
ঈদের আগে থেকে ভোজ্য তেল নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল দাম বাড়ালেও বাজার এখন স্বাভাবিক হয়নি। এরই মধ্যে পেঁয়াজের বাজারে অল্পবিস্তর নৈরাজ্য তৈরি করেছেন বিক্রেতারা। দেশের পেঁয়াজচাষিদের সুরক্ষা দিতে আপাতত নতুন করে এই নিত্যপণ্যটি আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। কিন্তু মজুদে টানা না পড়লেও দুদিন ধরে দেশি পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খুচরা বাজারে একেক জায়গায় একেক দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাজারে এখনো তিন মাসের পেঁয়াজ আছে। ফলে দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আমদানি বন্ধের সুযোগ নিয়ে বাজারে নৈরাজ্য তৈরি করছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের কৃষকের স্বার্থে আমরা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছি। দেশের বাজারে যে পেঁয়াজ আছে তাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যাবে। তাই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। আমরা শ্যামবাজার ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি। তার পরও যদি বাড়তি দাম রাখা হয়। আমরা আবারও আমদানি অনুমোদন দেব। তাতে করে কৃষকরা আবারও ক্ষতির মুখে পড়বে।’
গত ৫ মের পর নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির কোনো অনুমতিপত্র দিচ্ছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে ঈদ উপলক্ষে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় ১ থেকে ৬ মে পর্যন্ত ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসেনি।
বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর থেকে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বড় বাজারগুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা। আর পাড়া-মহল্লায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা, যা গত সোমবারও বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা দরে।
পাইকারি বাজারে ২-৩ টাকা বেড়েছে তাহলে কেন এত দাম রাখা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কারওয়ান বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে বিক্রি করি। সেখানে পাল্লা (পাঁচ কেজি) প্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। তার ওপর পরিবহন খরচ। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’
রাজাবাজার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে পাঁচটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, একেক দোকানে একেক দাম। বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মধ্যে ভালো-খারাপ রয়েছে। যেটা একটু ভালো মানের সেটা বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫ টাকা। আর একটু কম মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।
এই বাজারের ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন বলেন, ‘পাইকারি প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৫-৬ টাকা করে বেড়েছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করছি। দাম কমলে আমরাও কমে বিক্রি করব।’
তিনি বলেন, সরকার নতুন করে পেঁয়াজের আইপি (আমদানির অনুমতিপত্র) দিচ্ছে না। ফলে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি স্থলবন্দরের কাছাকাছি যে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তারা মজুদ করে এখন দাম বাড়াচ্ছেন।
পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. মাজেদ। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের পাইকারি বাজার কেজিপ্রতি ৩২ টাকা। আগামী সপ্তাহে আরও ২-৩ টাকা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘খুচরা বাজারে পেঁয়াজের এত দাম হওয়ার কথা না। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার। খুচরা ব্যবসায়ীরা যদি আবার পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সংকট তৈরি করে তখন সরকার বাধ্য হয়ে আমদানির অনুমোদন দেবে। এতে করে দেশের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমদানি বন্ধ হওয়ায় পেঁয়াজের বাজারে প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। বছরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ প্রয়োজন হয় তার সিংহভাগ দেশেই উৎপাদন হয়। আর এখন তো দেশি পেঁয়াজের মৌসুম। তা ছাড়া এখন যেসব বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা আগের কেনা। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন।