
যশোরের বিভিন্ন এলাকায় ইজিবাইক ও রিকসা চুরি এবং বিকিকিনির ঘটনায় সংঘবদ্ধ রবিউল সিন্ডিকেট জড়িত। ওই চোর সিন্ডিকেটের অব্যাহত চুরিতে দিশেহারা মানুষের অব্যাহত অভিযোগে পুলিশি অভিযান পরিচালিত হয়েছে ১৬ মে রাতভর। রবিউল সিন্ডিকেটের ডাকাতিয়া নুরপুরের কয়েকটি ডেরা, তার বাড়ি ও যশোরের শহরতলীতে তার আরো কয়েকটি ডেরায় অভিযান চালিয়ে রিকসা, ভ্যান, ইজবাইক, ব্যাটারি ও অনেক যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়েছে। একই সাথে মোস্টওয়ান্টেড সেই রবিউল ইসলামকেও আটক করেছে পুলিশ।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাকে সাথে নিয়ে আরো চোরাই মালামাল উদ্ধার অভিযান চলছিল।
গত এক বছরে যশোর সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্পটে রিকসা ভ্যান, ইজিবাইক, নসিমন করিমন মিলিয়ে দেড় শতাধিক চুরি সংঘটিত হয়। এর মধ্যে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে বিভিন্ন থানায়। শুধু মাত্র গত ঈদের আগেই ডজন খানেক চুরি সংঘটিত হয় যশোর সদরের কাশিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। ডাকাতিয়া গ্রামের আব্দুল মালেক পালোয়ানের বাড়িতে চুরি হয় গত ১১ এপ্রিল। ১২ এপ্রিল ডাকাতিয়ার সৈনিক বেলাল হোসেনের বাড়ি চুরি হয়। এদিন দিন দুপুরে ৪টি ঘরের তালা ভেঙে চুরি হয়েছে ৩ লক্ষ টাকারও বেশি মালামাল। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ করা হয়। ১৩ এপ্রিল রাতে একই গ্রামের সংবাদকর্মী মোজাম্মেল হোসেন সোহাগের বাড়িতে চুরি হয়। একই গ্রামের নুর আলীর বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে চুরি হয়। চোরেরা নিয়ে গেছে এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন। এছাড়া একই গ্রামের এক বিধবা নারীর বাড়িতে গ্রিল কেটে দুই লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল ডাকাতিয়া দক্ষিণপাড়া কাঁঠালতলা জামে মসজিদের মোটর দুটি চুরি হয়। নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ি থেকে ৫টি গরু নিয়ে গেছে চোরেরা। ১৫ এপ্রিল দিবাগত রাতে অত্র ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপদ্দি ঘোড়াগাছা গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে গরু চুরি যায়। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেন।
এরপর রিকসা ভ্যান চুরির হিড়িক পড়ে যায়। যশোরের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটলে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, এটি সংঘবদ্ধ চোর রবিউল অপরাধী চক্রের কর্মকান্ড। এ ব্যাপারে থানায় কয়েকটি অভিযোগও জমা পড়ে।
এ ঘটনায় চোর রবিউল সিন্ডিকেটের দিকে নজরদারি শুরু হয়। ১৬ মে রাতে সিন্ডিকেটের ডাকাতিয়ার ডেরা ও রবিউলের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। রাত দুটো থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে অভিযান। এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে পরিচালিত অভিযানে এসআই ফজলুর রহমান রিকসা, ভ্যান, ইজিবাইক ব্যাটারি, যন্ত্রাংশ মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার চোরাই মাল উদ্ধার করেন।
ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান মাস্টার ও চুরিতে ভুক্তভোগী মোজাম্মেল হোসেন সোহাগ জানিয়েছেন, যশোরে এখন সংঘবদ্ধ চোরাই মাল বিক্রি সিন্ডিকেটের প্রধান রবিউল ইসলাম ও তার ভাই বিল্লাল চক্র। অধিকাংশ চুরির সাথেই এই সিন্ডিকেট জড়িত। এর আগেও কয়েক দফা এই চোর রবিউল জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির হাতে চোরাই মালামালসহ আটক হয়। চোরাই ভ্যান, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক চুরি ও বিকিকিনিই এই রবিউল চক্রের ব্যবসা। আগাম টাকা দিয়ে চোরদের চুরি করতে বলে। রাতের আঁধারে ওই ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও চুরি করা মালামাল অন্য জেলায় পাঠিয়ে দেয়। যন্ত্রপাতি খুলে একটি মালামাল অন্যটিতে লাগিয়ে আমূল পরিবর্তন আনে রিক্সা-ভ্যান ইজিবাইকে। অনেক সময় যাত্রী সেজে চালককে কিছু কিনতে পাঠায়। আর দোকানে গেলে চুরি করে সটকে পড়ে।
সংঘবদ্ধ চোর রবিউল সিন্ডিকেট পরিচালনা করার পাশাপাশি তারা ডাকাতিয়া দক্ষিণপাড়ায় চালাচ্ছিল রমরমা গাঁজা ফেনসিডিল ইয়াবার ব্যবসা। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং এসব এলাকার উঠতি নেশাখোর ও বিতর্কিত লোকজন ভিড় জমাচ্ছিল রবিউল-বিল্লালের আস্তানায়। এলাকার কিছু মুরুব্বি ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন এসবের প্রতিবাদ জানালে তারা হুংকার দিয়ে বলে আসছিল র্যাব পুলিশ ডিবি তাদের নাকি ম্যানেজ করা আছে। তবে পুলিশ অভিযানে সিন্ডিকেট প্রধান রবিউল আটক হওয়ায় মানুষ সন্তুষ্ট হয়েছে। পুলিশকে প্রশংসাও করছে।
এ ব্যাপারে অভিযানিক অফিসার যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, রবিউলকে বিপুল পরিমান চোরাই মাল ভ্যান রিকসার যন্ত্রাংশসহ আটক করা হয়েছে। চুরির ব্যাপারে যে অভিযোগগুলো আসছে তার তদন্ত হচ্ছে। তাকে সাথে নিয়ে আরো কয়েকটি ডেরায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া অনেকগুলো অভিযোগ ও ঘটনা তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে পুলিশ আন্তরিক। চোর চক্রের ব্যাপারে তথ্যগত সহায়তা চায় পুলিশ।