
যশোরে মানব পাচার বিষয়ক ওয়ার্কশপে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, পাচারের শিকার নারীরা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। উদ্ধারের পর ফিরে আসলে তাকে পড়তে হয় সামাজিক সমস্যায়। যে বাবা-মা তাকে এক সময় ফিরিয়ে আনতে ব্যাকুল থাকেন তারাই তাকে অল্প সময়ে বোঝা মনে করতে শুরু করেন। এসব সার্ভাইভারকে মানসিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি সমাজে যাতে তিনি সঠিকভাবে পুনর্বাসিত হতে পারেন তার সুব্যবস্থা করাটাও জরুরি।
এক্ষেতে পাচারের সার্ভাইভারদের আর্থিক ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা যত সার্ভাইভারকে পাঠাবেন যশোর সদর উপজেলা পরিষদ তাদের সবাইকে সহায়তা দেবে’।
বুধবার হোটেল সিটি প্লাজায় মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশ এজেন্সির আর্থিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে মানব পাচার প্রতিরোধে পাচার বিরোধী একটি সমন্বিত কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়।
রাইটস যশোরের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার ইয়াকুব আলী মোল্লার সভাপতিত্বে ওয়ার্কশপের উদ্বোধন করেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান। এতে আলোচনা করেন আইওএম’র মাইগ্রেন্ট প্রটেকশন অ্যান্ড অ্যাসিসটেন্ট ইউনিটের প্রধান ইউজিন পার্ক এবং বাংলাদেশের সহকারী ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার রিপন চক্রবর্তী। স্বাগত বক্তৃতা করেন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক।
ওয়ার্কশপে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবির, সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শরীফ নুর মো. আলী রেজা, সাবেক সভাপতি ও পিপি ইদ্রিস আলী, জেলা আইন সহায়তা কর্মকর্তা রাফিয়া সুলতানা, প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার হোসেন ও হাবিবুর রহমান মিলন, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান, ডেমোর সহকারী পরিচালক শাহরিয়ার হাসান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোন্দকার জাকির হোসেন। পরিচালনা করেন রাইটস যশোরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এস এম আজহারুল ইসলাম।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর দুই কোটি দশ লাখ মানুষ দাসত্বের শিকার হয়। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর মানুষ অভিবাসনের প্রক্রিয়ায় পাচারের শিকার হচ্ছে। অবস্থা এমন যে যদি কোনোদিন মহাসাগরের তলদেশ খনন করা হয় তাহলে সেখানে মানুষের যে হাড় পাওয়া যাবে তার সবই বাংলাদেশিদের। এটা অসম্মানের।
তিনি বলেন, পাচারকারীরা খুবই সংঘবদ্ধ। সে কারণে পাচার প্রতিরোধ করতে হলে এই কার্যক্রমের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবির বলেন, সার্ভাইভারদের আর্থ-সামাজিক সাপোর্ট দেয়ার পাশাপাশি প্রতিরোধ কার্যক্রমটাও জোরালো করা দরকার। কারণ, পাচার প্রতিরোধ করতে না পারলে ভিকটিম উদ্ধার হবে আর সাপোর্ট দিতেই হবে, কাজের কাজ কিছু হবে না। তার চেয়ে যাতে কেউ পাচার না হয় সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। এক্ষেত্রে যশোর পুলিশের পক্ষ থেকে তথ্য সরবরাহসহ সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দেন শীর্ষস্থানীয় এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ওয়ার্কশপে প্রকল্প প্রস্তাবনা তুলে ধরে রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, এটি যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় বাস্তবায়িত হবে। প্রাথমিকভাবে এটি পরিচালিত হবে আড়াই বছর। প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার এই প্রকল্পটিকে অত্যন্ত সময়োপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সার্ভাইভারের চাহিদা অনুযায়ী এই প্রকল্পের টাকা বৃদ্ধি করা যাবে।
কর্মশালায় যশোরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, মানব পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।