস। এদের সবখানেই মুরগির মাংসের সুযোগ থাকলেও গরু, খাসির মাংস বা ‘রেড মিট’ থাকে বরাবরই পছন্দের শীর্ষে। তবে, খাদ্যাভ্যাস থেকে মাংস খাওয়া বাদ দেওয়া হয় তবে কী হবে? সম্পূর্ণভাবে মাংস খাওয়া বাদ দিলে প্রোটিনের অন্যান্য উৎসর খুঁজতে হবে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘থ্রিস্টল’ এবং ‘নিউরিলাইফ’য়ের সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ ড্যানি লেভি-ওলিন্স। কেউ যখন পুরোপুরি মাংস খাওয়া বাদ দিয়ে দেবেন, তখন তিনি কতটুকু মাংস দৈনিক খেতেন তার ওপর নির্ভর করবে শরীরে হঠাৎ প্রাণিজ প্রোটিন বন্ধ হওয়ার প্রভাব।
প্রক্রিয়াজাত মাংস অন্যান্য সকল মাংসের তুলনায় শরীরের ওপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অপ্রক্রিয়াজাত মাংসের মধ্যে ‘হোয়াইট মিট’য়ের তুলনায় ‘রেড মিট’ বেশি ক্ষতিকর। এ থেকে বোঝা যায়, মাংসের ধরন ও উৎসের ওপর নির্ভর করবে স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাবের মাত্রা।
আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হলো পশুর শরীরের কোন অংশের মাংস আপনি খাচ্ছেন। যেসব স্থানে চর্বি বেশি থাকে, সেসব স্থানের মাংস খেলে চর্বি ও কোলেস্টেরল বাড়বে। মাংস কীভাবে রান্না করছেন সেটাও আমলে নিতে হবে। উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা মাংস সৃষ্টি করে ‘হ্যাটেরোসাইক্লিক অ্যামিনেজ’, যা ডিএনএ’য়ের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে হঠাৎ মাংস খাওয়ার বন্ধ করে দেওয়ার প্রভাব মানুষভেদে অনেকটাই ভিন্ন।
অন্যান্য সকল খাবারের মতো মাংসের কোনো সুনিশ্চিত ভালো কিংবা মন্দ দিক নেই। মাংসের উপকারী ও অপকারী দিক আছে। তবে সেটা নির্ভর করে আসলে খাওয়ার পরিমাণের ওপর। অতিরিক্ত খেলে উপকারী উপাদানটাই অপকারী হয়ে দাঁড়াবে।
লেভি-ওলিন্স বলছেন, ‘মাংস যোগায় প্রয়োজনীয় কিছু ‘মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট’। যেমন- বি ভিটামিন্স, আয়রন, জিংক। প্রোটিনের একটি পরিপূর্ণ উৎস মাংস, যা সব ধরনের মানবদেহের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। আর এই অ্যামিনো অ্যাসিডগুলো শরীর তৈরি করতে পারে না, ভোজ্য উৎস থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য মাংসের বিকল্প হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, সয়া ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। তবে এই বিকল্পগুলো সংগ্রহ করা মাংস সংগ্রহ করার চাইতে কষ্টকর, তাই মাংস বাদ দেওয়ার বড় ধরনের প্রভাব থাকবে।’
লেভি-ওলিন্স বলেন, ‘মাংস না খেলে শরীরে ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’, কোলেস্টেরল, সোডিয়াম ইত্যাদির মাত্রা কমবে। এই সবগুলোই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তাই মাংসের বদলে প্রোটিনের জন্য উদ্ভিজ্জ উৎস বেছে নিলে উল্টো উপকারিতাও মিলবে।’
লেভি-ওলিন্স বলেন, ‘ধীরে ধীরে পুরানো অভ্যাস বদলে নতুন অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে শরীরকে সময় দিতে হবে। এতে নতুন অভ্যাস ধরে রাখা সহজ হবে। খাদ্যাভ্যাসে কোনো পরিবর্তন আসলে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াতে শুরুতে সমস্যা হতে পারে। তাই হঠাৎ বন্ধ করে প্রথমে খাওয়ার মাত্রা কমান, মাংসের বিকল্পের দিকে জোর বাড়ান, পরে ধীরে ধীরে মাংস একেবারে বাদ দিতে পারেন।’