
উইলিয়াম সি হান্নান লিখেছিলেন, ‘দিনটা তেমনই হবে যেমন তুমি বানাতে চাও- সূর্যের মতো জেগে উঠো, জ্বালিয়ে দাও। ’ মার্কিন লেখকের বিখ্যাত এই উক্তি সকালে মুশফিকুর রহিম কিংবা লিটন দাস পড়েছিলেন কি না কে জানে!
বাংলাদেশের ঢাকা টেস্টের শুরুটা হয়েছিল বিভীষিকাময়। সকালে যে কালো মেঘ ভর করেছিল মিরপুরের আকাশে তা অবশ্য কেটে গেছে। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে মিরপুরের আকাশকে সারাদিন আলোতে ভরিয়ে রাখলেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।
ধ্বংস্তূপ হয়ে পড়া বাংলাদেশের ইনিংসকে সূর্যের মতো যেভাবে তারা জ্বালিয়ে রাখলেন সারাদিন, যেকোনো অভিবাদনই কম হয়ে যায়।
২৪ রানে পাঁচ উইকেট হারাল দল, দুজন সেঞ্চুরি করলেন, তার চেয়েও বড় কথা সারাটা দিন কাটালেন কতৃত্ব নিয়ে।
প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে করেছে ২৭৭ রান। মুশফিকুর রহিম ২৫২ বলে ১১৫ ও লিটন দাস ২২১ বলে ১৩৫ রানে অপরাজিত আছেন।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে যান মাহমুদুল হাসান জয়। রাজিথার লেন্থ বলে কোনো রান না করেই বোল্ড হন তিনি। অনুজের পথে হাঁটলেন তামিমও।
তার আউটে অবশ্য জয়াবিক্রমা নিয়েছেন দারুণ এক ক্যাচ। আভিস্কা ফার্নান্দোর বল তিনি খেলতে চেয়েছিলেন লেগ সাইডে, কিন্তু তার ব্যাটের কানায় লেগে বলের গন্তব্য হয় পয়েন্টে দাঁড়ানো জয়াবিক্রমার হাতে। এ নিয়ে তৃতীয়বার টেস্টে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির দুই ব্যাটার আউট হন ডাক মেরে।
অনেকদিন ধরে অফ ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা মুমিনুল হকও সাজঘরে ফিরতে বেশি সময় নেননি। রাজিথার বলে বোল্ড হয়ে শান্ত আর আভিস্কা ফার্নান্দোর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মুমিনুল। যথাক্রমে তাদের ব্যাট থেকে এসেছে ২১ বলে ৮ ও ৯ বলে ৯ রান। এ নিয়ে টানা ৫ ইনিংসে সিঙ্গেল ডিজেটে আউট হলেন টেস্ট অধিনায়ক।
এদিন শূন্য রানে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসানও। রাজিথার বল লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু মুভমেন্টের কাছে বিট হয়ে বল লাগে প্যাডে। প্রথম বলেই কোনো রান না করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি।
এরপর দিনের বাকিটা সময় শুধুই লিটন ও মুশফিকের। রানের ফুলঝুঁড়ি ছুটিয়েছেন তারা, খেলেছেন দারুণ সব শটও। ২৫৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন তারা।
প্রথম দিন শেষে মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে চালকের আসনে টাইগাররা।
এদিন মিরপুরের তীব্র গরমে ৭ ওভার যেতে না যেতেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে প্রথম ছয় ব্যাটারের পাঁচজনকেই। একমাত্র মুশফিকই টিকতে পেরেছিলেন। সাত নম্বরে নামা লিটনকে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন মুশফিক। প্রথমে ধীরেসুস্থে শুরু করলেও থিতু হয়েই লিটন নিজস্ব ছন্দে ব্যাট করতে থাকেন। উইকেটের চারদিকে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটান লিটন। মুশফিক ছিলেন লক্ষ্যে অবিচল।
চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি মিস করা লিটন ঢাকায় তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। ১৪৯ বলে ১৪ বাউন্ডারিতে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আদায় করে নেন এ ডানহাতি ব্যাটার। অবশ্য ভাগ্যও তার সঙ্গে ছিল। কমপক্ষে তিনবার শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারদের সুযোগ দিয়েছিলেন লিটন। ৯৬ রানে দাঁড়িয়ে লিটন একটা হাফ চান্স দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারদের। সুযোগটা তো নিতে পারেইনি, উল্টো থ্রো থেকে বাউন্ডারি পেয়ে যান লিটন। তাতেই পূর্ণ হয় ৩৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মুশফিকুর রহিমও। ৯০ রানে পৌঁছে কিছুটা যেন নার্ভাস ছিলেন মুশফিক। তাই সেঞ্চুরি পেতে অপেক্ষা করতে হয় বেশ কিছুটা সময়। অবশেষে ২১৮ বলে ১১ বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি তুলে নেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। চট্টগ্রামের পর ঢাকায়ও সেঞ্চুরি তুলে নিলেন তিনি। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর কিছুটা হাত খুলে খেলতে থাকেন দুই টাইগার ব্যাটার। প্রচণ্ড গরমে ক্লান্তি থেকে বাঁচতে ঘন ঘন পানি পানের বিরতি দেয়ায় দিনের নির্ধারিত ওভারের চেয়ে পাঁচ ওভার কম খেলেই প্রথম দিনের খেলা শেষ করতে হয় বাংলাদেশের। তাতে ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ২৫৩ রানের জুটিতে বাংলাদেশ দিন শেষে সংগ্রহ করেছে ২৭৭ রান।
এদিন শ্রীলঙ্কার ব্যাটার কুশল মেন্ডিস বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করায় তাকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয়। ব্যথা না কোমায় পরবর্তীতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে জানানো হয়, ভালোই আছেন এ ব্যাটার। নতুন করে জটিলতা দেখা না দিলে আজই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসক।