
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঝুঁকি বেড়েছে। এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। এ অবস্থায়, ভবিষ্যতে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প পরিচিত উদ্ভিদের একটি তালিকা করেছেন লন্ডনের কিউ রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের বিশেষজ্ঞরা।
২০৫০ সালে আপনার আমার খাবারের তালিকায় থাকতে পারে এমন কিছু স্বল্প পরিচিত উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করছেন এসব বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, ভবিষ্যতে আমাদের নকল কলা (এনসেট) এবং পান্ডানুস গাছের ফল (কেয়া ফল) দিয়ে সকালের নাস্তা সারতে হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানান, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের খাদ্য নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। কারণ কয়েকটি ফসলের ওপর নির্ভরশীলতা বিশ্বকে বিপদে ফেলেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক 'খাদ্য সুরক্ষার'-এর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এর প্রভাবে ফসল নষ্ট হয় এবং বিশ্বজুড়ে প্রধান পণ্যের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কিউ গবেষক ড, শ্যাম পিরিন বলেন, আমরা যে খাবার খাই তাতে বৈচিত্র্য আনা হলো ক্ষুধা দূর, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মোকাবিলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার অন্যতম উপায়।
তিনি আরও যোগ করেন, আমরা জানি বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার খাওয়ার উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে যা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর খেয়ে থাকে। ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় এসব উদ্ভিদ থেকে আমরা সমাধান খুঁজে বের করতে পারি। সারা পৃথিবীতে ৭ হাজারেরও বেশি ভোজ্য উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪১৭টি ব্যাপকভাবে ফলন দেয় এবং খাদ্য হিসেবে ব্যহৃত হয়। এদিকে, ৯০ শতাংশ ক্যালোরি আসে মাত্র ১৫টি শস্য থেকে।
ভবিষ্যতে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প পরিচিত উদ্ভিদের মধ্যে এমনই এক উদ্ভিদের নাম প্যান্ডানাস। ছোট আকৃতির এ গাছটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় জন্মে। মিষ্টি ও সুস্বাদু খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয় প্যান্ডানাসের পাতা। আর প্যান্ডানাস গাছে আনারসের মতো একপ্রকার ফল হয় যা কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গাছটি বিরূপ আবহাওয়ায় টিকে থাকতে সক্ষম।
ভবিষ্যতের আরেকটি খাবার হলো মটরশুটি। যা প্রোটিন ও ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ। সমুদ্রের তীর থেকে পাহাড়ের ঢাল পর্যন্ত বিস্তৃত পরিবেশে মটরশুটি জন্মায়। বিশ্বে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির মটরশুটি রয়েছে, আমরা ব্যবহার করে থাকি হাতেগোনা কয়েকটি।
কিন্তু আমরা মাত্র কয়েকটা ব্যবহার করি। শত শত বন্য শিম রয়েছে এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে তা অজানা।
মোরামা বিন (টাইলোসেমা এস্কুলেন্টাম) বতসোয়ানা, নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অংশে একটি প্রধান খাদ্য, যেখানে মটরশুঁটি ভুট্টা বা মাটির সাথে পাউডারে সিদ্ধ করা হয় যাতে পোরিজ বা কোকোর মতো পানীয় তৈরি করা হয়।
সব গুলেই ভোজ্য নয়, তবে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন প্রজাতির বৈশিষ্ট্য গবেষণা করছেন যার কোনটি খাদ্য এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে।
আরেকটি সম্ভাবনাময়ী খাবার হলো সিরিয়াল। যা ঘাস থেকে তৈরি হয়। ফোনিও একটি পুষ্টিকর আফ্রিকান সিরিয়াল যা পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ জাতীয় ঘাস খরা সহ্য করে টিকে থাকতে পারে।
এছাড়াও ১০ হাজারেরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এই খাদ্যের ব্যাপক বৈচিত্র্য। ভবিষ্যৎ খাদ্য সংকট দূর করতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এই খাদ্যটির।
ফোনিও নামক প্রাচীন আফ্রিকান শস্যদানা বাদামের মতো স্বাদের জন্য জনপ্রিয়, বিশেষত মালির বামবারা জনগোষ্ঠীর খুব প্রিয় খাবার এটি। পাঁচ হাজার বছর আগে এটি মিসরে চাষ করা হতো। মরুতে জন্মায় এ উদ্ভিদ, সাদা ও কালো দুই ধরনের ফোনিও পাওয়া যায়। স্বাদে কিছুটা এশিয়ার শস্যদানা কাউনের মতো। এতে প্রচুর আয়রন, জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়াম আছে।
কলার সমগোত্রীয় একটি ফল এনসেট বা নকল কলা। যা ইথিওপিয়ার একটি অংশে খাওয়া হয়। গবেষণা বলছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এ যুগে এনসেট একটি কার্যকরী ফল। সমীক্ষা অনুসারে, কলার মতো ফসলের উষ্ণায়ন বিশ্বের ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে খাওয়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, খাবারের বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্য হলো- ক্ষুধা দূর করা, জীববৈচিত্রের ক্ষতি মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া।