Published : Tuesday, 17 May, 2022 at 6:55 PM, Count : 114

বান্দরবানের লামায় সম্পত্তির লোভে দুই ভাই ও বাবার হাত পা কেটে, চোখ উপড়ে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকায় ভাড়া করেছে এক যুবককে। থানচি উপজেলার কলা ব্যবসায়ী ওই যুবককে অগ্রিম ৩০ হাজার টাকা আগাম দেয়া হয়। ছবিতে বাবা ও দুই ভাইয়ের চেহারা দেখে মায়া হয় ভাড়াটিয়া যুবকের। কিন্তু নৃশংস ঘটনার পরিকল্পনাকারীর মনে দুই ভাই ও জন্মদাতা বাবার প্রতি একটুও বুক কাঁপলো না। এমন লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে এখনো আইনের আশ্রয় নেয় নি কেউ। নিষ্ঠুর পরিকল্পনার বাস্তব কাহিনী। বৃহত্তর লামা মহকুমার গজালিয়া ইউনিয়ন গতিরাম ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা হানিচরণ ত্রিপুরার চার সন্তান। এদের নাম সৈয়রাম ত্রিপুরা, প্রণয় ত্রিপুরা, বিনয় ত্রিপুরা ও দীপা ত্রিপুরা। হানিচরণের পৈত্রিক সম্পত্তি তার বড় ছেলে সৈয়রাম ত্রিপুরা এককভাবে ভোগ করার ইচ্ছে চেপে বসে তার মগজে। বাবা ও ভাইদেরেক ফাঁসানোর জন্য একেরপর এক ব্যার্থ চেষ্টা চালায়, সৈয়রাম ত্রিপুরা। সর্বশেষ নিজের পিতা ও ভাইদেরকে পঙ্গু ও অন্ধ করে দেয়ার জন্য নবীন ত্রিপুরা নামের এক যুবকের সাথে চুক্তি হয় সৈয়রাম ত্রিপুরার। ১৬ মে বেলা পৌনে ১১টায় আপন ভাইদ্বারা এমন নৃশংস পরিকল্পনার বিষয়টি জানতে পারেন ছোট ভাই বিনয় ত্রিপুরা। এই নৃশংস পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিনয় ও প্রনয়ের কাছে সোমবার লামা বাজারে দেখা করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন খোদ নবীন ত্রিপুরা (৩২)। নবীন ত্রিপুরার বাড়ি থানচি বিদ্যামনিপাড়া, পিতার নাম ধর্মচরণ ত্রিপুরা, সে কলা ব্যাবসায়ী বলে নিজেকে দাবি করে।নবীন ত্রিপুরা সাংবাদিকদের সামনেও প্রকাশ্যে বলেন, সৈয়রাম ত্রিপুরা তার ভাই ও পিতাকে পঙ্গু ও অন্ধ করে দেয়ার জন্য তাকে তিন দফে ৩২ হাজার টাকা দেয়। এর মধ্যে সৈয়রাম ত্রিপুরা প্রথমে লামা বাস টার্মিনালে একটি বিকাশ দোকান থেকে নিয়ে ১০ হাজার, কয়েকদিন পর ফাঁসিয়াখালীতে নিয়ে ১৯ হাজার ও বিকাশে তিন হাজার, মোট ৩২ হাজার টাকা দিয়েছে। ছোট দুই ভাই বিনয়, প্রনয় ও তাদের বাবাকে হাত পা কেটে পঙ্গু ও চোখ উপড়ে অন্ধ করে দেয়ার ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে এই লেনদেন হয়। নবীন ত্রিপুরার এমন স্বীকারোক্তিমূলক কথা শুনে সাংবাদিকরা বিস্ময়ে হতবাক হয়।এদিকে সোমবার রাত পৌনে ৯টায় সৈয়রাম ত্রিপুরা তার মুঠো ফোনে বলেন, "এসব আমার ভাইদের ষড়যন্ত্র। তারা আমাকে মারার জন্য নবীন ত্রিপুরাকে কন্টাক্ট করেছে। সৈয়রাম বলেন "আমাকে বিগত কিছুদিন আগে নবীন ত্রিপুরা মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে টাকা চায়। নবীন জানায়, আপনার ভাইয়েরা আপনাকে মেরে ফেলার জন্য আমাকে টাকা দিয়েছে। এ কথা শুনে আমি বাঁচার জন্য নবীন ত্রিপুরাকে তিন দফে ৩২ হাজা টাকা দিয়েছি, এটা সত্য"।মুঠো ফোনে সৈয়রাম আরো জানান "আমার কাছে মনে হয়েছে নবীন একজন পেশাদার খুনী, তাই আমি ভয় পেয়ে টাকা দিয়েছি"। সৈয়রাম ত্রিপুরা দু:খ করে বলেন, আমি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কষ্ট করে ছোট দুই ভাইকে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ করে দিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করেছি। কিন্তু আজ সেই ভাইয়েরা অন্যায়ভাবে দাদার সম্পত্তির ভাগের জন্য আমার ক্রয়কৃত জমি দখল করার মানসে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক সড়যন্ত্র, মনগড়া অভিযোগ করে আমাকে সন্ত্রাসী অপবাদ দিচ্ছে"। সৈয়রাম মুঠো ফোনে আরো জানায়, নবীন ত্রিপুরাকে পুলিশ হেফাজতে নিলে আসল তথ্য বের হয়ে আসবে। একই সাথে কে এই নবীন ত্রিপুরা? সে আসলেই কোনো কিলিং মিশনের সদস্য কিনা, সেই ব্যপারটি উদঘাটন হতে পারে।এদিকে বিনয় প্রনয়, এই দুই ভাইও দাবি করেন যে, আসল বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী মহল উদঘাটন করতে পারবেন। এ ব্যাপারে বিনয়, প্রনয় দু'ভাই লামা থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানান। বিষয়টি খুবই উৎকন্ঠার। প্রসংগত: বিগত দিনে লামা উপজেলায় কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। নবীন ত্রিপুরা বা এই ঘটনার মধ্যদিয়ে হয়তো ভাড়াটিয়া খুনীর কোনো হদিস পাইতে পারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।