
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রীদের ৮টার মধ্যে হলে প্রবেশের নতুন নিয়মের পেছনে ‘মেয়েদের খুবই এলোমেলো জীবনযাপনকে’কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর।
সম্প্রতি রাবি ছাত্রীদের ৬টি আবাসিক হলে রাতে প্রবেশের সময়সীমা পরিবর্তন করেছে প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাত ৯টার পরিবর্তে সাড়ে ৮টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশ করার কথা বলা হয়েছে।
গত ৯ মে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। নতুন নিয়ম আর ছাত্র-উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আবাসিক ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরাও ছাত্রীদের হলে প্রবেশের নিয়মে এমন বৈষম্য থাকা অনুচিত বলে মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের ছাত্রীরা সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে। তৎকালীন সময়ে ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা ছিল সন্ধ্যা ৭টা। পরবর্তীতে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সান্ধ্য আইন ‘শিথিল’ করে সর্বশেষ সময় রাত ৯টা পর্যন্ত নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কোনো ছাত্রীর কাজ থাকলে নির্ধারিত সময়ের পরেও হলে প্রবেশ করতে পারবে। কিন্তু পরবর্তীতে গত ৯ মে নতুন করে ছাত্রীদের সব হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিলে নতুন করে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী কঙ্গনা সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্ত চর্চার জায়গায় এমন কোনো ধরনের আইন থাকা উচিত নয়। কারণ এখানে ছেলে-মেয়েদের সমান অধিকার থাকা উচিত। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের কাজ করা উচিত। সেটি না করে তারা বরং ছাত্রীদের ওপর অন্যায় নিয়ম আরোপ করছে। এসব আইন জেলখানার কয়েদিদের আইনের মতো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাত রীতা বলেন, ‘একই ক্যাম্পাসে ছেলে-মেয়ে সবার সমান অধিকার থাকা উচিত। এমন একমুখী আইন আমি সমর্থন করি না। এর আগে আন্দোলনের সময় রাত ৯টা সময় ছিল। এখন হুট করে আবার সেটি কমিয়ে সাড়ে ৮টা কেন করা হলো? এটির মানে হলো যে প্রশাসন চাইলে যেকোনো ধরনের নিয়ম তারা পরিবর্তন করতে পারে। এসব হয়রানিমূলক কোনো নিয়ম থাকা উচিত নয়।’
বিশিষ্ট নাট্যজন ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসলে কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এমন আইন করেছে সেটি জানা নেই। তবে এটি অতীতের সান্ধ্য আইনের চেয়ে ভালো। তবে এমন বৈষম্যও থাকা উচিত নয়।’ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সকলের জন্য একই নিয়ম করা উচিত বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
ছাত্রীদের আবাসিক হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ফেরদৌসী মহল বলেন, ‘মূলত ওটা কোন বিজ্ঞপ্তি নয়। এর আগে আমরা মেয়েদের ৬টি হলে প্রাধ্যক্ষরা বসেছিলাম যে ছুটির পর এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা। এ নিয়ে আমরা ছুটির পর হলের মেয়েদের সঙ্গেও কথা বলব এমনটাই বলা হয়েছিল প্রভোস্টদের। কিন্তু ভুলক্রমে এক হলের প্রভোস্ট নোটিশ আকারে দিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে সব হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে একটি কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন মিলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সময় কমিয়ে নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়েরা খুবই এলোমেলো জীবনযাপন করছে। বিভিন্ন দিক থেকে কথা আসার কারণে তাদের হলে প্রবেশের বিষয়ে আগের চেয়ে সময় কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।’