gramerkagoj
বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫ ৫ চৈত্র ১৪৩১
gramerkagoj
সঙ্গীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশ : বুধবার, ৩১ জুলাই , ২০২৪, ১০:৩৩:০০ এএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-07-31_66a9ba89ca5d0.jpg

চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিল কো, বাহারো ফুল বরসা হ্যায় কিংবা কেয়া হুয়া তেরা ওয়াদা, ইয়ে দুনিয়া ইয়ে মেহফিল, গুলাবি আঁখে—এমন সব কালজয়ী গান গেয়ে মোহাম্মদ রফি ভারতীয় সঙ্গীত জগতে হয়ে আছেন এক সঙ্গীত কিংবদন্তী। শিল্পী মোহাম্মদ রফির গান যেন কখনো পুরানো হবার নয়। সমগ্র উপমহাদেশের সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের জন্য তিনি এক অন্য উচ্চতার মানুষ। আজ এই কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকী।
মোহাম্মদ রফি ১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই আকস্মিকভাবে হৃদজনিত সমস্যার কারণে মহাপ্রয়াণ ঘটে। তার গায়কি কণ্ঠ এবং সুরের মায়াজালে সঙ্গীতপ্রেমীরা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন জীবনের পরতে পরতে। রফির গানের আবহ ও সুরের ঝংকারে শ্রোতাদের মনে জেগে ওঠে ভালোবাসার জাগরণ। তাই তো তিনি সবসময় প্রাসঙ্গিক এবং স্মৃতিময়।
মোহাম্মদ রফি ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব এলাকার অমৃতসর গ্রামের কাছাকাছি কোটলার সুলতানসিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল ফিকো। পিতার নাম হাজি আলী মোহাম্মদ। ভারত বিভাজনের সময় মোহাম্মদ রফি ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে তার পরিবারও বোম্বেতে চলে আসে।
সঙ্গীত কলায় অসামান্য অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় পদক এবং ৬-বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মোহাম্মদ রফি। এছাড়াও, ১৯৬৭ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী সম্মানেও অভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। প্রায় চল্লিশ বছর সময়কাল ধরে সঙ্গীত জগতে থাকাকালীন ছাব্বিশ হাজারেরও অধিক চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্য গায়ক বা প্লেব্যাক সিংগার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মোহাম্মদ রফি। তিনি বহুবিধ গানে অংশ নেয়ার বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তন্মধ্যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান, বিরহ-বিচ্ছেদ, উচ্চ মার্গের প্রেম-ভালবাসা, কাওয়ালী, ভজন, গজল-সহ বিভিন্ন গোত্রের গানে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন সমানভাবে। বিশেষ করে হিন্দি এবং উর্দু ভাষায় সমান দক্ষতা থাকায় তার গানগুলোতে বৈচিত্র্য এসেছে সমধিক।
হিন্দিসহ কোনকানি, উর্দু, ভোজপুরী, উড়িয়া, পাঞ্জাবী, বাংলা, মারাঠী, সিন্ধী, কানাড়া, গুজরাতি, তেলুগু, মাঘী, মৈথিলী, অহমীয়া ইত্যাদি ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন। এছাড়াও আরও গান গেয়েছেন - ইংরেজি, ফার্সী, স্প্যানিশ এবং ডাচ ভাষায়।
২৪ জুলাই, ২০১০ ইং তারিখে টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তার চমকপ্রদ কণ্ঠস্বরকে বিশেষভাবে মূল্যায়িত করা হয়েছে। আমি তোমাকে ভালবাসি বা (আই লাভ ইউ) বাক্যটিকে যদি ১০১ প্রকারে গান আকারে গাইতে বলা হয়, মোহাম্মদ রফি ঐ ১০১ প্রকারে তার সবটুকুই করতে পারতেন। প্রায় চার দশকের গানের ভুবনে অসাধারণ অবদানের জন্য মোহাম্মদ রফি তাই সকল সময়ের, সকল কালের ও সকল বিষয়ের শিল্পী হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছেন।
১৩ বছর বয়সে রফি লাহোরের প্রথিতযশা শিল্পী কে. এল. সাইগলের সাথে জীবনের প্রথম দর্শক-শ্রোতাদের মুখোমুখি হয়ে কনসার্টে গান পরিবেশন করেন। ১৯৪১ সালে শ্যাম সুন্দরের নির্দেশনায় লাহোরে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিজেকে অভিষেক ঘটান। পাঞ্জাবী ভাষায় নির্মিত গুল বালুচ (১৯৪৪ সালে মুক্তি পায়) চলচ্চিত্রে জিনাত বেগমের সঙ্গে দ্বৈত সঙ্গীত "সোনিয়ে নি, হেরিয়ে নি" গানটি গান। একই বছরে মোহাম্মদ রফি অল ইন্ডিয়া রেডিও'র লাহোর সম্প্রচার কেন্দ্রে গান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ পান।
১৯৪১ সালে শ্যাম সুন্দরের পরিচালনায় গুল বালোচ ছবির মাধ্যমে সঙ্গীতে পেশাগতভাবে অভিষেক ঘটান রফি। পরের বছর বোম্বের চলচ্চিত্র গাও কি গৌরী ছবিতে নৈপথ্য গায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটান। এছাড়াও রফি লায়লা-মজনু (১৯৪৫) এবং জুগনু চলচ্চিত্রে সংক্ষিপ্তভাবে, অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। লায়লা-মজনু চলচ্চিত্রে 'তেরা জ্বালা' কোরাস গানে তাকে অন্যান্য শিল্পীদের সাথে গাইতে দেখা যায়।
১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হাম সব চোর হ্যায় ছবিতে হামকো হাসতে দেখ জামানা জ্বলতা হ্যায় এবং ১৯৫০ সালে বেকসুর ছবিতে খবর কিসি কো নাহিন, ও কিধার দেখতে-এর মতো গানে প্রভাব ফেলেছিলেন।
মোহাম্মদ রফি তার সুদীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে অনেক নামকরা সঙ্গীত পরিচালকের দিক-নির্দেশনায় বিভিন্ন ধরনের গান গেয়েছেন। তন্মধ্যে অমর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নওশাদের পরিচালনায়ই গান গেয়েছেন বেশি। এছাড়াও, ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে মোহাম্মদ রফি ও.পি. নায়ার, শঙ্কর জয়কিষাণ এবং এস.ডি.বর্মনের সুরেও অনেক গান গেয়েছেন।
১৯৪৪ সালে পেহলে আপ ছবিতে নওশাদের নির্দেশনায় রফি তার প্রথম গান হিসেবে "হিন্দুস্তান কে হাম হে" গান। ১৯৪৬ সালে দ্বৈত সঙ্গীতরূপে আনমল ঘড়িতে গান রেকর্ড করেন।
মোহাম্মদ রফি তার প্রথম ফিল্মফেয়ার পদক পান চৌদভীন কা চাঁদ (১৯৬০) ছবির সঙ্গীত পরিচালক ও গীতিকার রবি কর্তৃক লিখিত সূচনা সঙ্গীতের জন্য। ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নীল কমল ছবিতে "বাবুল কি দোয়ায়েন লেটি জা" গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। মোহাম্মদ রফি যখন গানটি রেকর্ডিং করেন তখন সেসময় তিনি বেশ আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা বিবিসিতে সাক্ষাৎকারের সময় এ বিষয়ে প্রসঙ্গান্তরে কথাটি তুলে ধরেছিলেন। রবি এবং রফি'র গীত ও সুরে অন্যান্য অনেক গান রয়েছে - চায়না টাউন (১৯৬২), কাজল (১৯৬৫) এবং দো বদন (১৯৬৬) চলচ্চিত্রসমূহে।
১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে বলিউডে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য গায়কদের তুলনায় রফিকেই দেখা গিয়েছিল সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও, হিন্দী ছবিতে তিনি অনেক খ্যাতনামা চলচ্চিত্র তারকার জন্যে গান গেয়েছেন। ১৯৬৫ সালে সঙ্গীত কলায় অসামান্য অবদান রাখায় ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে। ১৯৬০ এর দশকে মৌরিতাস ভ্রমণের সময় তিনি ক্রিয়োল ভাষায় একটি গান গেয়েছিলেন। এছাড়াও, রফি দু'টি ইংরেজি এ্যালবামের গানে অংশ নেন। তাদের মধ্যে একটি হলো পপ হিটস্।
মোহাম্মদ রফি ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে ঐ দশকের প্রথম কয়েক বছরে খুব কমসংখ্যক গানই রেকর্ড করতে পেরেছিলেন তিনি।
১৯৭০ এর দশকের শুরুতে মোহাম্মদ রফি লক্ষ্মীকান্ত-পিয়ারেলাল, মদন মোহন, আর. ডি. বর্মণ এবং এস. ডি. বর্মণের ন্যায় জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালকদের গানে কণ্ঠ দেন। তাদের পরিচালনায় - তুম মুঝে ইউ ভুলা না পাওগে (পাগলা কাহিন কা, ১৯৭১); ইয়ে দুনিয়া ইয়ে মেহফিল (হীর রানঝা, ১৯৭০); লতা মঙ্গেশকরের সাথে - ঝিলমিল সিতারো কা (জীবন মৃত্যু, ১৯৭০); গুলাবি আঁখে (দ্য ট্রেন, ১৯৭০); ইয়ে জো চিলমান হ্যায় এবং ইতনা তো ইয়াদ হ্যায় মুঝে (মেহবুব কি মেহেন্দী, ১৯৭১), মেরা মান তেরা পিয়াসা (গাম্বলার); চালাও দিলদার চালাও (পাকিজা, ১৯৭২); আশা ভোঁসলে'র সাথে - চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে (ইয়াদো কি বারত, ১৯৭৩); দিলীপ কুমার অভিনীত - না তু জমীন কি লিয়ে (দস্তান, ১৯৭৩); তেরী বিন্দিয়া রে (অভিমান, ১৯৭৩) এবং আজ মৌসুম বড় বেঈমান হ্যায় (লোফার, ১৯৭৩) গানগুলোয় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৭৪ সালে তিনি ঊষা খান্না'র গীত রচনায় হাওয়াস ছবিতে তেরি গালিওন মে না রাখেঙ্গে কদম আজ কে বাদ গান গেয়ে ফিল্ম ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে সেরা গায়কের পুরস্কার পান। ১৯৭৭ সালে হাম কিসি সে কাম নেহি শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রে আর. ডি. বর্মনের (রাহুল দেব বর্মন) সঙ্গীত রচনায় ক্যায়া হুয়া তেরা ওয়াদা গানের জন্য ভারতের জাতীয় পদক এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।
ঋষি কাপুর অভিনীত চলচ্চিত্র হিসেবে - অমর আকবর এন্টনী (১৯৭৭), সরগম (১৯৭৯) এবং কর্জ (১৯৮০) ছবিগুলোয় নেপথ্যে কণ্ঠ দেন মোহাম্মদ রফি। তন্মধ্যে অমর আকবর এন্টনি চলচ্চিত্রের পর্দা হে পর্দা কাউয়ালিটি সকল স্তরের দর্শক-শ্রোতাদের কাছে ভীষণভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
এছাড়াও, ১৯৭০ দশকের শেষ দিক থেকে ১৯৮০ দশকের শুরুর দিকে কণ্ঠসঙ্গীতে রফি'র স্মরণীয় অংশগ্রহণ ছিল - লায়লা মজনু (১৯৭৬), আপনাপান (১৯৭৮), কুরবানি (১৯৮০), দোস্তানা (১৯৮০), দ্য বার্নিং ট্রেন (১৯৮০), নছিব (১৯৮১), আবদুল্লাহ (১৯৮০), শান (১৯৮০) এবং আশা (১৯৮০) চলচ্চিত্রসমূহে।

আরও খবর

🔝